বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৩


ভারতীয় বাবুদের মুখোশ উন্মোচিত : গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন 26 Dec, 2013 যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেফতার নিয়ে ভারত এখন সরগরম। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারত সরকার কিংবা রাজনীতিবিদ, মিডিয়া কখনো এমন সোচ্চার হয়নি। তাদের সবাই একবাক্যে তাদের কূটনীতিকের পক্ষাবলম্বন করছে। তবে প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ান বিষয়টির আরেকটি দিক তুলে ধরেছে। তাদের মতে এই ঘটনায় ভারতের নির্যাতিত নিম্নবর্গের মানুষের বঞ্চনা, নির্যাতনের বিষয়টি লাইমলাইটে এসেছে। তবে ভারতের মধ্যবিত্ত মনে হয় এমনই। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি কাউকে বঞ্চিত করছে, সেটা বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে না, তাকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে কেন ছাড় দেয়া হলো না- সেটাই তাদের বড় প্রশ্ন। ডানপন্থী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস- সব দল যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় নারী কূটনীতিকের প্রতি মার্কিন সরকারের আচরণের তীব্র নিন্দা করছে। ভূয়া ভিসা নথি দাখিলের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ভারতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও নারীবিষয়ক ডেপুটি কনস্যাল দেবযানী খোবরাগাড়েকে গ্রেফতারের পর হাতকড়া পরানো হয়েছে, তার পোশাক খুলে তল্লাসি চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এই জুনিয়র কূটনীতিক পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সুরক্ষা ভোগ করেন না। ফলে আদালত তাকে গ্রেফতার এবং তল্লাসি করার অধিকার রাখে। তবে একটি বিষয় ভারতে অনেকাংশেই মিস হয়ে যাচ্ছে। দেবযানী কিন্তু এক্ষেত্রে ভিক্টিম নন, তার গৃহকর্মীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর একটিও এই ঘটনার নেপথ্য কাহিনী বলছে না। ওই কূটনীতিক যে তার গৃহকর্মীকে মাত্র ঘণ্টায় ৩.৩১ ডলার পারিশ্রমিক দিতেন, সেটা তারা চেপে যাচ্ছে। তারা বলছে না যে দেশে ন্যূনতম বেতন ৭.২৫ ডলার এবং ওই কূটনীতিক সরকারি নথিতে উল্লেখ করছেন, তিনি আলোচিত গৃহকর্মীকে ৯.৭৫ ডলার করে বেতন দেন। আমেরিকা সাম্যবাদী রাষ্ট্র নয়। তবে তারা অন্তত সেদিকে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে ভারতের শিক্ষিত ও শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রতিনিধিরা বিদেশে তাদের প্রতি আচরণের ব্যাপারে যে স্পর্শকাতরতার পরিচয় দিয়ে থাকেন, সেটা যারা জানেন, তারা ভারতে দেবযানী নিয়ে যে হইচই হচ্ছে, তাতে বিস্মিত নন। ভারতের হর্তাকর্তারা ভিভিআইপি মর্যাদা দাবি করে থাকেন। তাদের জন্য কোনো ধরনের নিরাপত্তা চেকপয়েন্ট রাখা চলবে না, অত্যন্ত ব্যস্ত সময়েও অন্য সব গাড়ি থামিয়ে তাদের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করে বাতি ও হুইশেল লাগানো তাদের গাড়িগুলো দ্রুত এগিয়ে যাবে এমনটাই তারা চান। ভারতীয় পার্লামেন্টের সাবেক স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জি একবার অস্ট্রেলিয়া সফর বাতিল করেছিলেন। কারণ বলা হয়েছিল যে তাকে বিমানবন্দরের সিকিউরিটির মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তিনি অপমানিত হয়ে ভারতে ফিরে আসেন। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জন্য ভারতীয় বাবুর তিড়িং বিড়িং চালচলন হবে অকল্পনীয়। ভারতের গৃহকর্মীরা (আয়া আর ভাইয়া) কিভাবে জীবনযাপন করে, তা একটু ভেবে দেখুন। তারা সবার আগে ঘুম থেকে জাগে, ঘুমায় সবার শেষে। চাকরবাহিনী বাস করে ঘিঞ্জি বস্তিতে। তারা তাদের নিয়োগকর্তাদের বাচ্চা রাখা, রান্নাবান্না করা, ঘর গোছানো, কাপড় ধোয়াসহ সব কাজই করে। ক্রীতদাসের মতো খাটুনির বিনিময়ে তারা পায় অতি নগণ্য মজুরি। কোনো ধরনের চুক্তি বা সুরক্ষার সুযোগও নেই তাদের। ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সেবকদের কণ্ঠস্বরও নেই। তারা আসে সাধারণত নিম্নবর্ণ থেকে। তাদের মনোভাব ও স্বার্থ বিবেচনায় আনা হয় না। মধ্যপ্রাচ্যে এসব গৃহকর্মী যখন নানাভাবে লাঞ্ছিত হয়, তখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে গেলে তাদের সহায়তায় কোনো কাজই করে না। আমেরিকানদের বিষয়টি বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গিতে উপলব্ধি করতে হবে। ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণী (ভারতীয় মিডিয়া চ্যানেলগুলোর পাঠক ও দর্শক) এখন ঝামেলায় রয়েছে। অর্থনীতি বেশ নাজুক, মুদ্রাস্ফীতি উচ্চ, বাড়ি-গাড়ি করার স্বপ্ন ফিকে হয়ে পড়ছে। পরাশক্তি হওয়ার অভিলাষও সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। বামন হয়ে চাঁদ ধরার খায়েশ যে পূরণ হওয়ার নয়, সেটাও তারা বুঝে গেছে। দেবযানী খোবরাগাড়েরা শক্তিধর সরকারি কর্মকর্তাদের পরিবার। তার বাবা উত্তম খোবরাগাড়ে ছিলেন মুখ্যসচিব (উপজাতীয় উন্নয়ন বিভাগের)। তিনি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। বেস্টের (ব্রিহানমুম্বাই ইলেকট্রিক সাপলাই অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট আন্ডারটেকেন) জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে তিন বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি ব্যাপক সংস্কার সাধন করেছিলেন। সম্প্রতি বহুল প্রচারিত ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় তাকে নিয়ে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে তাকে ভারতের প্রবৃদ্ধি মেশিনের ৪০ চালকের অন্যতম হিসেবে অভিহিত করে। ভারতের ছোট পদে কর্মরত কূটনীতিকদের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা দেয়া হয় না। যুক্তরাষ্ট্রে মানবপাচারকারীদের প্রতি যে ধরনের আচরণ করা হয়, দেবযানীর ব্যাপারেও তা করা হচ্ছে। আর তাতেই ভারত ফুঁসে ওঠেছে। বিশেষ সুবিধাভোগীর ক্লাসিক উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে এই ঘটনাটি, যার নজির সম্ভবত আর নেই। ভারতের যে অংশটি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তাদের শ্রেণীভুক্ত মুষ্টিমেয় লোকের স্বর্গীয় অধিকার যেকোনো মূল্যে সংরক্ষিত রাখতে হবে- এটা তাদের জন্য লজ্জাজনক বিষয় বিবেচিত হতে পারে। তবে নিম্নশ্রেণীর সাধারণ মানুষের জন্য এই গ্রেফতার তাদের করুণ অবস্থা সম্পর্কে সম্ভব সেরা বিজ্ঞাপন। উৎসঃ নয়া দিগন্ত Share on facebook Share on email Share on print 15

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন