শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩


জঙ্গি সংগঠনগুলোকে এক প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা 27 Dec, 2013 প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনগুলোর জঙ্গিরা। এই নিয়ে সবগুলো সংগঠনকে একই প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা চলছে। এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত নেতা মেজর জিয়াউল হক। আজ শুক্রবার শক্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকার মুক্তাঙ্গনে জমায়েত হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে হিযবুত তাহরীর। জঙ্গিদের প্রকাশ্যে আসার চেষ্টার ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাও চাঞ্ছল্যকর তথ্য পেয়েছেন। গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছেন, জামায়াতে আরাকান নামে আরেকটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে দেশে। এই সংগঠনের সদস্যরা কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ আরও কয়েকটি এলাকা থেকে কর্মী সংগ্রহ করছে। জঙ্গিদের এখন লক্ষ্য, কিছু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা। আশংকা করা হচ্ছে, এই লক্ষ্যে তারা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ওপর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে। তাছাড়া ভোট গ্রহণের দিনও বিশৃংখলা সৃষ্টি করতে পারে বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য এসেছে। সম্প্রতি ঢাকার গোপীবাগে সিক্স মার্ডারের সঙ্গেও জঙ্গিরা জড়িত আছে। ৪২টি সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকু যুগান্তরকে বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের পাশাপাশি জঙ্গিরাও নাশকতার চেষ্টা করছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তবে তাদের কঠোর হাতে দমন করতে আইনশৃংখলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জামায়াতে আরাকান নামে একটি জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় আছে। জঙ্গিদের লালন-পালন করেছেন বিগত সরকারের লোকজন। মূলত তাদের আসকারা পেয়েই জঙ্গিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। আবারও তাদের ইন্ধনে জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে গেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জামাআতুল মুজাহিদীন জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ হুজি, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি আইডিপি ও হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করার পরও তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড একটুও থেমে থাকেনি। বাকি আটটি জঙ্গি সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করার কথা থাকলেও তা ফাইলবন্দি হয়ে আছে। এসব সংগঠনের সদস্যরা গোপনে আগের চেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গোয়েন্দা সংস্থার কাছে তথ্য এসেছে, হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ, জেএমবি, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ, শাহাদত-ই আল হিকমা বাংলাদেশ, হিজবুত তাওহিদ, ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি), তৌহিদী ট্রাস্ট, তামির উদ দ্বীন বাংলাদেশ ও আল্লাহর দলের সদস্যরা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে। সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃৃত মেজর জিয়াউল হক তাদের জন্য বিভিন্ন কৌশল তৈরি করছেন। জঙ্গি সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত বৈঠক করছেন। কিছুদিন আগে টেকনাফে একটি নির্জন স্থানে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে মেজর জিয়াসহ ১০ শীর্ষ জঙ্গি নেতা উপস্থিত ছিল বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, জেএমবির শীর্ষ নেতা মাওলানা সায়েম ও মোস্তাফিজ নিজ উদ্যোগে জঙ্গিদের এক করার চেষ্টা করছে। তারা বলে, সরকার আমাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে। আর আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকব, তা হয় না। সূত্র জানায়, জামায়াতে আরাকানের সদস্যরা কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, মিয়ানমার সীমান্তসহ আরও কয়েকটি স্থানে সক্রিদ্ধয় আছে। তাদের ব্যানারে রোহিঙ্গারা কাজ করছে। গোয়েন্দারা নিশ্চিত হয়েছে, জঙ্গিরা কেউ রিকশাচালক, কেউ টমটম চালক আবার কেউ ভিক্ষুক সেজে দাওয়াতি কার্যক্রম চালাচ্ছে। আফগানিস্তান ফেরত ৪৮ জনকে খুঁজছে পুলিশ : আফগান যুদ্ধে অংশ নেয়া ৪৮ মুজাহিদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। তাদের বর্তমান অবস্থান, কার্যকলাপ, রাজনৈতিক পরিচিতিসহ বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের একটি তালিকা করা হয়। তালিকাভুক্তরা হল- মাওলানা শহীদুল ইসলাম, মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান, মুফতি মোহম্মদ হাসান, মুফতি আবদুর রশিদ, মুফতি সাইদ নুর, মুফতি রুহুল আমিন, মাওলানা সাইফুল ইসলাম, মাওলানা ইমরানুজ্জামান, মাওলানা আবুল বাশার, মাওলানা নুরুল আমিন, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা সোহাইব হোসেন, এরশাদ হোসাইন, মাওলানা আবু তাহের, মুফতি দেলোয়ার হোসেন, মাওলানা আহমদ উল্লাহ ইমাম, মাওলানা আবদুল হাই ফারুকী, মাওলানা ফসিহ উদ্দিন, মাওলানা আবু জাফর, মাওলানা ইমরান হোসাইন ইশান, সামসুদ্দিন খন্দকার, মাওলানা আবদুর রহমান, মাওলানা আবদুল মান্নান, মাওলানা মাসুদ ও মাওলানা আবুল বাসার, ফারুক হোসেন, আবদুন নূর, সিকান্দার চৌধুরী, মাওলানা নুরুল্লাহ কাশেমী, হাফেজ মাওলানা মুফতি বখতিয়ার হোসেন, নুরুল ইসলাম, ইয়াকুব আলী প্রমুখ। কালো তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪২টি সংগঠনকে কালো তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ইতিমধ্যে গোয়েন্দারা কাজ শুরু করে দিয়েছে। সংগঠনগুলো হল- খতমে নবুয়ত আন্দোলন, জামিউতুল ফালাহ, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, মিয়ানমার লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা লিবারেশন ফোর্স, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্ডেন্স পার্টি, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট, মুসলিম মিল্লাত, আল হারাত-আল-ইসলামিয়া, ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ফ্রন্ট, তৌহিদী জনতা, জুমাআতুল আল সাদাত, তামির উদ-দ্বীন বাংলাদেশ, জামাত-আস-সাদাত, আল খিদমত, হিজবুল মাহদি, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, দাওয়াতি কাফেলা, বাংলাদেশ এন্টি টেররিস্ট পার্টি, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল ইসলাম মার্টেনস ব্রিগেড, সত্যবাদ, মুসলিম মিল্লাত, শরিয়া কাউন্সিল, জমিয়ত আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস আন্দোলন বাংলাদেশ, তাজির বাংলাদেশ, হায়াতুর ইলাহা, ফোরকান মুভমেন্ট, জামিউতুল এহজিয়া এরতাজ, আনজুমানে তালামিজ ইসলামিয়া, কলেমার জামাত, তাজির বাংলাদেশ, সাহাবা পরিষদ, কাতেল বাহিনী, মুজাহিদিন-ই-তাজিম, এশার বাহিনী, আল ফাহাদ, হরকাতুল মুজাহিদিন, জাদিদ আল কায়দা। হিযবুত তাহরীরের শক্তি পরীক্ষা আজ : আজ দুপুরে হিযবুত তাহরীর মুক্তাঙ্গনে শোডাউন দেবে। ইতিমধ্যে তারা সারা দেশে পোস্টারিং করেছে। পুলিশ বাধা দিলে হিযবুত সদস্যরা বাধা দেবে বলে জানান এক সদস্য। ওই সদস্য বলেন, আমরা কোনো জঙ্গি সংগঠন নই। অথচ সরকার আমাদের নিষিদ্ধ করেছে। এর জবাব অবশ্যই আমরা দেব। জুমার নামাজের পর পরই আমরা জমায়েত হব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গিদের ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য দিয়ে আমাদের অবহিত করছে। তারা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টায় রয়েছে। গোপীবাগের ৬ হত্যায়ও জঙ্গিদের হাত রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে পুলিশ ও র‌্যাব চেষ্টা চালিয়ে আসছে। উৎসঃ যুগান্তর Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন