সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩


অস্বাভাবিক সম্পদ 24 Dec, 2013 ফুলে ফেঁপে পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়ে হয়েছে বহু গুণ। কারও কারও ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধির পরিমাণ অবিশ্বাস্য। আবার কেউ কেউ অবাক করার মতো তথ্যও দিয়েছেন নিজেদের সম্পদ বিবরণীতে। দশম সংসদে প্রার্থী হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যদের হলফনামায় দেয়া সম্পদ বিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর অনেকের উল্লেখ করার মতো তেমন সম্পদ ছিল না। অনেকে আয়ের উৎস সম্পর্কেও উল্লেখ করেননি সে সময়। গত পাঁচ বছরে অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক বনে গেছেন তারা। শুধু সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর তাদের সম্পদ বেড়ে গেছে বহু গুণ। অনেকের নিজের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন বেশি। হলফনামায় দেয়া তথ্যে প্রকৃত সম্পত্তির পরিমাণ গোপন করেছেন। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের সম্পদ বেড়েছে ১০ গুণ চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় দেয়া তথ্যে তার স্থাবর সম্পত্তি ছিল প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে তার সেই সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তার বাৎসরিক আয় ছিল ৩৩ লাখ ৮৬ হাজার ৩৮০ টাকা। তার পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় ছিল প্রায় ২৩ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি ছিল প্রায় ৪১ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল প্রায় ৪৭ লাখ টাকা। স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ টাকা। পরিবারের অন্য সদস্যদের আয়ও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তার স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ না বাড়লেও স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। চুন্নুর আয় বেড়েছে ৮ গুণ কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুল হক চুন্নুর আয় বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। ২০০৮ সালের হলফনামা দেয়া তথ্যে তার কোন আয়ের পরিমাণ উল্লেখ ছিল না। আয়ের উৎস হিসেবে শুধু একটি বাস ও সঞ্চয়পত্র থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বাৎসরিক আয় দেখানো হয়। ২০১৩ সালে তার বাৎসরিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৮ লাখ টাকা। তিনি ব্যবসা থেকে প্রতিবছর আয় করেছেন ৯৬ লাখ টাকা। পেশা থেকে আয় করেছেন ৮ লাখ টাকা। কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবে তার সম্মানী-ভাতা হলফনামায় উল্লেখ করেননি। ২০০৮ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪৪ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর ছিল ১৯ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তি হিসেবে টঙ্গীতে স্ত্রীর নামে ৫ কাঠার একটি জমি দেখিয়েছেন। এর মূল্য ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। আর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বাড়ির একটি অংশের কথা উল্লেখ করেছেন। ২০১৩ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে নগদ ৩৭ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ৪ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৯ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ৪ লাখ ৪৭ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি দেখিয়েছেন নিজের সম্পদ বিবরণীতে। কামাল মজুমদারের সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি টাকা ঢাকা-১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহম্মেদ মজুমদারের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় দেয়া তথ্যে তার স্থাবর সম্পত্তির পুরো বিবরণ উল্লেখ করা হয়নি। ২০০৮ সালে তার স্থাবর সম্পত্তি ছিল ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৭৬ টাকা। তার স্ত্রীর স্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়াও চা-বাগান, রাবার বাগান ও মৎস্য খামার থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন। ২০১৩ সালে তার বাৎসরিক আয় ১ কোটি ২১ লাখ ৯৪ হাজার ৮৩০ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী উল্লেখ করেননি তিনি। এছাড়া, অন্যান্য খাত থেকে ১৪ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছেন। ২০০৮ সালে তার আয় ছিল প্রায় ৫৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। পরিবারের অন্য সদস্যদের আয় দেখিয়েছেন ১৬ হাজার ৮২৫ টাকা। তার ও স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ১ কোটি ৭৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকা। ২০১৩ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তি দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৮৯ লাখ ৩৫ হাজার ১৪৪ লাখ টাকা। তার নামে মামলা রয়েছে ২২টি। রাজুর চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর চেয়ে তার স্ত্রীর সম্পদ বেশি। ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় দেয়া তথ্যে বার্ষিক আয় হিসেবে শুধু সম্মানী ভাতা ১৭ লাখ ২২ হাজার ৩০০ টাকা দেখিয়েছেন। এছাড়া আর কোন আয় তিনি হলফনামায় দেখাননি। হলফনামা অনুযায়ী, রাজিউদ্দিন আহমেদের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নগদ আছে ৫৭ লাখ ৮৭ হাজার ৯৮৩ টাকা। আর স্ত্রীর নগদ ৪৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯৫৩ টাকা। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের জমা আট লাখ ৫০ হাজার আর স্ত্রীর নামে ২০ লাখ। রাজুর ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকার দুটি জিপ গাড়ি আছে। নিজের ও স্ত্রীর স্বর্ণালংকার আছে ৬০ হাজার টাকার। ইলেকট্রনিক সামগ্রী আছে দেড় লাখ টাকার। আসবাবপত্রের মধ্যে নিজের আছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর ২০ হাজার টাকা। রাজুর একটি শটগান ও একটি রিভলবার আছে। আর স্থাবর সম্পদের মধ্যে যৌথ মালিকানায় নরসিংদীর রায়পুরায় ৩ দশমিক ৫ বিঘা কৃষিজমি আছে। রাজিউদ্দিন আহমেদের স্ত্রীর নামেই একাধিক বাড়ি ও জমি রয়েছে। হলফনামা অনুযায়ী, ধানমন্ডিতে একটি জমির কথা উল্লেখ থাকলেও এর দাম দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ টাকা। এছাড়া, স্ত্রীর নামে গুলশানে একটি ছয়তলা বাড়ি (এক-তৃতীয়াংশ) ও এলিফ্যান্ট রোডে আরেকটি তিনতলা বাড়ি রয়েছে। গুলশানের বাড়িটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৫৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তবে বাস্তবে এসব জমি ও ভবনের দাম অনেক বেশি বলে জানা গেছে। রাজিউদ্দিন আহমেদের নামে বনানীতে যৌথ মালিকানায় ১৪ কাঠার ওপর দ্বিতল বাড়ি আছে বলে হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেন। এর কোন মূল্য হলফনামায় বলা হয়নি। নাহিদের স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৮ গুণ বর্তমান সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণ। ২০০৮ সালের হলফনামায় দেয়া তথ্যে নুরুল ইসলাম নাহিদের অস্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল প্রায় ২১ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর সম্পদ ছিল ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬১৯ টাকা। ২০১৩ সালে তার নিজের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ চার গুণেরও বেশি বেড়ে ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৫০ টাকা হয়েছে। আর স্ত্রীর সম্পদ প্রায় ৮ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখ ১৭ হাজার ৮৪৩ টাকায়। ২০০৮ সালে তার বাৎসরিক আয় ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ টাকা। বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুসারে তার স্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ৫ লাখ টাকা। এছাড়া, যৌথ মালিকানায় ৫ একর একটি জমি থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে যৌথ মালিকানার জমি ছাড়াও প্রায় ৭৯ লাখ ৭৮ হাজার টাকা মূল্যের জমি রয়েছে তার। প্রিন্সের সম্পদ বেড়েছে আড়াই গুণ পাবনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বর্তমানে ৮৪ লাখ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামায় দেয়া তথ্যে স্থাবর সম্পত্তির কোন উল্লেখ ছিল না। ২০১৩ সালে ব্যবসা থেকে আয় দেখিয়েছেন ৯ লাখ ৬ হাজার টাকা। আর শেয়ার থেকে আয় ১০ হাজার ২৬০ টাকা। কিন্তু সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্মানী ভাতার উল্লেখ করেননি। ২০০৮ সালে তার অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে এসে তা দ্বিগুণ হয়ে ৬৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। উৎসঃ মানবজমিন Share on facebook Share on email Share on print 15

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন