সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৩


ভারতে ধর্ষণ হাতে চুমু খেয়ে স্যার বললেন 'রাতটা আমার ঘরেই থেকে যাও' 16 Dec, 2013 'স্যার আমার পিঠে হাত রাখলেন। এরপর হাতে একটা চুমু খেয়ে বললেন, আমি তোমাকে ভালবাসি। আজকের রাতটা আমার ঘরেই থেকে যাও।' ভারতের জি নিউজে সম্প্রতি এই আলোচিত মন্তব্যটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই ইনটার্ন তরুণী। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর রাতে দিল্লির লে মেরিডিয়ন হোটেলে ঠিক কী হয়েছিল? প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) এবং মোহনবাগানের একটি মামলা সংক্রান্ত কাজে দিল্লি গিয়েছিলেন। সেই সময় তাঁর দাবি মতোই মোহনবাগান রাজধানীর ওই পাঁচতারা হোটেলের দামি সুইটটি বুক করতে বাধ্য হয়েছিল। ওই মামলায় অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি বিচারবিভাগীয় কমিটি তৈরি হয়েছিল। সেই তদন্তের কাজে সাহায্য চেয়েই অশোক ওই তরুণীকে হোটেলে ডেকে পাঠান। তরুণীর কথায়, সেদিন ওঁর সুইটে ঢুকতেই উনি জানালেন, অনেক কাজ আছে তাই আমাকে নাকি হোটেলেই সারা রাত থাকতে হবে৷ ওখানে রাত কাটানো আমার পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানালাম। কিন্তু উনি সেসব শুনলেন না। পরে উনি ফোন করে কাউকে আর একটা ঘর বুক করার নির্দেশ দিলেন৷ কিন্ত্ত পরে জানালেন, আর ঘর নেই৷ আমি রাতেই বাড়ি ফিরব বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলাম৷ কারণ তার কয়েকদিন আগেই দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ড ঘটেছে৷ তাছাড়া স্যারের ব্যবহারও কেমন যেন লাগছিল৷ আমি ল্যাপটপে কাজ করতে শুরু করলাম৷ কিন্তু ইণ্টারনেট কাজ না করায় কোনও কাজই হচিছল না৷ কাজ যখন হচ্ছে না তখন শুধু শুধু আমি হোটেলে বসে কী করব? উনি তখন বসে বসে মদ্যপান করছিলেন৷ আমাকেও রেড ওয়াইন দিলেন৷ আমি কিছুটা কুণ্ঠিত হয়েই খাচিছলাম৷ উনি কিন্ত্ত এর মধ্যেই বেশ কয়েক গ্লাস মদ খেয়ে ফেলেছেন৷ আমি যেখানে পেয়িং গেস্ট থাকতাম সেখানে আবার রাত ১০টার মধ্যে ফেরার নিয়ম৷ স্যরকে সে কথা জানাতে উনি আমাকে ডিনার করে যেতে অনুরোধ করলেন৷ ওঁকে ‘না' বলতে অস্বস্তি লাগছিল৷ যতই হোক অত প্রবীণ এক মানুষের রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যাণ্ট হয়ে তাঁর অনুরোধ ফেলতেও পারছিলাম না৷ সুইটে ডিনার এসে পৌঁছতেই খেতে শুরু করলাম৷ উনি সোফায় আমার পাশে এসে বসলেন। ক্রমশ আমার দিকে সরে এলেন। আমার পিঠে হাত রাখলেন। এরপর হাতে একটা চুমু খেয়ে বললেন, আমি তোমাকে ভালবাসি। বারবার ভালবাসার কথা বলতে বলতে আমাকে নিজের দিকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমি এক ঝটকায় তাঁকে সরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। উল্টোদিকের অন্য একটা সোফায় গিয়ে বসলাম। উনি আবার আমার কাছে এসে বললেন, তুমি খুব সুন্দর। তুমি কী বুঝতে পারছ না আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট? তোমার সত্যি বোঝা উচিত, আমার মতো একজন বয়স্ক মানুষ কেন মদ খাচেছ এবং কেন তোমাকে এসব কথা বলছে৷ আমি কিন্তু তোমাকে সত্যি ভালবাসি৷ খুব ভালবাসি৷' আমি ওঁনাকে জোর করে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করছিলাম। উনি আমার হাতে চুমু খেয়ে ফের ভালবাসার কথা বলছিলেন৷ এরপরেই আমি ব্যাগ নিয়ে সুইট থেকে বেরিয়ে যাই৷ উনি পিছন পিছন বেরিয়ে এসেও ভালবাসার কথা বলে যাচ্ছিলেন৷ রিসেপশনে এসে গাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করলাম৷ সেখানে জানতে পারলাম স্যর আমার ফেরার জন্য কোনও গাড়ির কথা একবারও হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানাননি৷ উনি সেই সময় রিসেপশেনেও এসেছিলেন৷ রাত সাড়ে দশটা বাজে তখন৷ শেষপর্যন্ত উনি কাউকে ফোন করে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন৷ আমি বাড়ি ফিরে এলাম৷ পরে উনি অনেকবার ফোন ও এসএমএস করেছেন৷ আমি উত্তর দিইনি। অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তরুণীকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ প্রকাশ হতেই তাঁকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানোর জন্য বিভিন্ন্ মহলে দাবি উঠেছে। সোমবার সকালেই অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ওই জনস্বার্থ মামলার প্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মতামত জানতে চেয়েছে৷ রাজ্য সরকারের তরফে আরও আট মাস সময় চাওয়া হয়েছে৷ রবিবারই কলকাতায় একটি সাংবাদিক বৈঠকে অশোকবাবুর সরে দাঁড়ানো দাবি করেছেন ভারত সরকারের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয় সিং৷ তিনি বলেন, অশোকবাবুর বিরুদ্ধে যে যৌন হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে তা প্রাথমিকভাবে সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে৷ অন্তত সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি এমনটাই জানিয়েছে৷ তাই মানবাধিকার কমিশনের মতো সংস্হার মর্যাদা রক্ষায় অশোকবাবুর সরে দাঁড়ানো উচিত৷কিন্তু উনি কেন এখনও সরছেন না বুঝতে পারছি না৷ বাইরের কিছু শক্তি নিশ্চয়ই ওঁকে সমর্থন করছে৷ ইনটার্ন তরুণীর নীরবতারও কিছুটা ভূমিকা রয়েছে৷" অশোকবাবুকে অপসারণের দাবি জানিয়ে গত ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে চিঠি দিয়েছেন ইন্দিরাদেবী। সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন