শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৩


গণতন্ত্রের মানসকন্যা যা বলেন তা করে ছাড়েন: রনি 14 Dec, 2013 আজ অফিসে আসার সময় স্থানটির দিকে বহুক্ষন করুন চোখে তাকিয়ে থাকলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী ভবনের দেয়ালের কোল ঘেষে শহীদ ডা: মিলনের যে স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে তারদিকে নজর পড়ামাত্র এক ধরনের বেদনাবোধে ভারাক্রান্ত হলাম। যেদিন ডা: মিলন স্বৈরাচারের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ঠিক সেই ক্ষনটিতে ছাত্রলীগের অরো সব সংগ্রামী কর্মীর সঙ্গে ক্রলিং করতে করতে নিরস্ত্র অবস্থায় আমিও এগিয়ে যাচ্ছিলাম সেই দিকে যেখান থেকে আমাদেরকে মারার জন্য অনবরত গুলি হচ্ছিলো। এরশাদ সরকারের পতনের অন্যতম নিয়ামক ছিলো ডা: মিলনের শহীদী রক্ত। আজ এতো বছর পর ডা: মিলনের স্মৃতিস্তম্ভের দিকে তাকিয়ে মনে পড়লো তোফায়েল ভাই আর আমু ভাইয়ের কথা। ঐ সময়ে তারা দুজন পরস্পর বিরোধী অবস্থানে থেকে ছাত্রলীগকে নেতৃত্ব দিতেন। তোফায়েল ভাইয়ের গ্রুপটি আবার মোস্তফা মহসিন মন্টু সমর্থন দিতেন বিধায় সমগ্র বাংলাদেশে ছাত্রলীগের এই অংশটি ছিলো প্রভাবশালী এবং অন্য অর্থে অপ্রতিরোধ্য। তোফায়েল ভাইয়ের ধানমন্ডির বাসায় আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে নানা শলাপরামর্শ হতো। সেই নেতা যখন রওশন এরশাদের বাসায় দেখা করতে যান তখন তার মুখ মলিন থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এবার বেগম রওশন এরশাদ সম্পর্কে কিছু বলে নেই। এরশাদ জমানায় এই ভদ্র মহিলা ছিলেন সমগ্র দেশবাসীর চক্ষুশুল। বিটিভিতে যখন তার নাম উচ্চারিত হতো ফাস্ট লেডী রওশন এরশাদ বলে তখন দর্শক শ্রোতারা গৃনায় মুখ ‍ফিরিয়ে নিতেন। তার বদনামীরও শেষ ছিলো না। দেশের শীর্ষ দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা ছিলো তার পোষ্য পুত্রের মতো আর এসব নিয়ে নানা রকম রঙ্গ রসের কাহিনী মানুষের মুখে মুখে ফিরতো। সময়ের পরিক্রমায় এরশাদ শাহীর পতন হলেও এই ভদ্রমহিলার জন্য এরশাদের রাজনীতি এবং ব্যক্তিগত অনেক কিছু বার বার প্রশ্নের সম্মুখে পড়ে। এরশাদকে যেসব বিষয়ের জন্য দায়ী করা হয় তার প্রায় সকল কিছুর নেপথ্য নায়িকা হলেন বেগম রওশন। এবার যখন তার মন্ত্রী হবার সুযোগ হলো তখন তিনি আবদার করেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বাগিয়ে নিলেন। উদ্দেশ্য শহীদ ডা: মিলনের পবিত্র রক্তের ঋণকে অবমাননা করা। একমাত্র ডা: মিলনের সম্মানিতা মা ছাড়া কেউ প্রতিবাদ পর্যন্ত করলো না। এই নীতিভ্রষ্ট মানুষ্য সম্প্রদায় কি করে গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হবে তার উত্তর আমার দূর্বল মন মস্তিস্ক খুঁজে পাচ্ছেনা। এরশাদ- বিদিশা-রওশনকে নিয়ে এক ব্যাঙ্গাত্মক রাজনৈতিক খেলায় মেতেছিলেন জনাব তারেক রহমান এবং তার সহযোগী ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। সম্মানিত পাঠক গণের অবশ্যই মনে আছে বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলের সেই শেষ দিন গুলোর নাটকীয় মুহুর্ত গুলোর কথা। আমরা টিভিতে দেখলাম- জনাব তারেক-বাবর এরশাদ সাহেবের বারিধারার বাড়িতে গেলেন। বহু পদের উপাদেয় খাবার দ্বারা সাবেক রাষ্ট্রপতি তাদেরেকে হাসিমুখে খাওয়ালেন এবং উৎফুল্ল বদনে লিফট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। পরদিন জানলাম এরশাদ সাহেবের জাতীয় পার্টি বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে রাজী হয়েছে। ২/৩ দিন পরই পর্দার অন্তরালের গোপন কথা বের হয়ে এলো। আমরা জানলাম তরুণ তারেক সাহেবের বক্তব্যে দারুন ভাবে অপমানিত বোধ করেছেন এরশাদ সাহেব। ফলে তিনি কৌশল অবলম্বন করে পলাতক হলেন। ভাগ্যিস বিএনপি সরকার তাকে বন্দী করেননি। কিন্তু এরশাদের সঙ্গে কৃত ভুলের মাসুল বিএনপি কিভাবে দিয়েছে তা দেশবাসী দেখেছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি পোড় খাওয়া ঐতিহ্যবাহী দলের ততোধিক যোগ্যতা সম্পন্ন নেতৃবৃন্দ কেনো জনাব তারেক- বাবরের চেয়েও মারাত্মক ভুলটি করতে গেলো তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এরশাদের চরিত্রের সবচেয়ে বড় মাধুর্য্য হল যে তিনি সর্বদা নিজেকে বোকা, সহজলভ্য ও সভার জন্য নিরাপদ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারেন। ফলে সারাজীবন কথা দিয়ে সেই কথা উল্টে ফেলার হাজার হাজার নমুনা থাকা স্বত্বেও লোকজন তার নিকট যায়; ধরা খায় এবং আবার যায়। তিনিই একমাত্র জেনারেল যিনি মুক্তিযুদ্ধ না করেও সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। সবাই জানেন যে মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাগণকে স্বাধীনতার পর দুইটি অতিরিক্ত প্রমোশন দেয়া হয়েছিলো যা কিনা এরশাদ পাননি। ফলে পাকিস্তান ফেরত এরশাদ যখন সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেন তখন তার মুক্তিযোদ্ধা কোর্সমেটরা সবাই তার চেয়ে প্রশাসনে দুই ধাপ এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীন পরিবেশে তিনি মাত্র ৯ বছরের মাথায় সবাইকে টপকে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদবি অর্জন করতে পেরেছিলেন। তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন কেবল বুদ্ধি আর কৌশল প্রয়োগ করে অর্থ্যাৎ একটিও বুলেট খরচ করতে হয়নি সেদিন। শুধু কি তাই? সিভিল প্রশাসনে ১০ জন বিশ্বস্ত সিএসপির সমন্বয়ে গড়ে তুলেছিলেন জি-১০ নামের বিখ্যাত বেসামরিক আমলাদের চৌকস বহর। অন্যদিকে সামরিক বাহিনীতে তিনি তার প্রতিদ্বন্ধীর জনপ্রিয়তার জায়গাটি ধরতে পেরেছিলেন। অফিসার লেবেলে ছিলো জিয়াউর রহমানের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। ফলে তিনি সেদিকে পা না বাড়িয়ে বরং সাধারণ সৈনিকদের সুযোগ সুবিধা এমনভাবে বাড়িয়েছিলেন যে- তারা আজ অবধি এরশাদ সাহেবকে তাদের মনের কুটুরীতে স্থান দিয়ে রেখেছে। সেই এরশাদ সাহেবকে কেনো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বে এত সহজ, স্বাভাবিকও দুর্বল ভেবে গ্রেফতার নাটক করলো তা বোধগম্য নয়। বাংলাদেশের একমাত্র অফিসিয়াল সাবেক ফাস্ট লেডি রওশন এরশাদ নিয়ে যে খেলা খেলার চেষ্টা হচ্ছে তার পরিণতি যে ভালো হবে না- একথা নিশ্চিন্তে বলা যায় জনাব আমু ও জনাব তোফায়েলের মলিন মুখ দেখলেই। জন্মের পর থেকেই আমু ভাই ও তোফায়েল ভাই সারাজীবন একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ে আসছেন। এই প্রথম তারা ঐক্যবদ্ধভাবে বিরসবদনে জেমসবন্ড ০০৭ সিরিজের আদলে মিশন ইমপসিবল সিক্রেট কোড রওশন অভিযানে নেমেছেন। আশা করা যায় এই বার আরব দেশের তেজী ঘোড়ারা অবশ্যই নতুন কিছু প্রসব করিবে বলিয়াই বোধ হইতেছে। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অগ্রিম ফলাফল ইতিমধ্যেই বিশ্ববাসীকে চমকিত করেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত সম্মিলিতভাবে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উইলফোর্সের কাছে পরাজিত হয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে আবেদনের স্বরে বলেছে- সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করুন তবে দেখবেন যেনো সংহিসতা না হয়। বিরোধী দলগুলো একেব‍ারে নেতিয়ে পড়েছে। তারা পালিয়ে গিয়েও শান্তি পাচ্ছে না। সকাল, বিকাল হার্ট, কিডনি আর পাকস্থলীর পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হতে চাচ্ছে যে, তারা বেঁচে আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল বিভাগ-অনুবিভাগ নজিরবিহীনভাবে সরকারের অনুগত। এই অবস্থায় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সরকারের কোন বাধাই নেই। ইতিমধ্যে ১৩৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়ে গেছে। ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী ৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করে তারা অনায়াসে সংসদ বসাতে এবং সরকার গঠন করতে পারবে। ঢাকা শহরসহ সরকার দলীয় প্রভাবাধীন এলাকায় নির্বিঘ্নে নির্বাচন করে আর মাত্র ৩০/৩৫ টি সিট কনফার্ম করা গেলেই সংসদ বসানো যাবে। পরবর্তীতে সময় ও সুযোগমতো ধীরে ধীরে বিরোধপূর্ণ এলাকায় নির্বাচন করিয়ে নিলেই হলো। সরকারের উপরোক্ত কর্ম প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের জন্য এরশাদ বা রওশন এরশাদকে তো দরকার নেই। বরং এসব কর্ম করার ফলে লোকজন হাসছে এবং বেকুবের মতো সরকারকে দুর্বল ভাবছে। টকশোতে বুদ্ধিজীবীরা গাল ফুলিয়ে সরকারের সমালোচনা করছে। অথচ দেশবাসী সকলেই জানে যে, গণতন্ত্রের মানসকণ্যা যা বলেন তা করে ছাড়েন। তোফায়েল ভাই, আমু ভাই অকারনেই মূখটি মলিন করে রেখেছেন- যা কোনো মতেই উচিৎ হচ্ছে না। উৎসঃ ফেসবুক

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন