সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩


পূর্ত মন্ত্রণালয়ে মধু পেয়েছিলেন মান্নান 24 Dec, 2013 আলাদিনের চেরাগ পেলেই কেবল এমনটি হওয়ার কথা। পাঁচ বছর আগেও যে ব্যক্তির সাকুল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল, খুব অল্প দিনের ব্যবধানে সেটা হয়েছে ১১ কোটি তিন লাখ টাকা। আগে বার্ষিক আয় ছিল তাঁর তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা। প্রতিমন্ত্রীর দণ্ড হাতে পেয়েই সেই আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে তিন কোটি ২৮ লাখ টাকায়। পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে তাঁর সম্পত্তি ১০৭ গুণ বেড়েছে। এই সৌভাগ্যবান হলেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। বর্তমানে তিনি ঢাকা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ছেন। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় তিনি নিজেই যে সম্পত্তির বিবরণ দিয়েছেন, তাতে যে কারো চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য। তবে প্রশ্ন হলো- রাতারাতি কিভাবে এমন বিত্তবান হয়ে উঠলেন সাবেক ওই বামপন্থী নেতা। প্রসঙ্গক্রমে মান্নান খানেরই ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগে মান্নান সাহেব আইন ব্যবসা করতেন। তাঁর থেকে কিছু আয় হতো। পূর্ত প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর আইন পেশায় আর তাঁকে সময় দিতে দেখিনি। কাজেই আইন ব্যবসা থেকে এত টাকা আয় যে তাঁর হয়নি, এটা নিশ্চিত। অন্য কোনো ব্যবসাও তাঁর ছিল না। কাজেই পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কমার কথা। অথচ দেখা গেল তা শত গুণ বেড়েছে। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।' মান্নান খানের নির্বাচনী এলাকা দোহারের এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জীবনেও শুনিনি সাবেক এই মন্ত্রী মাছের ব্যবসা করেন। এবার তিনি হলফনামায় স্ত্রীর নামে পাঁচটি এবং নিজের নামে আরো পাঁচটি মাছের ঘের আছে বলে উল্লেখ করেছেন। কোথায় সেই ঘের তা এলাকাবাসী জানে না। আর মাছের ব্যবসা করে যদি এত ফুলেফেঁপে ওঠা যায়, তাহলে দেশের সব মানুষ পেশা বদলে মাছচাষি বা জেলে হয়ে যেত।' মান্নান খানের এই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ব্যাপারে খোঁজ করতে পূর্ত মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দু-একজনের কাছে প্রসঙ্গ তুলতেই তাঁরা জানান, প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বড়গলায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোনো দিন রাজউকের প্লট নেবেন না, সেই তিনিই এখন ধানমণ্ডিতে দুটি ফ্ল্যাটের মালিক। হলফনামায় ফ্ল্যাট দুটির মূল্য তিনি দেখিয়েছেন এক কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এই টাকা তিনি কোথায় পেলেন প্রশ্ন করতেই পূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজউকে (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) গিয়ে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাজউককে ভাঙিয়েই মান্নান খান সব কিছু করেছেন বলে তাঁদের অভিমত। রাজউকে কয়েক দিন খোঁজ নিয়ে জানা গেল, নিজ নামে অবশ্য তিনি রাজউকের প্লট নেননি। বেনামে নিয়েছেন। গুলশান ৩২/এ নম্বরে লেকের ধারে একটি সড়ক তৈরি করে নতুন করে চারটি প্লট বানিয়ে চারজনে বরাদ্দ নিয়েছেন। তাঁর ১ নম্বর প্লটটির মালিক জনৈক আনোয়ার হোসেন। এই নামের আড়ালে আসলে মান্নান খান। এলাকাবাসীও সেটা মান্নান খানের প্লট বলেই জানেন। প্রায় সাড়ে পাঁচ কাঠা আয়তনের প্লটটির বর্তমান বাজার মূল্য ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা। বর্তমানে সেটি বিক্রির জন্য ক্রেতা খোঁজা হচ্ছে বলে জানালেন একাধিক স্থানীয় বাসিন্দা। রাজউকের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, মান্নান খান দায়িত্বে থাকাকালে পূর্বাচলে ছয় হাজার ৮০০ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঝিলমিলে দেওয়া হয় আরো প্রায় হাজারখানেক। এর মধ্যে ১০ শতাংশ প্লট আগেই সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন তিনি। তাঁর হাত দিয়ে এই ৮০০ প্লট বিতরণ হয়েছে। এর মধ্যে শতিনেক প্লট বিতরণ হয়েছে মান্নান খানের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে, যাদের মধ্যে শদুয়েক ব্যক্তির বাড়ি তাঁর নির্বাচনীয় এলাকায়। এখানেও অনেক প্লট আছে, যেগুলোর আড়ালে আছেন মান্নান খান। এ ছাড়া আরো যাদের তিনি প্লট দিয়েছেন, সেই কর্মে অর্থ হাতানোর অভিযোগ আছে জনাব খানের বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজউকের প্রকৌশল বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, বারিধারায় মাদানী এভিনিউ নামে একটি সরণি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন মান্নান খান। এই এভিনিউয়ের পাশেও একই কায়দায় বেনামি প্লট তৈরি ও বরাদ্দের আড়ালে আছেন মান্নান খান। আর যেটুকু তিনি লুকাতে পারেননি, ঠিক সেটুকুই তিনি নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় প্রকাশ করেছেন। বাস্তবে তাঁর সম্পত্তি বেড়েছে অন্তত হাজার গুণ। নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হিসাব বাস্তবের অংশবিশেষ মাত্র। ২০০৮ সালের হলফনামায় দেখা গেছে, কৃষি খাতে আবদুল মান্নানের বার্ষিক আয় ছিল ১৫ হাজার টাকা। গত ১ ডিসেম্বর দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে তা বেড়ে হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত ছিল না তাঁর। এখন এসব খাত থেকে তাঁর বার্ষিক আয় হয় এক লাখ ১১ হাজার টাকা। এখন তাঁর নিজের নামে স্থায়ী আমানত (এফডিআর) ৩৭ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছেন ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর নামে কোনো শেয়ার না থাকলেও এখন দুই লাখ টাকার শেয়ার আছে। আগে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করার মতো কোনো আয় তাঁর ছিল না। এখন তিনি মৎস্য ও রেমিট্যান্স থেকে বছরে আয় করেন এক কোটি ৪৪ লাখ ৬৩ হাজার ২২৭ টাকা। এ ছাড়া এই খাতে তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় এক কোটি ৭৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৫ টাকা। আগে নিজের কোনো ব্যবসা না থাকলেও এখন তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের ব্যবসা থেকে বছরে আয় হয় দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা। পাঁচ বছর আগে আবদুল মান্নানের কাছে নগদ ৫১ হাজার টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪০ লাখ। পাশাপাশি বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেল রয়েছে, যার মূল্য ৪৪ লাখ ৩১ হাজার ২০০ টাকা। আগে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমি না থাকলেও এখন তাঁর নিজ নামে পাঁচ একর কৃষি জমি আছে। পাঁচ বছর আগে তাঁর ও স্ত্রীর কোনো পাকা দালান ছিল না। এখন তাঁর দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ দুটি ফ্ল্যাটের মূল্য এক কোটি ৮১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সারা দেশের পূর্ত কাজের দিকেও প্রতিমন্ত্রীর নজর ছিল। পূর্ত ভবনে গেলে সে সবেরও খবর পাবেন। এ প্রসঙ্গে মান্নান খানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জানান, স্যার এখন নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত। তাই কথা বলা যাবে না। উৎসঃ কালের কন্ঠ Share on facebook Share on email Share on print 7

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন