রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩


গোপীবাগের আয়না কাহিনী 22 Dec, 2013 ছিমছাম পুরোনো একটি চারতলা লাল বাড়ি। ভেতরের কক্ষগুলো অনেক বড়সড়। তারই দোতলার ফ্ল্যাট। যেখানে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় ১১টি কক্ষ। ফার্নিচারে ভরপুর প্রতিটি কক্ষ। খাট-পালঙ্ক, টিভি, সোফা, কম্পিউটারসহ রয়েছে অনেক দামি দামি আসবাব। আরো রয়েছে ল্যাপটপ ও এলসিডি টিভি। সব মিলে মনে হয়েছে পুরো বাসাটি একটি স্বপ্নময় স্বর্গরাজ্য। প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বাসাতে শুধু দুটি ফ্রিজ, দুটি এলসিডি ও একটি সিআরটি টেলিভিশন রয়েছে। পাঠক হয়তো ভাবছেন এত সব বর্ণনা কিসের? হ্যাঁ, এই স্বর্গরাজ্যই গড়ে তুলেছিলেন তিনি গত তিন মাস আগে আসা রামকৃঞ্চ মিশন রোডের ৬৪/৪ নম্বর ‘আয়না’ নামের বাড়িতে। মানুষটির নাম লুৎফর রহমান ফারুক। বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। সঙ্গে যোগ হয়েছেন বড় ছেলের বউ বীথি (২৫)। বড় ছেলে সারোয়ারুল ইসলাম ফারুক সিটি ব্যাংকে চাকরি করেন। আর ছোট ছেলে আবদুল্লাহ আল ফারুক মার্কেটিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন আবুল খায়ের সিরামিকে। স্ত্রী সালমা বেগম হজ করার পর এখন বাসাতে থাকলেও এর আগে কেয়ার বাংলাদেশে চাকরি করেছেন। জানা যায়, ১৯৯৯ সালের দিকে লুৎফর রহমান ফারুক প্রথম গ্রামছাড়া হয়ে ঢাকায় এসে নিজেকে আধ্যাত্মিক জগতের পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার স্ত্রীসহ হ্জ করে আসার পর শোনা যায় ফারুক সাহেব নাকি স্বপ্নে ইমাম মাহাদীর সেনাপতি হয়েছিলেন। সেই থেকে তিনি নিজেকে ইমাম মাহাদীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন। সূত্রমতে, ২০০৪ সালে সূত্রাপুর থানাধীন ওয়ারী এলাকায় ভণ্ডামি করার জন্য এলাকাবাসী তাকে গণপিটুনি দিয়ে থানায় সোপর্দ করেন। প্রায় এক বছর হাজত খাটার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন। আবার শুরু হয় সেই পুরোনো ব্যবসা। নিজেকে আরো বড় পীর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। হাতিয়ে নিতে থাকেন মানুষের টাকা-পয়সা, সোনাদানাসহ আরো অনেক কিছু। আস্তানা সরিয়ে ফেলেন অন্যত্র। সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে ১/১১-এর পর তার কুকর্মের জন্য এলাকাবাসী তাকে পুনরায় গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেন। জানা যায়, তার এক মুরিদের সুন্দরী বউকে নানা ছলে ধর্ষণ করেন তিনি। পরে ওই নারী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় ২০১২ সালের ৯ নভেম্বর তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিছুদিন জেল খাটার পর তিনি জামিনে বের হন। এরপর একের পর এক আস্তানা পরিবর্তন করতে থাকেন ছদ্মবেশী এই ভণ্ড পীর। জানা যায়, এই পীর নারীদের যৌন হয়রানিসহ আরো অনেক বাজে কাজ করে বেড়াতেন। ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, উদ্ধার করা তার কম্পিউটার থেকে অনেক খারাপ ছবি পাওয়া গেছে। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর হলো তার কাল। নিজে মরলেন, সঙ্গে নিলেন নিজের ছেলেসহ আরো অনেককে। হাত-পা বাঁধা, মুখে স্কচটেপ মারা অবস্থায় একেবারে জবাই করে নৃশংসভাবে তাদের হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পড়ে থাকল সবার নিথর দেহ। রক্তে ভেসে গেল শরীর, বিছানা আর কক্ষের মেঝে। পুলিশ বলছে এটা একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। মাঠে কাজ করছে র‌্যাব, পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। পরিবারের তথ্যমতে, প্রায় দুই ভরি স্বর্ণ ও পীরের ব্রিফকেস ভেঙে নগদ টাকা নিয়ে গেছে মাতাল অবস্থায় খুন করা পেশাদার খুনিরা। ওয়ারী জোনের পুলিশের এডিসি সর্বশেষ শনিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে সাংবাদিকদের জানান, সব ধরনের আলামত নিয়ে তদন্তকাজ শুরু হয়েছে। যেহেতু খুনিরা ঠান্ডা মাথায় খুন করে পালিয়ে গেছে, তাই খুবই গুরুত্ব দিয়ে এ মামলার তদন্তকাজ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে। কালের সাক্ষী হয়ে থাকল এই লাল বাড়িটি। বাড়ির নাম আয়না বলেই ভণ্ড পীর ফারুকের গল্পের নামকরণ ‘আয়না কাহিনী’ করাই যেতে পারে। আর ‘আয়না কাহিনী’র জন্যই বাড়িটিকে নতুন করে চিনবে এলাকার লোক। যে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় দরজা দিয়ে ঢুকেই বাঁয়ে একটি কক্ষে পাওয়া গেছে দুজন ও পাশের কক্ষে চারজনের জবাই করা লাশ। উৎসঃ রাইজিংবিডি Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন