শহরে-গ্রামে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা হচ্ছে ওয়াজ মাহফিল
24 Dec, 2013
গত ৬ ডিসেম্বর ২০১৩ কক্সবাজারের রামুর জোয়ারিয়ানালা স্টেশনে স্থানীয় রিকশা ও সিএনজিচালক সমিতির ব্যানারে একটি ইসলামি মাহফিলে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আইন শৃঙ্খলার অবনতির অজুহাত দেখিয়ে সেই মাহফিল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।
এর আগে ১৫ নভেম্বর ২০১৩ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভূজপুরে আল্লামা বাবুনগরীর ধর্মীয় মাহফিল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। স্থানীয় কাজীরহাট বাজারের চাউলহাটা মাঠে ইসলামী জনকল্যাণ পরিষদ বৃহত্তর ভূজপুর নামক একটি ধর্মীয় সংগঠনের উদ্যোগে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
এই দৃশ্য কেবল চট্টগ্রাম কিংবা কক্সবাজারের নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে সারা বাংলাদেশের মাহফিল বন্ধ করার একটি রেওয়াজ চালু করেছে সরকার। খুব ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে অনেকদিন ধরে নিয়মিত চলে আসা ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনকে। বিশেষ করে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত কয়েক বছরে শহরের অধিকাংশ স্থানের ওয়াজ মাহফিল বন্ধ রাখে এ সরকার। বিশেষত রাজধানী ঢাকা এবং বিভাগীয় শহরে মাহফিল অনুষ্ঠানে কড়া বিধি-নিষেধ আরোপ করে। বিশেষ করে এ বছর গ্রাম-শহর নির্বিশেষে মাহফিল আয়োজনে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। কোথাও কোথাও মাহফিল শুরু হওয়ার পর পুলিশ এসে মাহফিলের প্যা-েল ভেঙে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। আবার অনেক জায়গায় দলীয় লোকজন দিয়ে হামলা করে মাহফিল ভ-ুল করে দেয়া হয়েছে।
ওয়াজ মাহফিল বাংলাদেশের ধর্মীয় সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতি বছরই বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়ন-গ্রাম পর্যায়ে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন হয়ে থাকে। মসজিদ-মাদরাসাকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সমাজ বাস্তবতায় এ সংস্কৃতি শত শত বছর ধরে চলে আসছে। সমাজে এ ওয়াজ মাহফিলের প্রভাবও সীমাহীন। তাছাড়া এই মাহফিলকে কেন্দ্র করে প্রতিটি গ্রামেই একটা উৎসবের রেওয়াজ চালু আছে। মাহফিল উপলক্ষে গ্রাম বা মহল্লার প্রতিটি বাড়িতেই একটা উৎসবের আমেজ চলে আসে। সহজ কথায় এই ওয়াজ মাহফিল আমাদের সমাজের একটি আবশ্যিক অনুষঙ্গ হয়ে আছে ব- বছর ধরেই।
কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের এই ধর্মীয় আয়োজনকে ঘিরে চলছে নানামুখী ষড়যন্ত্র। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা অজুহাতে প্রশাসন এই ধর্মীয় আয়োজনগুলোকে বন্ধ করতে শুরু করেছে। কখনও নিরাপত্তার অজুহাতে, কখনও রাষ্ট্রদ্রোহিতার ভয় দেখিয়ে এসব অনুষ্ঠানকে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন কিংবা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কোথাও কোথাও মাহফিল চলাকালে মাহফিলের প্যা-েল ভেঙে সভা প- করে দেয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এতে একদিকে সমাজে যেমন সরকারের প্রতি ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হচ্ছে অপর দিকে মাহফিল আয়োজক কমিটি স্বীকার হচ্ছেন আর্থিক ক্ষতির। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশকে ধর্মহীন করার লক্ষ্যে এই সরকারের এমন কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। জনমনে এ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে।
মাহফিল বন্ধের কারণে কেবল আয়োজরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাহফিলের বক্তারাও। কারণ মাহফিল উপলক্ষে নির্দিষ্ট আলেমকে কয়েক মাস আগেই দাওয়াত দিয়ে রাখা হয়। বক্তা হিসেবে প্রসিদ্ধ এবং সুপরিচিত সব আলেমই মাহফিলের জন্য প্রতিদিনের দাওয়াত কয়েক মাস আগেই ডায়েরিতে লিখে রাখেন। মাহফিল অনুষ্ঠানের দুয়েক দিন আগে যদি মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে সেই বক্তা নতুন করে আর কোথাও প্রোগ্রাম করতে পারেন না। এতে আর্থিকভাবে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশের সুপরিচিত আলেম ও বক্তা মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরীর কাছে। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মাহফিলে সরকার সাধারণত হস্তক্ষেপ করে না। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাহফিল বন্ধ করার বিষয়টি আমিও শুনেছি। অনেক মাহফিল আয়োজক এবং বক্তাই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আমার মনে হয়, এগুলো সরকার না বুঝেই করছে। সরকার বুঝতে পারছে না যে সব মাহফিলই হেফাজতে ইসলামসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নয়। এসব মাহফিল বাংলাদেশের শত শত বছরের সংস্কৃতির অংশ। এটাকে বাধা দেয়া মানে বাংলাদেশের মুসলমানদের সংস্কৃতিতে আঘাত করা। সরকার প্রকারান্তরে বাংলাদেশের মুসলমানদের শত শত বছরের সংস্কৃতিকে বাধাগ্রস্ত করা। এই বিষয়টি সরকার যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল।
এ ব্যাপারে আমরা আরও কথা বলি বিশিষ্ট আলেম ও ওয়ায়েজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান মুমতাজীর সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে জানান, কেবল নভেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসেই আমার কমপক্ষে ২০টি মাহফিল বাতিল হয়ে গেছে। আগামী জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে আরও যে বাতিল হবে তা এখন থেকেই বুঝা যাচ্ছে। কেন বাতিল করা হচ্ছে, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সরকার নিরাপত্তা এবং বিশৃঙ্খলার কারণ দেখিয়ে এসব মাহফিল বন্ধ করে দিচ্ছে। তাদের দাবি, এসব জনসমাগম থেকে নাকি সরকারবিরোধী কার্যকলাপের ইন্ধন দেয়া হয়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সরকার নিরাপত্তার অজুহাতে এ পর্যন্ত একটা গান বা যাত্রা অনুষ্ঠান বন্ধ করেনি। মানুষকে ধর্মের কথা শোনালে নিরাপত্তা বিঘিœত হয় অথচ গান-বাজনা, অশ্লীল নৃত্য অনুষ্ঠান করলে নিরাপত্তা বিঘিœত হয় না। সরকার এ দেশ থেকে ইসলামি রীতিনীতিকে উচ্ছেদ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এটা কখনই সরকারের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না।
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক, হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস ও বিশিষ্ট ধর্মীয় বক্তা মাওলানা নিজামপুরীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, আমার অনেক মাহফিল ক্যানসেল করে দেয়া হয়েছে। গত কয়েকদিন আগেও কক্সবাজারের দুটি মাহফিল প্রশাসন থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আয়োজক কমিটি অনেক কষ্ট করে একটি মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন। এভাবে তাদের আয়োজনকে নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
হাটহাজারী মাদরাসার অন্য শিক্ষকদের ব্যাপারে একই আচরণ করা হচ্ছে কি না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমবেশি সবার মাহফিলের ব্যাপারেই এমন আচরণ করা হচ্ছে। তবে হেফাজত সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের মাহফিলগুলো বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু সরকার হয়ত বুঝতে পারছেন না যে, যারা এই মাহফিলগুলোর আয়োজন করে থাকেন তারা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তেমনি এলাকার জনগণের মধ্যেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। সরকারের এমন আচরণের কারণ কী, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই সরকার যে ইসলামবিদ্বেষী, কুরআনবিদ্বেষী, নাস্তিকদের তোষণকারী তার প্রমাণ আগেই তারা দিয়েছে। নতুন করে তারা মাহফিল বন্ধের যে অসদুপায় অবলম্বন করছে তাতে তাদের সে আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে আমি মনেকরি। এর দ্বারা তারা বাংলাদেশ থেকে ইসলামি সংস্কৃতির নাম-নিশানা মুছে ফেলার ঘৃণ্য চক্রান্তে লিপ্ত।
ধর্মীয় নেতারা মনে করছেন, এটা আসলে আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী নীল নকশা। তারা এভাবে মাহফিল বন্ধ করে দিয়ে ধীরে ধীরে এ দেশ থেকে ইসলামি তাহযীব-তামাদ্দুনকে বিদূরিত করতে। দেশের ঐতিহ্যবাহী বড় বড় কয়েকটি মাহফিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে না বেশ কয়েক বছর ধরে। গত নভেম্বর মাসে কুমিল্লা জেলার হোমনা থানায় এলাকার একটি অরাজনৈতিক সংগঠন দিনব্যাপী বিভিন্ন ধরনের ইসলামি অনুষ্ঠান এবং রাতে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে। তারা এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতিও গ্রহণ করেন। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর পুলিশ এসে তাদের সভা ভ-ুল করে দেয়। এতে কয়েক লাখ টাকা ক্ষতির শিকার হয় সংগঠনটি।
বিগত বছর এবং এ বছর আরও বেশ কিছু মাহফিল বন্ধ করা হয়েছে প্রশাসনের নির্দেশে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় এ নিয়ে খবরও প্রকাশ হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির খবর নিচে দেয়া হলো।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সীচা চৌরাস্তায় তাফসিরুল কুরআন মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটি ১২, ১৩, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখের নির্ধারিত তাফসিরুল কুরআন মাহফিল প্রশাসনের চাপে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হন।
৩ ডিসেম্বর ২০১৩ নাটোরের সিংড়া উপজেলার তেলীগ্রামে আওয়ামী লীগ এমপি জুনাইদ আহমেদ পলকের চাচাত ভাইয়ের হামলায় তাফসির মাহফিল বন্ধ হয়ে যায়।
২৪ নভেম্বর ২০১৩ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার আনারপুরা মহিলা মাদরাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত চরমোনাই পীর মাওলানা সৈয়দ রেজাউল করীমের পূর্ব-নির্ধারিত মাহফিল নাশকতার অজুহাত দেখিয়ে স্থগিত করে পুলিশ।
১১ নভেম্বর, ২০১৩ রাজশাহীর বাগমারায় বানইল গোলা বাজারে তাফসিরুল কুরআন মাহফিল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
১৫ মে ২০১৩ গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ বাজারে এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে রায়গড় ও শিলঘাট গ্রামবাসী। নির্ধারিত সময়ে দোয়া মাহফিল শুরুর আগেই গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ আয়োজনকারীদের কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে মাহফিল বন্ধ করে দেয়।
২৪ এপ্রিল ২০১৩ নওগাঁর মান্দা উপজেলার স্থানীয় আ’লীগের বাধায় গাড়ীক্ষেত্র ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা মাঠে ২য় দিনের তাফসীরুল কুরআন মাহফিল প- হয়ে যায়।
২৮ মার্চ ২০১৩ খুলনা রূপসা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ইলাইপুর আল মদিনা মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদের বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল ও হালকায়ে জিকির জনপ্রতিনিধির নির্দেশে বন্ধ করে দেয়া হয়।
১৫ মার্চ ২০১৩ মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গজারিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ওয়াজ মাহফিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করে মাহফিল বন্ধ করে দেয় এবং আগত অতিথিদের গাড়ি ভাঙচুর করে।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় হারিছ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদ ময়দানে সিরাত সা. মাহফিল ও ২৪ ফেব্রুয়ারি চরবাটা ছমির হাট জামে মসজিদ ময়দানে তাফসির মাহফিল চরজব্বর থানার (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তার মাধ্যমে মাহফিলের উদ্দ্যোক্তাদেরকে ডেকে মাহফিল বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রশাসন।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের কাচারী গ্রামের একটি তাফসির মাহফিল চলাকালে বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে দুই আওয়ামী লীগ নেতার নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ দিয়ে ২ দিনব্যাপী পবিত্র কুরআনের তাফসির মাহফিল বন্ধ করে দিয়ে ঈদগাঁওয়ে ভারতীয় পূজার মত মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে নৃত্য করা হয়।
১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে আয়োজিত দুটি মাহফিল বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
৯ জানুয়ারি ২০১৩ টঙ্গী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মোদাফা হাজী কালু মিয়া আদর্শ মহিলা মাদরাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও থানা পুলিশের বাধার কারণে প- হয়ে যায়।
২২ অক্টোবর ২০১২ লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের দালাল বাজার কলেজ মাঠে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী তাফসির মাহফিল বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। বিগত ১৩ বছর থেকে এ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।
৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কাচারীকান্দি গ্রামে ওয়াজ মাহফিলের লিফলেট থেকে প্রশাসনের নির্দেশে নারায়ে রিসালাত ইয়া রাসুলুল্লাহ লেখা কেটে দেয়ায় ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দেয়া হয়।
৮ এপ্রিল ২০১২ কক্সবাজার শহরের রুমালিরছড়া ও সদরের ঈদগাঁওতে এবং রামুর চেইন্দায় তাফসিরুল কুরআন মাহফিল বন্ধ করে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে।
৫ এপ্রিল ২০১২ কক্সবাজার ঈদগাঁও হাইস্কুল মাঠের তাফসির মাহফিলের অনুমতি দেয়া সত্ত্বেও শেষ দিন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর পুলিশ আকস্মিক মাহফিল বন্ধ করে প্যা-েল ভেঙে দেয়।
৩০ মার্চ ২০১২ রাজশাহীর পবা উপজেলার দারুশা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২ দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ বাধা দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে উল্টো তারাই মামলা করল মাহফিলের আয়োজকদের বিরুদ্ধে।
এ তালিকা খুবই সংক্ষিপ্ত এবং কেবল অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে সংগৃহীত। সারা দেশের বাস্তব অবস্থা অনেক ভয়াবহ এবং সেই তালিকাও অনেক বিশাল। সমগ্র বাংলাদেশের অল্পসংখ্যক মাহফিল বন্ধ করার খবরই কেবল অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোতে স্থান পেয়েছে। গ্রামগঞ্জের অনেক খবরই খবরের অন্তরালে ঢাকা পড়ে যায়। এ থেকেই প্রতীয়মান হয় সরকারের অযথা অজুহাত দিয়ে মাহফিল বন্ধের ধারাবাহিকতা। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল, আজ পর্যন্ত নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশের কোথাও কোন গানের অনুষ্ঠান বন্ধ করা হয়নি। বরং নতুন করে লাইভ কনসার্ট, ডিজে শো, ককটেল শো নামে নানাধর্মী অপসংস্কৃতির প্রসার ঘটানো হচ্ছে। অন্যদিকে নতুন করে যাত্রাকে গ্রামীণ সমাজে প্রবেশের তোড়জোড় শুরু করেছে কয়েকটি জাতীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন। এসব যাত্রাপালার আড়ালে চলছে অবৈধ দেহব্যবসা, মাদকব্যবসাসহ আরও নানা অবৈধ কাজ। কিন্তু সরকার সেগুলো নজর না দিয়ে বন্ধ করা শুরু করেছে ওয়াজ মাহফিল। এ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে সারাদেশেই। হেফাজতের জুজুর ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইসলামি সংস্কৃতির এই অন্যতম মাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করার প্রয়াসকেও ভালো চোখে দেখছেন না ধর্মীয় অঙ্গনের বিশিষ্টজন। সরকারকে এখনই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
উৎসঃ সাপ্তাহিক লিখনী
Share on facebook Share on email Share on print 8
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন