বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৩
Home এই মাত্র পাওয়া, শীর্ষ সংবাদ রাজধানীর ব্যাচেলরদের সাত দিনের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ পুলিশের
রাজধানীর ব্যাচেলরদের সাত দিনের মধ্যে বাসা ছাড়ার নির্দেশ পুলিশের
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : রাজধানীর বাসা বাড়িতে কোনো মেস, কোয়ার্টার থাকবে না, ভাড়া দেয়া যাবে না কোনো ব্যাচেলর ব্যক্তিকে।
যারা আছেন তাদের আগামী সাত দিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ।
সম্প্রতি পুলিশের সদর দফতর থেকে ডিএমপির থানাগুলোকে এমন একটি নির্দেশনা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, নগরীর বাসা বাড়িতে মেস কোয়ার্টারগুলো এখন পুলিশের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু মেস কোয়ার্টার থেকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক দ্রব্য এবং বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়ায় পুলিশের টনক নড়েছে।
ওইসব বাসায় আশ্রয় নিয়ে হরতালে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের বেশ কিছু নেতাকর্মীকেও গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
এ কারণে নগরীর প্রতিটি থানা এলাকায় কোনো কোনো বাসা বাড়িতে মেস বা ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া হয়েছে। তার একটি তালিকা ও ইতোমধ্যে তৈরি করেছে নিজ নিজ থানার কর্মকর্তারা।
ওই তালিকা অনুযায়ী অনেক বাড়ি মালিককে ব্যাচেলরদের উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশও দিয়েছে পুলিশ। এদিকে পুলিশের এমন সিদ্ধান্তের কারণে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে নগরীর মেস কোয়ার্টার বাড়ি মালিকদের মধ্যে।
অন্যদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন নির্দেশনায় মেস কোয়ার্টারের ব্যাচেলরদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ আর হতাশা। অনেকেই ইতোমধ্যে নিকটস্থ আত্মীয়দের বাসায় ধরনা দিচ্ছেন।
এদিকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তকে আইন বহির্ভুত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছেন মানবাধিকারের কয়েকটি সংগঠন।
মানবাধিকার কর্মকর্তারা বলছেন, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে বিকল্প চিন্তা করা উচিত। কতিপয় অপরাধীর কারণে এমন ঢালাওভাবে সবাইকে ভোগান্তিতে ফেলা, এটা ঠিক নয়। এতে করে লাখ লাখ ব্যাচেলর গৃহহীন হয়ে রাস্তায় থাকতে হবে।
কারণ পুলিশের নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো বাড়ির মালিক ব্যাচেলরদের মেস ভাড়া দেবেন না।
এদিকে এক জরিপে দেখা গেছে নগরীতে প্রায় ৪৫ হাজার বাসা-বাড়িতে মেস কোয়ার্টার আছে। এতে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ ব্যাচেলর বসবাস করছেন।
এরমধ্যে ছোট-বড় প্রায় চার হাজার ৫৫৬টি মেস কোয়ার্টার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারিতে রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ওইসব মেস কোয়ার্টারের ব্যাচেলর সদস্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়।
গোয়েন্দা সূত্রটি আরো জানায়, সম্প্রতি বিরোধী দলের ডাকা হরতালের আগে ও পরে রাজধানীজুড়ে নাশকতা শুরু করেছে দুষ্কৃতকারীরা।
এ সময় রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে, বিচারপতি, মন্ত্রী, এমপি, দুদক চেয়ারম্যান ও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতাসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ, বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়ে মারার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ সব ঘটনায় গোটা নগরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আর ওইসব নাশকতার পরিকল্পনা করা হয় নগরীর বিভিন্ন মেসে- এমন তথ্য গোয়েন্দাদের কাছে রয়েছে।
তাই জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
এ ব্যাপারে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আলমাস প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস সহকারী মিরপুর টোলাবাগের একটি মেস বাসার ব্যাচেলর সদস্য ফারুখ আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, গতকাল আমার বাড়ির মালিক মহব্বত আলী আমাকে ডেকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মেস ছেড়ে দিতে হবে।
কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা পুলিশের নির্দেশ।
তিনি হাতাশা ব্যক্ত করে বলেন, এই মুহূর্তে আমি কোথায় যাবো ? আমার কোনো আত্মীয়-স্বজন ঢাকায় নেই, এখন আমাকে থাকার সমস্যার কারণে চাকরি ছেড়ে বাড়ি চলে যেতে হবে।
এদিকে পল্লবীর বি ব্লকের ১৩ নম্বর রোডের বাড়ির মালিক আবু বক্কর অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাড়িতে তিনটি মেস রুমে ব্যাচেলর ভাড়া থাকেন।
পুলিশ এসে আমাকে তাদের উঠিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এখন আমি কি করবো। তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এটা কেমন সিদ্ধান্ত? আমি এখন কোথায় ভাড়াটিয়া পাবো ?
এ বিষয়ে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এলিনা খান বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্তে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এটি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হল নয়, যে কোনো সময় বন্ধ এবং খুলে দিতে পারেন। তাছাড়া ব্যাচেলরদের মধ্যে নারী-পুরুষ উভয় আছে।
শিক্ষার্থী এবং চাকরিজীবী উভয় আছে। হঠাৎ করে বাসা ছেড়ে দেয়ার কোনো নির্দেশ দেয়া যায় না।
এমন নির্দেশনায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন চাকরিজীবীরা ও শিক্ষার্থীরা। কারণ একজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা থাকতে পারে।
এ সময় বাসা পরিবর্তন করা কি করে সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, ঘনবসতি এই নগরীতে কোনো ব্যক্তি তার ব্যাচেলর একজন আত্মীয়কে হঠাৎ করে জায়গা দিতে পারবেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এমন সিদ্ধান্ত আইন বর্হিভূত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ ব্যাপারে পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাসা বাড়িতে মেস কোয়ার্টার বা ব্যাচেলর থাকতে পারবেন না এমন একটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাড়ির মালিকদের।
তবে সেটি নির্বাচনকালীন সময় পর্যন্ত। এরপর তারা আবার থাকতে পারবে। কারণ সম্প্রতি নগরীর বিভিন্ন এলাকার মেসে পরিচয় গোপন করে আশ্রয় নেয়।
পরে সেখানে থেকে দুর্বৃত্তরা হরতালে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করে থাকে। তখন ওই অপরাধীকে আটক করতে গেলে সেখানে নিরাপরাধ কিছু লোককেও আটক করতে হয়।
তিনি বলেন, দেখা গেছে একটি মেস বাসায় পাঁচজনরে মধ্যে চারজনই নিরাপরাধ, কিন্তু একজন ব্যক্তিই তাদের মধ্যে থেকে গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
তখন জিজ্ঞাসাবাদের স্বার্থে ওই মেসের সবাইকেই পুলিশ আটক করে। তিনি আরো বলেন, ইদানীং নাশকতাকারীরা তাদের পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে মেস কোয়ার্টার করে ভাড়া থাকেন।
ওই ব্যাচেলর ব্যক্তিটি আসলে কি ভালো, না খারাপ এটি লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব ওই বাড়ি মালিকের। একটি অপরাধ ঘটে গেলে তখন বাড়ির মালিকদের টনক নড়ে।
এ ছাড়া আগে থেকে কোনো বাড়ির মালিক ব্যাচেলর ভাড়া দেয়ার আগে ভাড়াটিয়াদের পরিচয় জানার চেষ্টা করে না। তাই কিছু কিছু সময়ে অপরাধ না করেও বাড়ির মালিকরাও অভিযুক্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে সম্প্রতি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা বিভিন্ন হরতালের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মেস থেকে অসংখ্য বোমা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ বিভিন্ন বিস্ফোরক দ্রব্য। গত ৬ নভেম্বর হরতাল চলাকালীন ৯/২ নম্বর আদাবর এলাকার একটি ব্যাচেলর ফ্ল্যাট থেকে তিন শিবিরকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ল্যাপটপ, কাচের বোতল, ১০টি হেলমেট, লোহার পাইপসহ ১৭ লিটার পেট্রল উদ্ধার করা হয়।
তারা তিনজনই ছাত্রশিবিরের সঙ্গে জড়িত। চারতলা ওই ভবনে প্রতিটি ফ্লোরে দুটি করে ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রত্যেকটি ফ্ল্যাটে মেস বাসা বানিয়ে ব্যাচেলরদের ভাড়া দেয়া হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর মিরপুরে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, ব্যানার, জিহাদি বই, অন্যান্য সামগ্রীসহ ১৫ জন জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পেট্রল বোমা, সাতটি ককটেল, ছয়টি ব্যানার, টাকা সংগ্রহের রশিদ ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি এটি শিবিরের একটি অস্থায়ী ঘাঁটি।
এখান থেকে তারা মিরপুরের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার পরিকল্পনা করতো। পরে পুলিশ এখান থেকে জামায়াতে ইসলামীর মিরপুর থানা পশ্চিমের সভাপতি আব্দুল মান্নান এবং মিরপুর থানা ছাত্রশিবিরের যুগ্ম সম্পাদক ফারুখ আহমেদসহ ১৫ জনকে আটক করেছে।
গত ১৭ নভেম্বর পল্লবীতে তিনটি তাজা ককটেল, বিপুল পরিমাণ ককটেল তৈরির সরঞ্জাম, গান পাউডার ও মার্বেলসহ দুই শিবিরকর্মীকে আটক করে।
তারা দুজনই বোমা তৈরির কারিগর বলে পুলিশের দাবি।
এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি তাজা ককটেল, ককটেল তৈরির সরঞ্জাম, দুটি অর্ধেক বানানো ককটেল, পাঁচটি কৌটা, বিভিন্ন সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও মৌচাকের একটি পাঁচতলা বাড়ির চারতলা দুটি ফ্ল্যাট থেকে ২০টি ককটেল, ককটেল তৈরির সরঞ্জামসহ ১২ শিবির কর্মীকে আটক করে পুলিশ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন