আগুন নেভাতে পুুলিশের বাধা! : সীতাকুণ্ডে বিএনপি নেতাদের ৪টি ফার্নিচার শোরুম ও ট্রাকসহ ৭ গরু ভস্মীভূত
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
« আগের সংবাদ
35
পরের সংবাদ»
পুলিশের বাধায় জনগণ আগুন নেভাতে না পারায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের ৪টি ফার্নিচার শোরুমসহ ৫টি কারখানা, একটি ট্রাকসহ ৭টি গরু এবং রেলওয়ে কলোনি ও একটি বসতবাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে অনুমানিক ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল ভোর সাড়ে ৪টায় একটি গরুবাহী ট্রাক বিকট শব্দে একটি বিদ্যুত্ পিলারের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে আগুন ধরে যায়। এ সময় স্থানীয় শত শত লোক আগুন নেভাতে এগিয়ে এলেও কর্তব্যরত পুলিশের বাধার কারণে কেউ ঘটনাস্থলে ভিড়তে পারেনি। ফলে হাজার হাজার লোক ও পুলিশের চোখের সামনেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানায়, গতকাল ফজরের আজানের আগে একটি গরু বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তা ছেড়ে ফুটপাত দিয়ে চলতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ট্রাকটি একটি বিদ্যুত্ পিলারের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে রাস্তার পাশে কাত হয়ে পড়ে যায় এবং তত্ক্ষণাত্ আগুন ধরে যায়। শুরুতেই আগুন শুধু ট্রাকের ভেতর ও একটি রান্নাঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এ সময় আশপাশের শত শত লোক জড়ো হয়। বহু পুলিশ সদস্যও ছিল আশপাশে। এক পর্যায়ে এলাকাবাসী আগুন নেভাতে এগিয়ে এলেও পুলিশ কাউকে কাছে যেতে দেয়নি। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে দমকল কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছে এক ঘণ্টা পর। ততক্ষণে শেষ হয়ে যায় বিশাল এলাকাজুড়ে ৪টি ফার্নিচারের শোরুম, ৫টি কারখানা, থাই অ্যালুমিনিয়ামের দোকান, রেলওয়ে কলোনির আংশিক, ট্রাক, সাতটি গরু ও নিকটস্থ একটি বসতবাড়ি।
এলাকাবাসী আরও জানায়, ট্রাকটিতে মোট ১৮টি গরু ছিল। রাস্তার পাশে পড়ে যাওয়ার পর ১১টি গরু বাঁধন থেকে ছুটে গেলে এলাকার কয়েকজন উদ্ধার করে নিরাপদে রাখে। তবে এলাকাবাসী আগুন নেভাতে চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে চতুর্দিকে। এক ঘণ্টার মধ্যে বিশাল এলাকাজুড়ে দোকান ও কারখানাগুলো পুড়ে যায়।
অগ্নিদগ্ধ গুরুগুলো বাঁচার জন্য ছটফট করছিল। কিন্তু পুলিশের বাধায় এলাকাবাসী আগাতে পারেনি। প্রায় এক ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছলে উপস্থিত এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। উত্তেজিত লোকদের পুলিশ সরিয়ে নেয়।
জানা যায়, গরুবাহী ট্রাকটিতে কে বা কারা আবদুল্লাহঘাটা এলাকায় পেট্রল বোমা ছোড়ে। এতে চালকের গায়ের ওপর পড়লে সে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায়ে ট্রাক থেকে নেমে পড়ে চালক। ট্রাকটি আগুনে জ্বলতে জ্বলতে এক পর্যায়ে রাস্তার পাশে উল্টে যায়। আবার অনেকে বলেছেন, ট্রাকটি দুর্ঘটনায় পড়ার পর আগুন দেখা যায়।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা হলেন—কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক লায়ন আসলাম চৌধুরী এফসিএ’র রাইজিং ফার্নিচার শোরুম, উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক মো. ইউনুছ চৌধুরীর উদয়ন ফার্নিচার, জেলা বিএনপি সদস্য আবুল কালাম চৌধুরী, বিএনপি সমর্থক সালাউদ্দিন, যুবদল নেতা মো. ইকবালসহ তাদের পার্টনাররা এবং আ.লীগ নেতা আলাউদ্দিন সাবেরী।
অপরদিকে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন জানান, ভোর ৪টা ২০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর, কুমিরা ও আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের ৮টি গাড়ি অগ্নিনির্বাপণে অংশগ্রহণ করে সকাল ১১টায় আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ফার্নিচার শোরুম ও কারখানার মালিক উপজেলা বিএনপি আহ্বায়ক মো. ইউনুছ জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা প্রায় সবাই বিএনপি নেতা। তিনি জানান, তাকে কেউ একজন বেশ কিছুদিন ধরে একটি মোবাইল থেকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তাকে বলা হয়, ‘তোর সব শেষ করে দেব, তুই বিএনপি ছাড়; আসলাম চৌধুরীর সঙ্গ ছাড়।’
তিনি বলেন, ‘গত রোববার এভাবে একটি ট্রাককে আগুন দিতে চেষ্টা করলে আমার দোকানের সামনে ট্রাকটি উল্টে পড়ে। তবে সে সময় আগুন থেকে রক্ষা পেলেও এবার সব শেষ করে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।’
এরা কে—প্রশ্ন করলে তিনি আওয়ামী লীগের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমি বিএনপির উপজেলা আহ্বায়ক। হুমকি আওয়ামী লীগ ছাড়া কে দিতে পারে বলুন?’
এলাকাবাসী নুরুল আফসার, সখিনা বেগম, আমেনা, নুর নবী ক্ষুব্ধ কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনা যেভাবেই হোক, আগুন ছিল শুধু ট্রাকে ও ছোট একটি ঘরে সীমাবদ্ধ। শত শত লোক দেখেছে যে, পুলিশ এলাকাবাসীকে আগুন নেভাতে দেয়নি। তখন রাস্তা থেকে শুধু বালু ছিটালেও আগুন নেভানো সম্ভব হতো। আগুন নেভাতে না দেয়াটাও রহস্যজনক বলে এলাকাবাসী মন্তব্য করে।
রাষ্ট্রপতির আগমনের মধ্যেই বহু গাড়িতে আগুন
এদিকে গতকাল রাষ্ট্রপতি সীতাকুণ্ডের বিএমএ আসেন। এ উপলক্ষে উপজেলার সর্বত্রই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। প্রতিটি বাজার এবং গলির মুখে টহলে ছিল সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ। তা সত্ত্বেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছোট দারোগারহাটে একটি ট্রাক, সীতাকুণ্ড উত্তর বাইপাসে একটি ট্রাক, বাড়বকুণ্ডে একটি কভার্ড ভ্যান, ভাটিয়ারীতে একটি কভার্ড ভ্যান, ছলিমপুরের কালিরহাট এলাকায় দুটি ট্রাকসহ ৫টি গাড়িতে আগুন এবং বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন