সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩


রুহুল হকের স্ত্রীর ব্যাংক ব্যালেন্স বেড়েছে ১৬৫ গুণ 24 Dec, 2013 সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স ৫ বছরে বেড়েছে ১০ গুণ। ব্যাংক ব্যালেন্সের অধিকাংশ তার স্ত্রী ইলা হকের নামে। নির্বাচন কমিশনে জমাকৃত সম্পদের বিবরণী সংক্রান্ত হলফনামা থেকে এ তথ্য বেরিয়েছে। ২০০৮ ও ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর প্রদত্ত দুটি হলফনামা যাচাই করার সময় সম্পদ বৃদ্ধির এ চিত্র পাওয়া গেছে। হলফনামা দুটি বলছে, পাঁচ বছর আগে নির্বাচনী মাঠে নামার সময় রুহুল হক এবং তার স্ত্রীর নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকা ছিল মাত্র ৯২ লাখ ৩৬ হাজার ১০৮ টাকা। এখন তাদের ব্যাংক ব্যালেন্সের পরিমাণ ১০ কোটি ১৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭৬৩ টাকা। ২০০৮ সালে স্ত্রী ইলা হকের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল মাত্র ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৩০ টাকা। এখন ৭ কোটি ৫৩ লাখ ১১ হাজার ২৪০ টাকা। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রায় ১৬৫ গুণ। অন্যদিকে রুহুল হকের ব্যাংক ব্যালেন্স ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ৮৮ লাখ টাকা। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সদ্য বিদায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক ২০০৮ সালে ১৪ দলীয় মহাজোটের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন (সাতক্ষীরা-৩)। এরপর তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২১ নভেম্বর নির্বাচনকালীন সরকার গঠন পর্যায়ে তিনি মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, সাতক্ষীরা-৩ আসনে রুহুল হক ছাড়া অন্য কোনো বৈধ প্রার্থী এবার নেই। অর্থাৎ, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তিনি। মহাজোট সরকারের ৫ বছর সময়কালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাত ছিল নানা কারণে আলোচিত। এ সময়ে স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয়ভাবে কমপক্ষে ৩টি আন্তর্জাতিক পদকে ভূষিত হয় বাংলাদেশ। এসব সাফল্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ বিভিন্ন অধিদফতরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে একইভাবে সমালোচিতও হয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ অন্যরা। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, এ খাতে সাফল্য ও সমালোচনা বয়ে চলেছে সমান্তরাল। নির্বাচন কমিশনে এবার সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক যে হলফনামা জমা দিয়েছেন তাতে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে ২০০৮ সালের তুলনায় তার অস্থাবর সম্পদ ৪ গুণ বেড়েছে। ২০০৮ সালে তিনি এবং তার স্ত্রীর মোট অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি টাকার কিছু বেশি। ২০১৩ সালে সম্পদের পরিমাণ ১৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যালেন্স হিসাবে রাখা আছে। এককভাবে তার স্ত্রী ইলা হকের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে গেছে ৮ গুণ। আগে তার নামে অস্থাবর সম্পত্তি ছিল মোট ৯৫ লাখ টাকা মূল্যের। এখন তা ৮ কোটি ৩৯ লাখ ছাড়িয়েছে। পাঁচ বছরে সম্পদ ফুলে-ফেঁপে বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে বক্তব্য জানতে ডা. রুহুল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোনে গতকাল বিকালে কয়েক দফা চেষ্টা করা হয়। কেউ ফোন রিসিভ করেননি। একপর্যায়ে মুঠোফোনে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। কিছুক্ষণ পর আবার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। রুহুল হকের নামে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এফডিআরসহ অন্যান্য স্থায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। আগে ছিল ১ কোটি ৩৩ লাখের কিছু বেশি। এখন তা ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। পেশাগত জীবনে অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক স্বনামধন্য অর্থোপেডিক সার্জন। ২০০৮ সালে পেশা হিসেবে লেখা হয়েছিল ‘ডাক্তার’। এবারের হলফনামায় পেশার স্থানে কিছুই লেখা হয়নি। হলফনামায় ৬টি উৎস থেকে আয় দেখানো হয়েছে। কৃষি খাত থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয় ৫৫ হাজার টাকা। বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া বাবদ আয় হচ্ছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় হয় বছরে ২২ লাখ ২৩ হাজার ৪০০ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে আয় ৩৪ লাখ ২০ হাজার ৭৪১ টাকা। পেশা থেকে গত পাঁচ বছরে আয়ের স্থলে লেখা হয়েছে ‘প্রযোজ্য নহে’। সংসদ সদস্য হিসেবে চাকরি বাবদ আয় দেখানো হয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসাবে ২০০৮ সালের হলফনামায় যতটুকু উল্লেখ আছে এবার অবশ্য সেখানে খুব বেশি হেরফের দেখা যায়নি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হকের এবারের হলফনামায় দায় হিসেবে স্ত্রী ইলা হকের কাছে ১ কোটি টাকা দায় দেখানো হয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ডা. রুহুল হকের প্রদত্ত তথ্য বলছে, তার হাতে নগদ টাকা আছে ২৯ হাজার ৪৩২। ৩০ জুন ২০১৩ পর্যন্ত তার নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২ কোটি ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ৫২৩ টাকা। বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ারের পরিমাণ ২ কোটি ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ৫০৮ টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৫ হাজার ৯২২ টাকা। তার কাছে থাকা গাড়ির মূল্য বাবদ দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। স্বর্ণালংকার আছে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের। ইলেকট্রনিক সামগ্রীর মূল্য ৬০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে নগদ টাকা, পোস্টাল সেভিংসসহ স্থায়ী বিনিয়োগ এবং স্বর্ণালংকার বাবদ প্রায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা আছে। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবশ্য কোনো ফৌজদারি মামলা চলমান নেই। ২০০৮ সালেও কোনো মামলা ছিল না। উৎসঃ যুগান্তর Share on facebook Share on email Share on print 9

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন