মিডিয়ার ভূমিকা ভাল চোখে দেখছে না সরকার
16 Dec, 2013
সংঘাত, সংঘর্ষের খবর প্রকাশ করায় মিডিয়ার ভূমিকা ভাল চোখে দেখছে না সরকার। এজন্য বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ওপর অদৃশ্য চাপ প্রয়োগে নানা ধরনের প্রেসক্রিপশন দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এর প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ ঊর্ধ্বতনরা। এছাড়া কোন কোন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শৈথিল্যের অভিযোগ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় জিরো টলারেন্স দেখানোর নির্দেশ দেয়া হয়। গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বেলা সাড়ে ৩টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে সোয়া ৫টা পর্যন্ত চলে। এ দিনের বৈঠকটি অনেকটা হঠাৎ করেই অনুষ্ঠিত হয়। সকালে মন্ত্রিসভা কমিটির সদস্যদের ফোন করে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়। অনেকটা হঠাৎ করেই জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ হাজির হন। কথা বলেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থা নিয়ে। সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে সোয়া দুই ঘণ্টার বৈঠকে বেশির ভাগ সময় ধরে মিডিয়ার ভূমিকা আলোচিত হয়। সভায় উপস্থিত এক মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে লাইসেন্স পেয়েছেন এমন টিভি চ্যানেলগুলো সারা দিন ধরে ব্রেকিং নিউজ, এইমাত্র পাওয়াসহ নানা ধরনের চমকপ্রদ বিষয় উল্লেখ করে দেখিয়ে থাকে। এতে কোন একটি জেলার মৃত্যুর খবর সারা দিন ধরে দেখানো হয়। আবার সংঘাত, সংঘর্ষের খবর সারা দিন ধরে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে দেখানো হলে এর খারাপ প্রভাবও পড়ে। এটা রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। ওই মন্ত্রীর বক্তব্যের পর সদ্য নিয়োগ পাওয়া এক সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, মিডিয়াকে চেপে ধরার চেষ্টা করা হলে সারা বিশ্বে তার খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। তখন বাধ্য হয়ে আমাদের পিছু হটতে হবে। তার চেয়ে ভাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে তাদেরকে বিষয়গুলো বোঝানো। এজন্য তথ্য মন্ত্রণালয় দায়িত্ব নিয়ে কাজটি করতে পারে। মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এক মন্ত্রী অভিযোগ করেন, বিজিবি ও র্যাব তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছে না। কিছু কিছু এলাকায় তাদের ঢিলেমি ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। ওই মন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হওয়ার আগেই দু’জন মন্ত্রী অনেকটা কেড়ে নিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে বেশ ভাল ও সুচারুভাবে দায়িত্ব পালন করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঝামেলা রয়েছে এটাই মাননীয় মন্ত্রী বোঝাতে চেয়েছেন। মন্ত্রীদের এমন বক্তব্যের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সভায় দাবি করা হয়- নাশকতার সঙ্গে পুলিশ ও রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এ বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সভায় চলমান সন্ত্রাস মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে। এজন্য সন্ত্রাসবিরোধী বর্তমান কমিটি থেকে জামায়াত-বিএনপির সদস্যদের বাদ দিয়ে সুশীল সমাজ, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ত করে নতুন কমিটি করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সচিবালয়ে বৈঠক শেষে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, চলমান সহিংস রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে করণীয় ঠিক করেছে সরকার। বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক, সুস্থ ও সক্রিয় রাখতে কতিপয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভূমি, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শামসুল হক টুকু এবং আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামসহ ১১ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। ওদিকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিরাপত্তা প্রদান সংক্রান্ত চিঠিটি পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্বাচন কমিশনের চিঠির সঙ্গে ইনুর জমা দেয়া চিঠির কপি সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই চিঠিতে তিনি তার গ্রামের বাড়ির নিরাপত্তা চেয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি
ওদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জরুরি বৈঠকে সারা দেশে সন্ত্রাস ও নাশকতা প্রতিরোধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিকেও সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সিটি ও পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে এ নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। কেউ নির্দেশনা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, জামায়াত-শিবির যেসব এলাকায় বেশি নাশকতা করছে, তা মোকাবিলার জন্য বিশেষ কৌশল নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজনে ওই সব এলাকায় আরও বিজিবি সদস্য পাঠানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে তা সীমান্ত এলাকায় সুরক্ষা করেই সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বিজিবি পাঠানো হবে। এ ছাড়া কোন এলাকায় নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিকে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের কথা বলা হয়। আগাম গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। এমনকি দেশের যেসব এলাকায় জামায়াত-শিবির ধারাবাহিক সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, তাদের তালিকা ও গ্রেপ্তারের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে কেউ যদি নৈরাজ্যকারীদের সহায়তা করে, তাদের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এতে আসন্ন নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়েও আলোচনা হয়। সামপ্রতিক সময়ে জামায়াত-শিবিরের নাশকতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা নিয়ে একাধিক সদস্য প্রশ্ন করেন। রাজধানীতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও জামায়াত-শিবিরের নাশকতা হচ্ছে কেন? কোন কোন জেলায় জামায়াত-শিবিরের ব্যাপক নাশকতা দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এসব জেলার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সুপারদের বিরুদ্ধে বৈঠকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। জবাবে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোরভাবে ওদের প্রতিহত করতে হবে।
উৎসঃ manabzamin
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন