রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৩


অস্বাভাবিক সম্পদ 22 Dec, 2013 ফুলে ফেঁপে পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়ে হয়েছে বহুগুণ। কারও কারও ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধির পরিমাণ অবিশ্বাস্য। আবার কেউ কেউ অবাক করার মতো তথ্যও দিয়েছেন নিজেদের সম্পদ বিবরণীতে। দশম সংসদে প্রার্থী হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যদের হলফনামায় দেয়া সম্পদ বিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে অস্বাভাবিক সম্পদের মালিক হয়েছেন নবম জাতীয় সংসদের অধিকাংশ সংসদ সদস্য। ফুলে ফেঁপে পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়ে হয়েছে বহুগুণ। কারও কারও ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধির পরিমাণ অবিশ্বাস্য। আবার কেউ কেউ অবাক করার মতো তথ্যও দিয়েছেন নিজেদের সম্পদ বিবরণীতে। দশম সংসদে প্রার্থী হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যদের হলফনামায় দেয়া সম্পদ বিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে অনেকে অস্বাভাবিক পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন যা হলফনামায় স্বীকারও করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ২ কোটি নির্বাচন কমিশনে দায়ের করা হলফনামা অনুসারে প্রধানমন্ত্রীর মালিকানায় গত পাঁচ বছরে ২ কোটি ২ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৫ টাকার সম্পদ বেড়েছে। কমিশনে জমা দেয়া ২০০৮-০৯ অর্থবছরের আয়কর বিবরণী অনুযায়ী শেখ হাসিনার নিট সম্পদ ছিল ৩ কোটি ৫৪ লাখ ২ হাজার ৯০৪ টাকার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে তা বেড়ে হয়েছে পাঁচ কোটি ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩৯ টাকা। তথ্য অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নামে ৬ একর কৃষিজমি রয়েছে, যার আনুমানিক দাম ৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। এখান থেকে তিনি বছরে ৭৫ হাজার টাকা পান। এছাড়া মৎস্য খামার থেকে বছরে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেন। গাছ বিক্রি থেকে বছরে তার আয় ১০ লাখ টাকা। ব্যাংকে তার ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা আছে। আর ব্যাংকে প্রধানমন্ত্রীর স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে ৫ কোটি টাকার কিছু বেশি। দান সূত্রে পাওয়া তার একটি গাড়ি রয়েছে। তার কাছে থাকা স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথরনির্মিত অলঙ্কারাদির মূল্য ১৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। আসবাবপত্র রয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকার। হলফনামা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএ। নিজের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি টুকুর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুর আইন পেশা থেকে বার্ষিক আয়ের উল্লেখ নেই এবারের হলফনামায়। ২০০৮ সালে এই পেশা থেকে তার আয় ছিল ২ লাখ ৫ হাজার টাকা। দানসূত্রে তিনি ২৫ লাখ টাকার ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন। নিজের ও স্ত্রীর নামে পোস্টাল ও সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ হয়েছে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪২ টাকা। পূর্বে এ ধরনের কোন বিনিয়োগ তার ছিল না। পূর্বে তারা ব্যাংকের কাছে কোন প্রকার দায় না থাকলেও বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে তার দায় রয়েছে ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৯ টাকা। মোস্তফা কামালের বার্ষিক আয় বেড়েছে ৫ গুণ কুমিল্লা-১০ আসনের সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামাল আইসিসি’র সহ-সভাপতি হিসেবে বাৎসরিক সম্মানী পেয়েছেন ২৯ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকা। ২০০৮ সালের হলফনামা অনুসারে তার বাৎসরিক আয় ছিল ৫৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫৯০ টাকা। ২০১৩ সালে এসে তার বাৎসরিক আয় দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৬৪ টাকা। ইলিয়াস মোল্লার আয় বেড়েছে ১০ গুণ ঢাকার সংসদ সদস্য ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ৫ বছর আগে কৃষি থেকে ২১ লাখ টাকা আয় করলেও এখন কৃষি থেকে তার কোন আয় নেই। ব্যবসা থেকে তার আয় ছিল ৩০ লাখ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৫ কোটি টাকা। বাসা ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে কোন আয় না হলেও বর্তমানে ২৮ লাখ টাকার বেশি আয় করেন। বর্তমানে এই এমপি’র মোট বার্ষিক আয় ৫ কোটি ৪২ লাখ ১৭ হাজার ৯৫৬ টাকা। আবদুল মান্নান খানের আয় বেড়েছে ১০৭ গুণ আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী আবদুল মান্নান এবং তার স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ গত ৫ বছরে বেড়েছে ১০৭ গুণ। নির্বাচন কমিশনে দায়ের করা হলফনামা অনুযায়ী, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে এ মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর মোট স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। কিন্তু সম্প্রতি পেশ করা ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আয়কর বিবরণীতে অবিশ্বাস্যভাবে সে অর্থের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকায়। কিন্তু, হলফনামায় আবদুল মান্নান তার সম্পদের উৎসের কথা বিশদ ও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। নূর-এ-আলম চৌধুরীর সম্পদ বেড়েছে ৬৭ গুণ আওয়ামী লীগের আরেক আইনপ্রণেতা মহাজোটের শাসনামলে নূর-এ-আলম চৌধুরী লিটন ও তার স্ত্রী গত ৫ বছরে সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৬৭ গুণ বাড়িয়েছেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি যে হলফনামা পেশ করেছিলেন, তাতে তাদের স্থাবর ও অস্থাবর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৬২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। কিন্তু, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনে পেশ করা আয়কর বিবরণীর তথ্যানুযায়ী, গত ৫ বছরে এ দম্পতির যৌথ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকায়। হাছান মাহমুদের সম্পদ বেড়েছে অস্বাভাবিক পরিবেশ মন্ত্রী হাছান মাহমুদের স্ত্রী নুরান ফাতেমা ৫ বছর আগে সাধারণ একজন গৃহিণী ছিলেন। সে সময় তার সম্পদের পরিমাণ ছিল মাত্র ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু, বেড়ে পৌঁছেছে ১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকায়। হাছান মাহমুদের সর্বশেষ পেশ করা আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, ২০০৮ সালে তিনি ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকার মালিক ছিলেন, যা ৪ গুণ বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। তিনি আরও দাবি করেছেন, স্ত্রী ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে তিনি ধার হিসেবে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। অর্থাৎ, এ দম্পতির মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ এখন ১৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে দুই জনের মিলিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩৮ লাখ ১৭ হাজার টাকা, যা গত ৫ বছরে ৪০ গুণ বেড়েছে। বাবু’র সম্পদ বেড়েছে ২৪ গুণ আওয়ামী লীগের আরেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী গত ৫ বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৭৮ গুণ বৃদ্ধি করেছেন। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি যে হলফনামা পেশ করেছিলেন, তাদের স্থাবর ও অস্থাবর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। কিন্তু, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশনে পেশ করা আয়কর বিবরণী অনুযায়ী, গত ৫ বছরে এ দম্পতির যৌথ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকায়। নানকের চেয়ে স্ত্রীর সম্পদ বেশি আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও তার স্ত্রী গত ৫ বছরে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা আয় করেছেন। যৌথভাবে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ হচ্ছে ৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের সম্পদের পরিমাণ ছিল ৯৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে নানকের স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ ৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, যা ৫ বছর আগে ছিল ৫২ লাখ টাকা। ২০০৮ সালে তাদের বার্ষিক আয় ছিল ৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। কিন্তু, নির্বাচিত হওয়ার পর তা দাঁড়ায় ৪৬ লাখ ৪৭ হাজার টাকায়। অর্থাৎ, এ দম্পতি যৌথভাবে তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ৮ গুণ বৃদ্ধি করেছেন। আবদুস শহীদের সম্পদ বেড়েছে ৩ গুণ আওয়ামী লীগের আইনপ্রণেতা ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবদুস শহীদ ও তার স্ত্রী গত ৫ বছরে ৩ দশমিক ০২ গুণ সম্পদ বাড়িয়েছেন। মহাজোট ক্ষমতায় আসার আগে এ দম্পতির মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। আর এখন তাদের সম্পত্তির পরিমাণ ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। ব্যাংকে টাকা নেই সুরঞ্জিতের সাবেক রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের নিজের নামে কোন ব্যাংকে টাকা জমা নেই। তবে স্ত্রীর নামে ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯০৬ টাকা জমা আছে। তিনি বছরে কৃষিখাত থেকে ১ লাখ ১৮ হাজার, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ২০ হাজার ৯১৮ টাকা আয় করেন। শেয়ারবাজার থেকেও তার আয় আছে। তবে তা মাত্র ২৪ হাজার ১৯৯ টাকা। ওবায়দুল কাদেরের নগদ অর্থ ৫৫ হাজার যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নগদ টাকার পরিমাণ মাত্র ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি বছর ‘পেশা’ থেকে তিনি ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭০০ টাকা আয় করেন। সাংবাদিকতা, বর্তমানে এমপি ও মন্ত্রী হিসেবে বেতন-ভাতা এবং বই ও পত্রপত্রিকায় লিখে তিনি এ টাকা পান বলে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, তার নিজের নামে উত্তরায় ৫ কাঠা জমিসহ ২৫ তোলা স্বর্ণ আছে। হলফনামায় ৭৫ হাজার টাকা সমপরিমাণের আসবাবপত্রের কথাও উল্লেখ করেছেন যোগাযোগমন্ত্রী। টকশো থেকে ইনু’র আয় লাখ টাকা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কুষ্টিয়া-৩ সংসদীয় আসনের একমাত্র বৈধপ্রার্থী। টিভি টকশো থেকে প্রাপ্ত আয়ের তথ্য হলফনামার বিবরণীতে উল্লেখ করেছেন তিনি। বছরে এ বাবদ তিনি আয় করেন ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে তার বাৎসরিক আয় প্রায় ৮ লাখ টাকা। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং)। নগদ টাকার পরিমাণ ৬ লাখ ৮৫ হাজার টাকা প্রায়। উৎসঃ মানবজমিন Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন