সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩


এরশাদকে বিদেশ পাঠাতে মরিয়া সরকার 17 Dec, 2013 একতরফা নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে পাশে পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ একদিকে রওশন এরশাদকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে সিদ্ধান্তে অটল ‘একগুঁয়ে’ এরশাদকে চিকিৎসার নামে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার পায়তারা করছে। এরশাদের এ অসহায় অবস্থার কথা তার দলের নানা সূত্রে জানা যাচ্ছে। এদিকে চেয়ারম্যানের এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন জেলার নেতারা মাঠে নেমে আন্দোলন ও হরতাল অবরোধসহ দেশ অচলের ঘোষণা দিয়েছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ দেখাবে জাপা। এখন সরকারের এই চেষ্টা কতটা সফল হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদকে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে র‌্যাব-১ তুলে নিয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অসুস্থ করায় তার অনুরোধেই র‌্যাব তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সে রাতেই এরশাদের মিডিয়া অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যার সুস্থ আছেন, তাকে হঠাৎ করে কেন আটক করা হলো আর কেনই বা হাসপাতালে নেয়া হল তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টি রহস্যজনক।’ এরপর দলের মহাসিচব রুহুল আমিন হাওলাদার ওই রাতেই এরশাদের সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করে ফিরে সোয়া ২টার দিকে তার গুলশানে বাসায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অসুস্থ। তাকে সিএমএইচে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার শরীর চেক-আপ করেছেন, চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।’ সেসময় তার এমন উল্টো বক্তব্য শুনে অনেক নেতাকর্মী তাকে ‘দালাল’ বলে আখ্যা দিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর একটি সংবাদ সম্মেলন করে সেই থেকে প্রায় তিন দিন আত্মগোপনে চলে যান পার্টির মহাসচিব। গতকাল রোববার হঠাৎ করেই বনানীর পার্টি অফিসে তার উপস্থিতি জানান দিলেন। সোমবার হাওলাদার বনানীতে পার্টি অফিসে বিজয় দিবসের আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে উঠে কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন। তাকে ‘দালাল’ বলে সবাই স্লোগান দিতে থাকেন এবং এরশাদের মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি দেয়ার দাবি জানায়। বাধ্য হয়ে তিনি তখন নানা উদাহরণ টেনে দলের প্রতি তার আনুগত্য প্রমাণের চেষ্টা করেন শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নাম প্রকাশ না করা শর্তে এরশাদের কাছের কয়েকজন ব্যক্তি জানান, হাসপাতালে নেয়ার রাত থেকে আজ অবধি এরশাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না তার ব্যক্তিগত কর্মচারীসহ দলের অনেক নেতারা। পার্টির একটি সূত্র জানায়, অসুস্থতার অজুহাতে এরশাদকে গত দুইদিন থেকে নিবিড় পরিচর্যা বিভাগে (আইসিইউ) নেয়ার চেষ্টা চলছে। তাকে বারবার বিভিন্ন কথা বলে বোঝানো হচ্ছে তিনি অসুস্থ। তবে চিকিৎসকদের এসব কথার তোয়াক্কা করছেন না সাবেক এই রাষ্ট্রপতি। সূত্র আরও জানায়, এরশাদ নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে তাকে অতি শিগগিরই আইসিইউতে নেয়া হবে। এখানে নেয়া হলে তাকে গুরুতর অসুস্থতার ডাক্তারি সার্টিফিকেট দেয়া হবে। সেখানে তাকে বিদেশ নেয়ার পরামর্শ থাকবে। তখন তাকে বিদেশে রেখে সরকার নির্বাচনের যাবতীয় কাজ নির্বিঘ্নে সারতে পারবে। একটি সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রোববার এক সময় এরশাদ হাসপাতাল থেকে তার একান্ত একজন ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলেন । এসময় তিনি সেই ব্যক্তিকে বাবা বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘আমি খুব বিপদে আছি, তোমরা আমাকে উদ্ধার কর’। দীর্ঘক্ষণ সেই ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলার মাঝে কান্নায় ভেঙে পড়েন এরশাদ। এসময় তিনি পার্টির বর্তমান অবস্থা ও নানা বিষয়ে কথা বলেন। সব শেষে তার মুক্তির জন্য পার্টির নেতাদের মাঠে নামতে নির্দেশ দেন ওই ব্যক্তির মাধ্যমে। এছাড়াও গত শুক্রবার এরশাদের এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এরশাদ অসুস্থ নন। বিবৃতিতে এরশাদ বলেন, ‘আমি অসুস্থ নই। আমাকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ ঘনিষ্ঠজনরা অভিযোগ করছেন, সিএমএইচে এরশাদকে নজরবন্দি করা হয়েছে। তিনি কারও সঙ্গে ফোনে কথা বললেও তার ফোন ট্রেকিং ও রেকর্ড করা হচ্ছে। পার্টির সূত্রে জানা গেছে, পার্টির যেসব নেতা এরশাদের সঙ্গে একমত হয়ে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের ওপর চলছে কড়া নজরদারি। তাদের চলাফেরায় নানাভাবে দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। চলছে গোয়েন্দা নজরদারিও। এরশাদের এমন অবস্থার জন্য পার্টির নেতারা তার স্ত্রী রওশনকেই দায়ী করছেন। তারা বলছেন, রওশন নির্বাচনে যেতেই স্যারকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন। এদিকে রংপুর জেলা ও মহানগর কমিটি সারা দেশে আগামী ১৭ ডিসেম্বর এরশাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি দেয়ার জন্য কেন্দ্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। এই কর্মসূচি পর কেন্দ্র থেকে হরতাল ও অবরোধসহ নানা কর্মসূচি দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, এরশাদকে এখনও নির্বাচনে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে কয়েকজন নেতাসহ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিষয়টি দেখভাল করছেন। এর জন্য এরশাদকে নানাভাবে চাপও দেয়া হচ্ছে। এদিকে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী সিএমএইচে গিয়ে সপরিবারে এরশাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। গওহর রিজভী সেখানে প্রায় এক ঘণ্টা সময় কাটান। এরশাদের একজন ঘনিষ্ঠ স্বজন জানান, যেদিন থেকে এরশাদকে আটক করা হয়েছে সেদিন থেকে তার কোনো খোঁজখবর নেননি তার স্ত্রী সাবেক ফার্স্ট লেডি রওশন এরশাদ। এনিয়ে পার্টির নেতাদের মধ্যেও চাপা ক্ষোভ রয়েছে। অবশ্য সোমবার রাতে শেষ পর্যন্ত সিএমএইচে গেছেন রওশন। এই কই তার বাসায় দফা দফায় বৈঠক চলেছে। সাংবাদিকরা তার গুলশানের বাসায় সামনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থেকে, নানাভাবে চেষ্টা করেও এসব বৈঠকের ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেননি। নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাপার একাধিক নেতা জানিয়েছেন, এরশাদকে নির্বাচনে আনতেই এই নাটকের অবতারণা করেছে সরকার। তাকে অসুস্থতার অজুহাতে বিদেশ পাঠানোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তিনি নির্বাচনে যেতে রাজি না হলে যেকোনো দিন যে কোনো সময় বিদেশে পাঠানো হতে পারে। চিকিৎসার অজুহাতে এরশাদকে বিদেশ পাঠানোর কৌশলকে পার্টিরা নেতারা এভাবে ব্যাখ্যা করছেন: সরকার এরশাদকে মাইনাস করে প্রধান বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে দাঁড় করিয়ে নির্বাচন করতে চায়। পার্টির নেতারা মনে করছেন, এরশাদের নির্বাচন থেকে সরে আসা, হঠাৎ মন্ত্রীদের পদত্যাগ, জাপার একাংশ নির্বাচনে যেতে আগ্রহী হলেও এরশাদের অনড় সিদ্ধান্ত, মহাজোট থেকে সরে আসার ঘোষণা- এসব নানা কারণে সরকার তার ওপর ক্ষিপ্ত। এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হলো তাকে অসুস্থতার অজুহাতে আটকে রাখা। এতে কাজ না হলে বিদেশ পাঠানোর পায়তারা। তবে এরশাদকে অসুস্থ দেখিয়ে বিদেশ পাঠানো হচ্ছে এমন গুজব উড়িয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই। তারা বলছেন, এসব এরশাদকে নিয়ে জাতীয় পার্টির নেতাদের নাটক ছাড়া কিছুই নয়। অপরদিকে জাপার সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য রহিম উদ্দিন ভরসা বলছেন, ‘সরকার তাকে সরিয়ে রওশনকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বানিয়ে দলকে তছনছ করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তাকে আটক রেখে অসুস্থতার কথা বলে বিদেশ পাঠাতেও চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে সরকারের।’ সিনিয়ন এই নেতা আরও বলেন, ‘এটা আমরা উত্তরবঙ্গের মানুষেরা কোনক্রমেই হতে দেব না, দেব না, দেব না। তাকে বিদেশ পাঠানো হলে উত্তরাঞ্চলসহ গোটা দেশ অচল করে দেয়া হবে।’ তবে গুজব আর গল্প যাই হোক না কেন এই নষ্ট রাজনীতিতে অসম্ভব বলে কিছু নেই। রাজনীতির ময়দানে বিরোধী দল বিএনপির পরেই এখন নির্বাচনের পথে প্রধান অন্তরায় এরশাদ। তাই তাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করে নির্বাচন করার পায়তারা সরকারের জন্য আশীর্বাদ না অভিশাপ হয়ে আসে তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে। বাংলামেইল উৎসঃ বাংলামেইল Share on facebook Share on email Share on print 3

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন