সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩


২৮৪৫ একর জমি কিনেছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর 23 Dec, 2013 পাঁচ বছরে দুই হাজার ৮৪৫ একর জমি কিনেছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান। রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করা হলফনামা থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এরই মধ্যে তিনি পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসন থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত নির্বাচনের সময় তাঁর হলফনামায় মাত্র ২০ একর কৃষিজমির কথা উল্লেখ ছিল। এবারের হলফনামায় দুই হাজার ৮৬৫ একর জমির মূল্য দেখানো হয়েছে মাত্র ৭০ লাখ টাকা। কিন্তু তার জমির সিংহভাগ রয়েছে পর্যটন এলাকা কুয়াকাটা ও তার আশপাশে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ওই জমির আনুমানিক মূল্য তিন হাজার কোটি টাকা। মাহবুবুর রহমানের সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গে আয়ের উৎসের মিল নেই। সম্পদ বিবরণীতেও বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই। হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সম্পদের পাহাড় গড়েছেন সদ্য পদত্যাগ করা পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুবুর রহমান। তাঁর হিসাব অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে ব্যাংকে জমা করা টাকা বেড়েছে ৫৮৬ দশমিক ৭৫ গুণ, জমি বেড়েছে ১৪৩ দশমিক ২৫ গুণ এবং বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭৯ দশমিক ২৩ গুণ। পাশাপাশি স্ত্রী প্রীতি হায়দারের নামে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ দশমিক ২২ গুণ। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর মালিকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে এমনকি দখল করার পর কম দামে সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার বিভিন্ন মৌজার জমি তাঁর কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে। এ নিয়ে কালের কণ্ঠে একাধিকবার সংবাদও প্রকাশিত হয়। তবে হলফনামায় উল্লেখ করা দুই হাজার ৮৬৫ একর জমির দাগ খতিয়ান এবং কিংবা মৌজার বিবরণ নেই। স্থাবর সম্পদ : ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মাহবুবুর রহমান। তখন রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করা হলফনামায় তার ২০ একর কৃষিজমি থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। ওই জমির বাজারমূল্য উল্লেখ করা হয়েছিল মাত্র ৫৫ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। দশম সংসদ নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর হলফনামায় এবার কৃষিজমির পরিমাণ উল্লেখ করেছেন দুই হাজার ৮৬৫ একর, যার বাজার মূল্য দেখানো হয়েছে হয়েছে ৭০ লাখ ১৪ হাজার ৪৪০ টাকা। ফলে পাঁচ বছরে তাঁর জমির মালিকানা বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪৩ দশমিক ২৫ গুণ। ২০০৮ সালের হলফনামায় মাহবুবুর রহমান পাঁচ কাঠা জমি রাজউক থেকে বরাদ্দ পাওয়ার তথ্য দিয়েছিলেন। যৌথ মালিকানায় ১০ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি থাকার তথ্যও উল্লেখ ছিল হলফনামায়। ২০১৩ সালের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে ছয় কাঠা ১৩ ছটাক জমি, যার মূল্য ৩৯ লাখ ২০ হাজার টাকা। তবে কোথায় ওই জমি তা উল্লেখ করেননি। যৌথ মালিকানায় ১০ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি এবং এক একর জমির ওপর বাড়ি কোথায় তাও উল্লেখ করা হয়নি। বার্ষিক আয় : ২০০৮ সালের হলফনামায় 'খণ্ডকালীন রাখি মালামাল' থেকে দেখানো হয়েছিল দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা। তাঁর নির্ভরশীলদের কোনো আয় দেখানো হয়নি। ২০১৩ সালের হলফনামায় তাঁর চাকরি থেকে আয় দেখানো হয়েছে ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৭০০ টাকা এবং মৎস্য উৎপাদন ও বিক্রি থেকে আয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা। ফলে পাঁচ বছর ব্যবধানে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭৯ দশমিক ২৩ গুণ। এ ছাড়া হলফনামায় তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৯৫ হাজার টাকা। অন্যান্য সম্পদ : ২০০৮ সালের হলফনামায় ব্যাংকে জমা করা অর্থ দেখানো হয়েছিল ৮৩ হাজার ১১২ টাকা। ২০১৩ সালের হলফনামায় ব্যাংকে জমা করা অর্থ দেখানো হয়েছে চার কোটি ৮৭ লাখ ৬৬ হাজার ৭২ টাকা। ফলে ব্যাংকে জমা করা টাকা বেড়েছে ৫৮৬ দশমিক ৭৫ গুণ। এ ছাড়া ২০০৮ সালে স্বর্ণ, গাড়ি, ইলেকট্রিক সামগ্রী ও আসবাবের মূল্য দেখানো হয়েছিল ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা করা অর্থ আগে না থাকলেও ২০১৩ সালের হলফনামায় ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৬৫৮ টাকা দেখানো হয়েছে। স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ১৬ লাখ ১৪ হাজার ৩৪২ টাকা। সেই হিসেবে স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ দশমিক ২২ গুণ। অন্যান্য ব্যবসায় পুঁজি দেখানো হয়েছে নিজের নামে ৩৫ লাখ এবং স্ত্রীর নামে ৭৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। দায়দেনা : ২০০৮ সালে গাড়ির অনুকূলে এইচ এস বি সি ব্যাংক থেকে ঋণ দেখানো হয়েছিল তিন লাখ ২০ হাজার ৩৫২ টাকা ২৯ পয়সা। ওই বছর বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল দুই লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং ব্যয় দুই লাখ টাকা। এবার জমা দেওয়া হলফনামায় বাড়ির অনুকূলে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ দেখানো হয়েছে এক কোটি টাকা। কলাপাড়ার ঠিকাদার বিপুল হাওলাদারের কাছ থেকে ধার দেখানো হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের অনুকূলে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। এর অধিকাংশ কাজই বিপুল হালদার, মন্ত্রীর স্ত্রীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গঙ্গামতি এবং আন্ধারমানিক এন্টারপ্রাইজের নামে করেছে। উৎসঃ কালের কন্ঠ Share on facebook Share on email Share on print 5

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন