রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩


* প্রচ্ছদ * বাংলাদেশ * সংবাদ * নাশকতার মামলা নিয়ে পুলিশের বাণিজ্য News Details - Full Banner_Above নাশকতার মামলা নিয়ে পুলিশের বাণিজ্য গাজীপুর প্রতিনিধি | আপডেট: ০৩:০৭, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্ক ১৮-দলীয় জোটের হরতাল ও অবরোধকে কেন্দ্র করে গাজীপুরে প্রায় প্রতিদিনই হামলা, ভাঙচুর ও নাশকতার ঘটনায় মামলা হচ্ছে। জেলার জয়দেবপুর ও কালিয়াকৈর থানার দুই উপপরিদর্শক (এসআই) এসব মামলা নিয়ে বাণিজ্যে নেমেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাঁদের বিরুদ্ধে টাকা না দিলে গ্রেপ্তারের ভয়ভীতি ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ও একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় জেলার জয়দেবপুর থানায় এ পর্যন্ত ১৪-১৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার প্রতিটিতে ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৬০-৭০ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু ১৮ দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে থাকায় পুলিশ প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পেরে সাধারণ মানুষকে আটক করছে। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, কাউকে আবার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। জয়দেবপুর থানার এসআই মিঠু শেখ পুলিশের কয়েকজন সদস্য (কনস্টেবল) নিয়ে গত শুক্রবার লক্ষ্মীপুরা এলাকা থেকে রিপন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেন। রিপনকে গ্রেপ্তারের পর মিঠু শেখ তাঁর কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে হরতাল-অবরোধে গাড়ি পোড়ানো ও বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর ভয়ভীতি তাঁকে দেখানো হয়। পরে ওই এলাকার একটি কার্যালয়ে বসে রিপনের স্বজনেরা মিঠুকে দুই লাখ টাকা দেন। এর পরও পুলিশ গতকাল শনিবার ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিপনকে কারাগারে পাঠান। রিপনের পরিবার জানায়, পুলিশ দুই লাখ টাকা নিল, আবার রিপনকে কারাগারে পাঠাল। আদালত থেকে জামিন আনলেও তো এত টাকা লাগত না। তিন-চার দিন আগে লক্ষ্মীপুরা এলাকা থেকে জাকির হোসেনের স্ত্রী লাকি আক্তারকে গ্রেপ্তার করেন মিঠু শেখ। এ সময় তাঁর কাছ থেকে ইয়াবা ও ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। পরে জাকিরের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর পুলিশ লাইনসের পাশে মোহামঞ্চদ আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেন মিঠু। তাঁদের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়োয় তাঁকে বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে কথা বলতে এসআই মিঠুর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জয়দেবপুর থানার একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, মিঠু সিভিল টিমের নামে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাণিজ্য করছেন। এর জন্য পুলিশের বদনাম হচ্ছে। এদিকে হরতাল-অবরোধে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় ১৮ দলের কিছু নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তির নামে আটটি মামলা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বর রাতে থানার এসআই মো. হারুন কয়েকজন কনস্টেবল নিয়ে উপজেলার বাড়ইপাড়া এলাকায় অভিযান চালান। তখন করাখনার কর্মকর্তা আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে থানায় না নিয়ে ৮০ হাজার টাকা আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এসআই মো. হারুন জানান, আবু সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সন্দেহজনকভাবে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাঁর কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। তবে আবু সাঈদ অভিযোগ করেন, মিথ্যা অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গাজীপুর সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে জানান, অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে। সত্যতা পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন