রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩


মন্ত্রী এমপিরা ‘ফুলে ফেঁপে’ উঠলেন কিভাবে ? 22 Dec, 2013 মাস ছয় কিংবা তারও বেশি হবে। টরন্টোর বাঙালি কমিউনিটিতে খবর রটে যায়, মাহবুবুল আলম হানিফ টরন্টোতে বাড়ী কিনেছেন। কারো বাড়ী কেনা নিয়ে কমিউনিটিতে সচরাচর কোনো ধরনের আলাপ আলোচনা বা গুঞ্জন তৈরি হয় না। এমনকি ১/১১ পরবর্তী সরকারের পর যে বিপুল সংখ্যক ব্যবসায়ী এসে বাড়ীঘর কিনে বসতি করেছেন, সেগুলোও এখন আর কমিউনিটির আড্ডায় তেমন একটা গুরুত্ব পায় না। মাহবুবুল আলম হানিফ ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি বলেই হয়তো টরন্টোতে তাঁর বাড়ী কেনা নিয়ে বেশ কৌতূহল তৈরি হয়। টরন্টোতে যারা বাড়ী বেঁচা কেনার ব্যবসা করেন, তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাড়ীটি জনাব হানিফের নামে কেনা নয়, তাঁর স্ত্রীর নামে। হানিফের বাড়ী কেনা নিয়ে গুঞ্জনের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। ঢাকার দৈনিক প্রথম আলোয় গত পাঁচ বছরে মাহবুবুল আলম হানিফের বিত্তশালী হয়ে উঠার খবর পড়ে পুরনো সেই গুঞ্জনটার কথা মনে পড়ে গেলো । সঙ্গত কারনেই জনাব হানিফের আরো অনেক সম্পদের মতোই কানাডায় বাড়ী কেনার তথ্যটা রিপোর্টে স্থান পায় নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হলফনামায় হানিফ যে তথ্য দিয়েছেন,তাই কেবল প্রথম আলো প্রকাশ করেছে। সেই হিসেবে গত পাঁচ বছরে হানিফ যে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন তার একটা বিবরন তিনি নিজেই প্রকাশ করেছেন। আমরা অবশ্য এটিকে পরিপূর্ণ হিসাব ধরছি না। টরন্টোর বাড়ীর মতো হানিফের নামে বেনামে, অনেক সম্পত্তির কথাই তিনি হলফ নামায় উল্লেখ করেননি- এটাই সত্য। শুধু হানিফই নন,আরো অনেক মন্ত্রী এমপিদের ফুলে ফেঁপে উঠার তথ্য প্রকাশ করেছে প্রথম আলো। উল্লেখ করা প্রয়োজন, এই তথ্যগুলো প্রথম আলোর নিজস্ব অনুসন্ধান নয়, মন্ত্রী এমপিদের নিজের ঘোষনা দেওয়া সম্পত্তিরর বিবরন এটি। আর তাতেই ভ্রু কোচঁকানোর মতো তথ্য বেরিয়ে আসছে। পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী হাসান মাহমুদের স্ত্রীর পেশার তথ্যটা পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়নি,তাহলে আমরা বিবেচনা করে দেখতে পারতাম বছরে ২ কোটি টাকা আয় করার মতো কোনো পেশায় তিনি নিয়োজিত আছেন কী না। কিন্তু পাঁচ বছরে ফুলে ফেঁপে উঠাদের মধ্যে হাসান মাহমুদের নাম দেখে আমি বিস্মিত হইনি। কারন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে হাসান মাহমুদের ভাইদের বিষয়ে নানা কথা কানে এসেছে বিভিন্ন সময়। মন্ত্রী এমপিদের নিজেদের দেওয়া ফুলেঁ ফেঁপে উঠার’ তথ্যগুলো পড়তে পড়তে দেশের সাধারন মানুষের তো বটেই দলের নেতা কর্মীদেরই চক্ষু চড়ক গাছ। মাত্র পাঁচ বছর সময়ে এতোটা সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব? সম্ভব তো বটেই, হানিফ, হাসান মাহমুদরা তো হয়েছেন। প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে হয়েছেন? মজার ব্যাপার হচ্ছে, সরকার গঠনের সময় শেখ হাসিনা ‘কচিকাঁচার’ যে আসর বসিয়েছিলেন, রাজনীতিতে তারা ‘ কচিকাঁচা’ হলেও সম্পদ বানানোতে যে মোটেও ‘কঁচিকাচা’ ছিলেন না, তার প্রমান হাতে নাতে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু পাঁচ বছরে অগাধ বিত্ত -বৈভবের মালিক হয়ে উঠা এমপি মন্ত্রীরা এলাকার জন্য, দলের জন্য কি করেছেন? আওয়ামী রাজনীতিতে এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই। ফলে হানিফ-হাসানদের কখনোই কোনো প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে না। আওয়ামী লীগে এই ধরনের প্রশ্ন নিয়ে আলোচনার সুযোগ না থাকলেও দেশের মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো জাগছে এবং তারা এ নিয়ে আলোচনাও করছেন। মন্ত্রী এমপিরা স্বেচ্ছায় যে সহায় সম্পদের বিবরন দিয়েছেন- এটিই যে শেষ কথা নয়, এদের প্রত্যেকেরই এর চেয়ে বেশি সহায় সম্পদ আছে, গত পাঁচ বছরে তারা সেটি করেছেন। কিন্তু কিভাবে, কোন যাদুবলে এই মন্ত্রী এমপিরা এতোটা বিত্ত- বৈভবের মালিক হয়ে উঠলেন তার একটা অনুসন্ধান হওয়া জরুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব গ্রহনের পর ঘোষনা দিয়েছিলেন, তাঁর সরকারের সবাই সম্পদের হিসাব জানাবেন। শেষ পর্যন্ত কেউই সম্পদের হিসাব প্রকাশ করেন নি। এটি নি:সন্দেহে সরকারের,প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ। এখন যখন আইনি বাধ্যবাধকতার কারনে মন্ত্রী এমপিরা নিজেদের সহায় সম্পত্তির হিসাব (রাখ ঢাক করে হলেও) প্রকাশ করেছেন, আর তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে- তখন সরকার কি আগের মতোই চুপ করে বসে থাকবে ? সেটি মোটেও সমীচীন হবে না। আমি মনে করি, (১) যে মন্ত্রী এমপিদের সহায় সম্পত্তি গত পাঁচ বছরে অবিশ্বাস্যরকমে বেড়েছে তাদের ব্যাপারে সরকারের একটি অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো উচিৎ। সরকারের স্বচ্ছতার জন্য, দলের স্বচ্ছতার জন্যই এটি জরুরী। (২) দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এর স্বপ্রণোদিত হয়ে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান শুরু করা উচিৎ। কতিপয় লোক অস্বাভাবিক উপায়ে বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়ে উঠলে, সেখানে অনিয়মের সম্ভাবনাটাই বেশি থাকে। সেই অনিয়মটা খতিয়ে দেখাতো দুদকের স্বাভাবিক কাজের আওতার মধ্যেই । দুদক যে সরকারের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রনে চলে না, তাদের বিন্দুবিসর্গ হলেও স্বাধীনতা আছে, সেটি দেখানোর জন্য হলেও দুদকের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী। (৩) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে পারে। গত পাঁচ বছরে ‘ফুলে ফেঁপে উঠা’ মন্ত্রী এমপিদের আয়করের বিবরনীর সাথে নির্বাচনী হলফ নামায় জমা দেওয়া সহায় সম্পত্তির মিল আছে কী না, কিংবা হলফ নামায় যে সম্পত্তির কথা বলা হয়েছে- সেগুলোর রাজস্ব বা কর ঠিক মতো পরিশোধ করা হচ্ছে কী না, তা তারা খতিয়ে দেখতে পারেন। (৪) আর মিডিয়াও এই ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। হঠাৎ ফলে ফেঁপে উঠা মন্ত্রীদের সম্পদ কিভাবে হলো তার গ্রহনযোগ্য একটি তদন্ত করার জন্য সরকার, রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উপর চাপ প্রয়োগ করতে জনমত গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে পারে। খোলা চোখে দৃশ্যমান সন্দেহজনক কর্মকান্ড (আমি দুর্নীতি শব্দটা সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেলাম) ঘটলেও তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হওয়া উচিৎ। আর সেই সন্দেজনক কর্মকান্ড যদি রাজনীতিকদের কেন্দ্র করে ঘটে তাহলে যে কোনো উপায়ে সেই সন্দেহ দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ‘ফুলে ফেঁপে উঠা’ মন্ত্রী- এমপিরা যে দুর্নীতি করে ‘ফুলে ফেঁপে’ উঠেননি সেটি প্রমানের ভার এখন তাদের কাধেই পড়েছে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের, সরকার হিসেবে স্বচ্ছতার প্রমান দেখানোর জন্যই এই মন্ত্রী এমপিদের সম্পদ নিয়ে একটি গ্রহনযোগ্য তদন্ত অনুসন্ধান পরিচালনা জরুরী। শওগাত আলী সাগর; নতুনদেশ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক ও প্রকাশক । (নতুন দেশ) Share on facebook Share on email Share on print 6

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন