সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ও স্ত্রী’র নামে অঢেল সম্পদ !
25 Dec, 2013
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের ৫ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিবুর রহমান ফকির এমপি। নিজের স্ত্রী’র নামেও গড়ে তুলেছেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামা বিশ্লে¬ষণ করে জানা গেছে এসব তথ্য।
জানা গেছে, অষ্টম ও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকিটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিবুর রহমান ফকির। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য হলেও আওয়ামী লীগ ছিল বিরোধী দলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য হবার পর তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী’র দায়িত্ব পান। এরপর নির্বাচনকালীন সরকারে তিনি প্রতিমন্ত্রী পদ থেকে বাদ পড়েন।
আসন্ন দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখিয়েছেন এমবিবিএস ও পেশার কথা উল্লে¬খ করেছেন ‘চিকিৎসা।’ কিন্তু ২০০৮ সালের হলফনামায় তিনি নিজের পেশার কথা উল্লেখ করেননি। অথচ ওই সময় এ খাত থেকে ১ লক্ষ ৪ হাজার টাকা আয় করার তথ্য দিয়েছিলেন। বাড়ি ভাড়ার ঘরে আয়ের পরিমাণ লিখেছিলেন ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা।
চলতি হলফনামা মতে, কৃষিখাত থেকে তার বাৎসরিক কোন আয় না থাকলেও চিকিৎসা পেশা থেকে বছরে নিজের আয়ের পরিমাণ লিখেছেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী’র নিজের নামে নগদ ২৫ লক্ষ ১০ হাজার টাকা এবং স্ত্রী’র নামে ১৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকা থাকার তথ্য দিয়েছেন হলফনামায়।
আসবাবপত্র বিবরণীর ঘরে লিখেছেন ১ লক্ষ টাকা। অথচ ২০০৮ সালের হলফনামায় এ এমপি’র নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১৮ লক্ষ ১১ হাজার ১শ’ ৭ টাকার কথা উল্লে¬খ করেছিলেন।
দেখা গেছে, এবারের হলফনামায় মুজিবুর রহমান ফকির তাঁর স্ত্রী’র নামে ১৪ লক্ষ ৯৮ হাজার ১০৪ টাকা মূল্যের বাড়ি থাকার তথ্য সন্নিবেশিত করেছেন। নিজের নামে ১১ লক্ষ ৬০ হাজার ৩৭ টাকার অকৃষি জমি ও ১২ লক্ষ ১০ হাজার ৩১ টাকা মূল্যের একটি বাড়ি রয়েছে তার। নিজের নামে কোন জমি না থাকলেও স্ত্রী’র নামে মাত্র ৬ শতাংশ জমির কথা লিখেছেন।
সূত্র মতে, সাবেক এ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী’র মালিকানাধীন নাসিমা নার্সিং হোম নামে একটি ক্লিনিক থাকলেও হলফনামায় তিনি এ বিষয়টি চেপে গেছেন। অনেকের মতে, বর্তমানে ওই ক্লিনিকটির মূল্য রয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে হলফনামায় লিখলেও তাঁর স্ত্রী’র কোন পেশার কথা লিখেননি।
গত ৫ বছরে সাবেক এ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী’র সম্পদ ফুলেফেঁপে উঠার নেপথ্য কারণ নিয়েও খোদ তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকা গৌরীপুরেই রয়েছে নানা গুঞ্জন। প্রতিমন্ত্রিত্বের ৫ বছরে চিকিৎসা সেক্টরে তিনি বিপুল সংখ্যক লোককে চাকরি দেন। এ থেকেও মোটা দাগে টাকা হাতিয়ে নেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘আগে প্রতিমন্ত্রী চিকিৎসা পেশায় সম্পৃক্ত ছিলেন। নাসিমা নার্সিং হোম নামে তাঁর একটি প্রাইভেট ক্লিনিকও ছিল। তিনি নিজে রোগীও দেখতেন। তাঁর থেকে কিছু আয়ও হতো। কিন্তু স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হবার পর এ ক্লিনিক ব্যবসার দাড়ি টানেন। কাজেই চিকিৎসা পেশায় থেকে তিনি যে আলাদীনের চেরাগ পাননি এটা নিশ্চিত। অন্য কোনো ব্যবসাও তাঁর ছিল না। কাজেই ৫ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ কমার কথা। অথচ দেখা গেল তা অনেক বেড়েছে। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’
সাবেক এ স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর বিষয়ে অবাক করা তথ্যটি দেন তাঁর নেতৃত্বাধীন গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিধূভূষণ দাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সভায় তিনি অভিযোগ করে বলেছিলেন, ‘টাকার বিনিময়ে মুজিবুর রহমান ফকির বিএনপি-জামায়াত জোটের লোকজনকে চাকরি দিয়েছেন।’
এ বিষয়ে মঙ্গলবার তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আমার এ বক্তব্যের সময় সাবেক প্রতিমন্ত্রী কথা বলার সাহস পাননি। কারণ, তিনি চাকরি বাণিজ্যের মাধ্যমে টাকা কামিয়েছেন। অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছেন।’
এসব বিষয়ে সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব:) মুজিবুর রহমান ফকিরের সাথে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
উৎসঃ ইনকিলাব
Share on facebook Share on email Share on print
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন