শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪


শাহবাগে গিয়ে আমি জীবনের সবচেয়ে বড় নেককাজ করেছি : মাও. ফরিদ উদ্দিন মাসউদ
19 Apr, 2014 মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম। দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের মধ্যে অন্যতম। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক, বিশিষ্ট লেখক ও অনুবাদক এ আলেম আলোচনা সমালোচনায় উঠে আসেন প্রায়শই। সর্বশেষ গণজাগরণ মঞ্চের সাথে তার একাত্মতা ঘোষণা অতীতের চেয়ে অনেক বেশী বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কেন তার এই অবস্থান? কোন দৃষ্টিতে তিনি দেখছেন হেফাজত ও গণজাগরণ মঞ্চকে, তা পাঠকের সামনে তুলে ধরতে সাপ্তাহিক লিখনীর পক্ষ থেকে তার মুখোমুখি হয়েছিলেন এহসান সিরাজ ও মনযুরুল হক। লিখনী : হেফাজতের লংমার্চ তার বয়স এক বছর পার করেছে ওদিকে গণজাগরণ মঞ্চও ইতোমধ্যে বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান করেছে এ নিয়ে আপনার সার্বিক মতামত জানতে চাচ্ছি। ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : গণজাগরণের উত্থানটা ছিলো মূলত জামায়াত ইসলামীকে কেন্দ্র করে। দুবার গিয়েছি আমি শাহবাগে। আমি সেখানে গিয়ে এ কথা বলিনি, আমি তাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছি, তাদের সব দাবিকে আমি সমর্থন করেছি বা একাত্মতা ঘোষণা করেছি। প্রথমবার যখন গিয়েছি তখন সেটাকে ফলাও করা হয়নি কারণ তখন আমি কিছু বলিনি। যখন আমি জামায়াতের বিরুদ্ধে আর মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ কথা বললাম এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে দোয়া করলাম তখন সারা বিশ্বে সেটা আলোড়ন তুললো। অমনি আমাকে নাস্তিক বলা হলো। এরকম নাস্তিক আমাদের আকাবির যেমন আবুল হাসান আলি রহ. অনেক আগে থেকেই ছিলেন। কেনো গেলাম? যেহেতু তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং জামায়াতের বিরুদ্ধে বলছে। আর আমিও জামায়াত বিরোধী তাই ওদের সাথে আমার এটা একটা বিষয়ে মিল হয়ে গেলো। আর সারা বিশ্বের নজর তখন শাহবাগে। আমি ভাবলাম, এই সুযোগ আমি ছাড়বো কেনো? ঘরে বসে বললে তো আমার কথা কেউ শুনবে না। আমি ইস্তেখারা করেছি এবং মুরব্বীদের সাথে পরামর্শ করেই ঝুঁকিটা নিয়েছি। সুতরাং আমার সঙ্গে অনেক মুরব্বী শামিল ছিল। শুধু এখানকার নয়, দেশের বাইরের মুরব্বীরাও আমাকে সমর্থন জানিয়েছেন। কোনো জাগতিক কারণে নয় দ্বীনি উদ্দেশ্যেই আমি সেখানে গিয়েছি। টিএসসিতে একটা মিটিং ডাকা হয়েছিল। ওই শাহরিয়ার কবির, আনিসুজ্জামান, কবির চৌধুরী তাদের সামনে বলেছি যে ধর্মকে কখনো নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী বানাবেন না, বরং ধর্ম আপনাদের কেবল সহায়কই নয়, ধর্ম হলো গড়ে তোলার মাধ্যম। তো আমি তাদের কানে এই কথাগুলো পৌঁছাবো না, একজন আলেম তাদের কাছে এইসব কথা নিয়ে যাবে না, তাহলে কে যাবে? লিখনী : কিন্তু ব্লগে বা ফেসবুকে ইসলাম ও নবীকে নিয়ে কটূক্তির পরও কিভাবে আপনি সেখানে গেলেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমি শাহবাগে যখন গিয়েছি, তখন তো ব্লগের সেই কটূক্তি বিষয়টা ছিলোই না। সেটা প্রকাশ হয়েছে রাজীব হত্যার পর। হ্যাঁ, ব্লগারদের কর্মকাণ্ড প্রকাশ হওয়ার পর আমি যেতাম কিনা সেটা তখনকার প্রশ্ন। তখন গেলে না হয় আমাকে দোষী করা যেতো। বরং ব্লগাররা যখন এটা করে তখন তাদের বিরুদ্ধে প্রথম সমাবেশ আমি করেছি। সর্বপ্রথম আমিই এই নাস্তিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে বলেছি এদের কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। আহমদ শফী সাহেব তখনো বলেননি। তাহলে আমার দোষটা কোথায়? সবাই খুব সমালোচনা করে আমার, হুজুর শাহবাগে কেনো গেলেন? আমি বলি, এটা আমি জীবনের সবচেয়ে বড় নেককাজ করেছি। লিখনী : মুক্তিযুদ্ধকে তো ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড় করাবার একটা চেষ্টা চলে... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আপনি যখন বাংলাদেশে বসে দ্বীনের কাজ করবেন তখন বাংলাদেশের অস্তিত্ব স্বীকার করেই সেটা করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধকে স্বীকার করতে হবে। অনেকেই নামাজ পড়ে যুদ্ধে গেছেন, কুরআন পাঠ করে যুদ্ধে গেছেন- এসব তো অবশ্যই ঠিক, এর পরও হাফেজ্জি হুজুর রহ. এর একটা সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এটা জালেম আর মজলুমের লড়াই। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী, তার সমর্থকরা এবং পাকিস্তান সরকার এটাকে ইসলাম ও কুফুরের লড়াই বলে প্রচার করেছে। আরেকটা বিষয় হলো ইসলাম একটি অসাম্প্রদায়িক উদার ধর্ম- এটা আমার বিশ্বাস। ইসলামের মতো অসাম্প্রদায়িক আর কোনো ধর্ম নেই। ইসলাম সংকীর্ণ নয়, আর পৃথিবীর তাবৎ ধর্ম হলো সংকীর্ণ। ইসলামের এই উদারতার ফলেই ভারত উপমহাদেশে ইসলাম সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। নইলে যদি এই উদারতাকে উপেক্ষা করে মুসলিম শাসকবৃন্দ একটু শক্তি প্রয়োগ করতেন, তবে ভারতে একটা হিন্দুও থাকতে পারতো না। ইসলামের এই উদারতার সম্প্রসারণ আমি চাই। এর মাধ্যমেই অমুসলিমদের কাছে টানা সম্ভব। লিখনী : আপনি হেফাজত বিরোধী বলে সবাই জানে... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : হেফাজতের আন্দোলনকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু তার প্রক্রিয়াটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। বর্তমান অবস্থায় তাদের উচিত ছিলো মওদুদির ব্যাপারে কথা বলা। এর ফলে বিরোধীরা ধরে নিয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। আমি বলি আমার সমালোচনা করার আগে তোমরা আমার মনোভাবটা বুঝে নিতে চেষ্টা করো। এমনিই আমাকে নাস্তিক বলা শুরু করবে, তাহলে তো মুমিনের সংখ্যা কমে যাবে। হ্যাঁ, সেখানে আলেমদের যাওয়া উচিত ছিলো এবং সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিলো। এজন্য আমি আহমদ শফী সাহেবের খুবই ভক্ত। আল্লাহ তায়ালা তাকে রহম করুন। জান্নাতুল ফেরদাউসের উঁচু মাকাম দান করুন। তাকে যদি এ সময় আল্লাহ না দাঁড় করাতেন তবে শাহবাগিদের বড় বাড় বেড়ে যেতো। তবে আমি বলবো এটাই মুমিনের শান হলো মানুষকে কথা বলার সুযোগ দেয়া। ইমরানরা যখন তাদের সাথে দেখা করতে চাইলো, তখন তাদের একটা সুযোগ দেয়া দরকার ছিলো। হয়তো আশপাশের মানুষ তাকে ভুল বুঝিয়েছে। আর সবচেয়ে কষ্ট আমার এইটা, তার আন্দোলনটাকে তিনি কাছে রাখতে পারেননি। জামায়াতের ফায়দা লুটার সুযোগ হয়ে গেছে। আমি বারবার তাকে বলেছি, আপনার আন্দোলনের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমি তো একটা খোলা চিঠিও তাকে দিয়েছি। লিখনী : তেরো দফা নিয়ে কোনো আপত্তি? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : না, একটা সম্পর্কেও নয়। কিন্তু এমন দফা তেরোটা কেনো, একশ তেরোটা দেয়া যেতো- ইসলামের এখন এতো বেশী প্রয়োজন। কিন্তু উচিত ছিলো এটা বোঝা, কোন বিষয়টা আমি এখন চাই, আর কোনটা দশ বছর পরে চাই। হেফাজতের আন্দোলনের ক্ষেত্রে এখানে সবচেয়ে বড় ভুল হয়েছে। কারণ এ গভর্নমেন্টের খোদা তো আল্লাহ তায়ালা নয়, তাদের খোদা হলো পাবলিক ওপিনিয়ন। আমরা এভাবে দুটি সুযোগ হারিয়েছি। একটা ছিলো হাফেজ্জি হুজুরের সময়। তার ছেলেদের কারণে সেটা বিফলে গেছে। আরেকটা হেফাজতের সময়। সরকার দাবি মানতে প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তেমন ভুলের কারণে এখন তাদেরই বলতে হচ্ছে, না আমরা আওয়ামী লীগকে শত্রু মনে করি না। তারা আমাদের বন্ধু... আরো কত কী! আমি তো জীবনে আওয়ামী লীগকে পছন্দ করিনি, আর করবোও না। আমি তো শেখ হাসিনার সামনেই বলেছি, আমি তাকে পছন্দ করি না, আপনার দলকেও না। আর হেফাজত এভাবে স্যারেণ্ডার করলো? এটা কত বড় ইউটার্ন? লিখনী : অনেকেই আপনাকে আওয়ামী লীগের দলীয় লোক মনে করে.... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমি চ্যালেঞ্জ করে বলি, আমার এ বয়স পর্যন্ত, এখন আমার বয়স ৬৫, আপনি একটা আলামত দেখান, কোনোদিন আমি আওয়ামী লীগের কোনো মিটিংয়ে গিয়েছি,অথবা কোনো ইলেকশনে আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলেছি। অথচ আওয়ামী লীগে বিরুদ্ধে বলেছি এরকম বহু প্রমাণ আছে। এই যে একতরফা নির্বাচন হলো, আমি বলেছি, দুঃশাসন শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রীর সামনে বলেছি। অনেকেই অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলো। এখন আমি আমার কথা প্রচার করে বেড়াবো নাকি? আর আমি তো রাজনীতিও করি না। ইলেকশন করি না যে, আমাকে কয়জন সমর্থন করলো বা না করলো দেখতে হবে। আমি যা করেছি বা বলেছি, আল্লাহকে হাজির নাজির রেখেই বলেছি। লিখনী : ভবিষ্যতে কি রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা আছে? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : না। আমি রাজনীতি করিনি। রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা নেই, না আসারও ইচ্ছা নেই। এটা মানুষকে পরিস্থিতি তৈরি করে। বর্তমানে রাজনীতিকে আমি জায়েজ মনে করি না। এটা হলো পলিটিক্স। ইসলামে রাজনীতি আছে এটা আমি স্বীকার করি। তবে বর্তমান রাজনীতির যে রূপ, এটা ইসলাম সমর্থন করে বলে মনে করি না। লিখনী : অভিযোগ আছে, একটি রাজনৈতিক দল আপনার কারণে দুইভাগ হয়ে গেছে... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমার কারণে হয়নি, ওদের কারণেই ওরা দুইভাগ হয়েছে। জমিয়তে উলামা জামায়াতের ব্যাপারে শিথিলতা করার কারণে এটা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই দল ছিল। এক ভাগের নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আবদুল হক সাহেব, আরেকভাগে ছিলেন মাওলানা মুহিবুদ্দিন খান। মুহিবুদ্দিন খান সাহেব তো আগে থেকেই জামায়াতের ব্যাপারে নমনীয় ছিলেন, এখনো জামায়াতের সাথে তার উঠাবসা আছে। আর এখন তো আওয়ামী লীগের সঙ্গেও তার ভালো সম্পর্ক। লিখনী : ৫ মে যাদের হত্যা করা হলো, হেফাজত তাদের শহীদ বলেছে, আপনি কি মনে করেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমিও তাদের শহীদই বলবো। তারা মজলুম, আর ইসলাম হত্যার শিকার মজলুমদের শহীদ বলেছে। তাদের ভুল বোঝানো হতে পারে। তবে তাদের নিয়ত অনুসারে তারা শহীদ। কিন্তু কে কোন নিয়তে এসেছে তা তো বলতে পারি না। লিখনী : বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতেরা হেফাজত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা করছেন, এটা কী আপনার কাছে অন্য কোনো ইঙ্গিত বহন করে? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হলো শক্তির পূজারি। তারা হেফাজতকে একটা শক্তি মনে করে। সুতরাং এ নিয়ে তাদের একটা ভাবনা থাকবেই। লিখনী : কেউ কেউ ভাবছে, কওমী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেখতে মাদরাসায় মাদরাসায় যাচ্ছে তারা .... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : এই কওমী শব্দটা শুনলেই যেনো আমার কেমন লাগে। নইলে আমরাও তো সংখ্যালঘু না। আমরা তো আলাদা কোনো শ্রেণি না। এটা কত বড় কষ্টের কথা, আমাদের একটা সম্প্রদায়, আমাদের একটা পেশাজীবী বানিয়ে ফেলছে। যেমন সাংবাদিক সম্প্রদায় বা আইনজীবী শ্রেণি। তেমন এখন আমরাও। এই দৃষ্টিভঙ্গিটা যখন আমি দেখি, আমার কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক মনে হয়। কওমি মাদরাসা তো নির্দিষ্ট একটি শ্রেণি নয়, এরা সমাজের ওপর ব্যাপ্ত। আজকাল কওমী শ্রেণি, কওমি শ্রেণি বলা হয়, আমি এটাকে একটা যড়যন্ত্র বলবো। ওলামায়ে কেরামকে শক্তভাবে এটা প্রতিহত করতে হবে। লিখনী : বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আলেমদের কোন পথে এগুনো উচিত বলে মনে করেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : ওইপথে অগ্রসর হতে হবে যা ইমাম মালেক রহ. বলেছিলেন,আখেরি জমানায় উম্মতকে বাঁচার জন্য প্রথম যুগের উম্মতকে অনুসরণ করতে হবে। আর রাসুলের সেই হাদিস মনে রাখতে হবে, যে উত্তম কাজের জন্য মন্দকাজের মাধ্যম গ্রহণ করে সেখানে সফলতা আসবে না। আপনি কাজ করবেন ভালো কিন্তু পদ্ধতিটা খারাপ,এভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা হবে না। ইহুদি নাসারা যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে, আপনি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য সেটাই অবলম্বন করবেন, সেটা হবে না। লিখনী : ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আপনার মহাপরিচালক পদে নিয়োগের ব্যাপারে জোর গুঞ্জন উঠেছিল... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : হ্যাঁ গুঞ্জন উঠেছিল। গভর্নমেন্ট চেয়েছিলো। আমি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বর্তমান ডিজির অপসারণ চাই। কিন্তু সেখানে আমি নিজেকে চাই না। কারণ, আমি সে পদটাকে আমার নিজের তুলনায় অনেক কম মর্যাদার মনে করি। আর দুনিয়ার লাইনে মর্যাদাকে সামনে রাখতে হবে। যতি আখেরাতের ব্যাপারে হতো, তাহলে আমি মুয়াজ্জিন হতেও প্রস্তুত ছিলাম। তাছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনে আমার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা হলো, আপনার মতানুসারে আপনি সবকিছু করতে পারবেন না। এ জন্য এই বুড়ো বয়সে আর কম্পোমাইজ করে চলার ইচ্ছা আমার নেই। লিখনী : বায়তুল মোকাররমের বর্তমান খতিব অনেকের দৃষ্টিতে তিনি বিতর্কিত। বিষয়টা কীভাবে দেখেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : তার বিষয় হলো, তাকে তো নিয়োগ দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সে সময়ই আমরা মার খেয়েছি। সে সময়ই তাকে সরানো উচিত ছিলো। সে সময় তো আমিনী সাহেব অনেক শক্তিশালী ছিলেন। কিন্তু সুযোগ হারালে পরে তো আর হয় না। গভর্নমেন্টের চাকরি পাওয়া কঠিন, কিন্তু একবার হয়ে গেলে তাকে আর সরানো কঠিন। আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু গভর্নমেন্ট মনে করে যে সে একজন সুন্নি মুসলমান। হাসিনা নিজেকেও বলে সে সুন্নি মুসলমান। সে তাকে তো বেদাতি মনে করে না। এজন্য হাফেজ্জি হুজুরকেও হাসিনা শ্রদ্ধা করেন, তিনি সুন্নি ছিলেন। কাদিয়ানিদের একই কারণে অপছন্দ করেন। লিখনী : সমালোচনা আছে, আপনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলে থাকেন... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : হ্যাঁ, এটাতো দোয়া। আমি বুঝি না, মৌলভিরা এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি কেনো করে? রহমাতুল্লাহি আলাইহি কেবল অলিদের জন্য খাস, এমন তো নয়। যে কোনো মুসলমানের জন্য হতে পারে। আর এই অলি, যেমন খাজা মাইনুদ্দিন চিশতি রহ. তিনি যে জান্নাতি হবেন তা কেউ নিশ্চিত বলতে পারে? নিশ্চিত জান্নাতি বা জাহান্নামি হবেন, যাদের সম্পর্কে রাসুল স. বলে গেছেন। আমি সরাসরি ফতোয়া দিচ্ছি না, তবে আমার মতে যেকোনো মুসলমানদের ক্ষেত্রে বলা যাবে। তাতে শরিয়তের কোনো বাধা নেই। লিখনী : বাংলাদেশে ব্লাসফেমি আইন চালুর দাবি উঠেছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে। আপনি কী বলেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : এটা বুঝে না মৌলভিরা। ব্লাসফেমি আইন হলো খৃষ্টানদের আইন । আমরা কি খৃষ্টানদের আইন চালুর দাবি করবো? আমরা শরিয়ত চালু করতে চাই। আমরা ব্লাসফেমি চাই না। শরিয়ত যা চেয়েছে, আমরা তাই-ই চাই। লিখনী : হেফাজতের সঙ্গে আপনার যে দুরত্ব, কোনো আপোষের সম্ভাবনা আছে কি? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমার তরফ থেকে কোনো দুরত্ব তৈরি হয়নি। আমি তাদের শ্রদ্ধা করেছি, এখনো শ্রদ্ধা করি। লিখনী : কওমি শিক্ষার স্বীকৃতির জন্য আপনি অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছেন, শেষ পর্যন্ত তো এটা আর হলো না? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমার নিজস্ব কিছু দৃষ্টিভঙ্গি এ ব্যাপারে আছে। তালেবান আন্দোলনের পরে আমাদের দেশে হাফেজ্জি হুজুরের আন্দোলন এবং সর্বশেষ আহমদ শফী সাহেবের আন্দোলনের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর চোখ খুলে গেছে, এটা একটা বিরাট শক্তি। এ জন্য সবাই এটাকে প্রতিহত করতে চাইবে। যদি সরকার এটাকে ব্যবহার করতে চায়, তবে এর ধরনটা আলাদা হবে। সেটা কওমি মাদরাসার স্বার্থের অনুকূলে হতে পারে। তবে কওমি মাদরাসার শক্তিগুলো বিচ্ছিন্ন, কর্পূরের মতো। এখন সরকার যদি হস্তক্ষেপ করে, তবে নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এটা আশঙ্কা এখনো আছে। তাই আমার ইচ্ছা ছিলো, সরকার যদি হস্তক্ষেপ না করে, আমরা নিজেদের যদি নিজেদের মতো করে একটু গুছিয়ে নিতে পারি, তখন আর এতো সহজে গভর্নমেন্ট হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। কিন্তু সেটা অনেকের কারণে সম্ভব হলো না। লিখনী : আপনি বলতে চাইছেন হেফাজতের কারণে এটা আটকে গেলো? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : হয়েও গিয়েছিল, কিন্তু করতে তো দিলো না। সরকারও চায় না, এখন যখন দেখলো যে, হুজুররা বিরোধীতা করছে তখন আর সরকারের ঠেকার কী আছে। বাংলাদেশে জামায়াত ইসলামী তো কখনোই চায় না। বিএনপি আমলেও হয় নাই। এই সরকার অনেকখানি এগিয়েছিল।হলো না। দেখুন জামায়াত উপমহাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালি সংগঠন। তাদেরই সরকার তছনছ করে দিয়েছে, তো আমাদের তছনছ করতে সরকারের কী লাগবে? কওমি মাদরাসার তো হাজারেরও বেশী বোর্ড আছে। একেবারে বিচ্ছিন্ন। একজনের সাথে কথা বললে তো অন্যজনের সাথে বলা হয় না। এ জন্য সরকারীভাবে স্বীকৃতি হলে কওমি মাদরাসার একটা প্রতিনিধি হতো। জমিয়াতুল মোদাররেসিন কথা বললে, সকল আলিয়া মাদরাসার পক্ষে থেকে বলা হয়। কিন্তু আমার সাথে কথা বললে তো আহমদ শফীর সাথে বলা হয় না। সবাই আলাদা। এ জন্যই স্বীকৃতিটা দরকার ছিলো।আর সেটা যদি আমাদের শর্ত অনুযায়ি হয়, তবে আমাদের ওপর সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারতো না। অথচ হেফাজতের ভয়েই সরকার স্বীকৃতিটা দিতে রাজি ছিল। যেমন করেই হোক, আমাদের তো কাজ হাসিল হলেই হয়, তাই না? কথা ছিলো কওমি শিক্ষা কমিশন হবে সংবিধিবদ্ধ ও স্বাধীন। পার্লামেন্টে পাশ করা হতো। অন্য কোনো গভর্নমেন্ট এসেও এটাকে আর রদবদল করতে পারতো না। তাহলে কতটা স্বাধীন ছিলো,বোঝেন? এখন হেফাজত যদি চায়, আমি নিশ্চিত, স্বীকৃতি দিয়ে দেবে। লিখনী : আপনার মতে, জামায়াত তছনছ হয়ে গেছে, কিন্তু এবারের উপজেলা নির্বাচনেও তো জামায়াত শক্তি দেখিয়েছে, অনেকগুলো আসন পেয়েছে? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : সরকারের পা ধোয়া পানি খেয়েই জামায়াত উপজেলা নির্বাচন করেছে। এমনি তো আর যেতে পারিনি। পরে দুই দফায় সরকার চায়নি, এ জন্য আর পারে নি। লিখনী : একটা অনলাইন নিউজে দেখলাম, বাংলাদেশী ছাত্রদের দেওবন্দে পড়ালেখার বিষয়ে ভারত সরকারের চুক্তি হয়েছে - এ বিষয়ের সত্যতা জানতে চাচ্ছিলাম। ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আমার সাথে কিসের চুক্তি হবে? চুক্তি তো হতে পারে সরকারের সঙ্গে। তবে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর ভারত সফরে থাকাকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশীদ, তিনি আবার আমাদের দেওবন্দি আকাবিরের অন্যতম মাওলানা হাবিবুর রহমানের ভাতিজা, তো তিনি আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তার বাসায়। মাহমুদ মাদানি ও মাওলানা ফজলুর রহমান ছিলেন সাথে। সেখানে তার সাথে আমাদের একান্তে কথা হয়েছে। বাংলাদেশি ছাত্রদের দেওবন্দে পড়াশোনার ক্ষেত্রে ভিসার কথা বলা হয়েছে। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। ইন্ডিয়ান গভর্নমেন্ট স্বীকার করেছে, প্রতিবছর ৫০ জন করে বাংলাদেশি ছাত্র দেওবন্দে যাওয়ার ব্যবস্থা করবেন- এইটুকুই। লিখনী : কওমি মাদরাসায় জাকাত-ফেতরা দেয়া হারাম- আপনার এরকম একটি বক্তব্য খুবই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন। ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : না, আমি কওমি মাদরাসায় দেয়া যায় না-এভাবে বলিনি। বলেছি,মাদরাসায় জাকাত ফেতরা দেয়া যায় না। মাদরাসা মসজিদের বিল্ডিং বানানোর জন্য এইসব টাকা খরচ করা যায় না। তবে যারা দ্বীনি ইলম হাসিল করে, যারা দ্বীনদার তাদের দিলে অধিক সওয়াব হবে। এক, সওয়াব তো জাকাতও আদায় হবে, আবার দ্বীনের জন্যও সহযোগিতা হবে। এখন তারা কী করলো? আমার কথা অর্ধেক প্রচার করলো, আর বাকি অর্ধেক প্রচার করলো না। এইসব হলো দুষ্টুমি। লিখনী : প্রচলিত গণতন্ত্র সমর্থন করেন কি? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : শুনুন, ইসলাম ইসলামই। ইসলামি নামাজ বা হজ বলতে কোনো কথা নেই। ইসলামী সমাজনীতি বা ইসলামী অর্থনীতি বলাটাও ভুল। এভাবে ইসলামী রাজনীতি কথাটাও ভুল। ইসলাম তার পরিচয়ের জন্য আলাদা সম্পৃক্ততার দরকার পড়ে নাই। ইসলাম নিজে নিজের পরিচয়। পূঁজিবাদ, সমাজবাদ- এরা কি আরেকজনের সাথে মিলিয়ে পরিচয় দেয়? ইসলামী গণতন্ত্র বলে কোনো কথা নেই। এটা আমাদের পরাজিত চিন্তা, ইসলামের পরিচয় দেয়ার জন্য আলাদা একটা বিষয়কে উল্লেখ করতে হবে। লিখনী : জামায়াতের সঙ্গে কওমিদের বিরোধ... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : না, কওমি চেতনা নয়, খাঁটি মুসলমানদের চেতনা। কওমি শব্দটাকে আমার কাছে পছন্দনীয় নয়। আমাদের দেশে কওমি জুটমিল আছে বহু আগের। কওমি শব্দটাকে নিয়ে চক্রান্ত করা হয়েছে। আমরা ছোটবেলায় শুনেছি দেওবন্দি আকাবিরের কথা। দেওবন্দের অনুসারির কথা। দেওবন্দ শব্দটাই ছিলো আদর্শের প্রতীক। দেওবন্দ বললেই আকাবিরের চেহারার ছবি ফুটে উঠতো,আহলে সুন্নাতওয়াল জামায়াতকে যারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কিন্তু কওমি শব্দটা বললে সেই আকাবিরের চেহারা ফুটে উঠে না। এভাবে দেওবন্দ শব্দটাকে প্রচ্ছন্ন করে দেয়া হয়েছে। যেমন ভাষা আন্দোলন একটা প্রতীক হয়ে আছে। তেমনি দেওবন্দ শব্দটাও একটা প্রতীক ছিলো। কিন্তু কওমি শব্দটা সেই আদর্শকে তুলে ধরে না। তাই মৌলিকভাবে এটাকে আমি পছন্দ করি না।এটার ব্যবহারও ইদানিং শুরু হয়েছে, বোধহয় গত দশ বারো বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। লিখনী : তো জামায়াতের সাথে যে বিরোধ, আদর্শিক হোক বা বিশ্বাসগত, অনেক আলেমই চাচ্ছেন বিরোধটা মিটিয়ে ফেলতে... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : এ ব্যাপারে আমি একমত ।তবে এর সুরতটা কী হবে? সত্য কখনো বাতিলের মধ্যে বিলীন হয়ে তার অস্তিত্ব হারিয়ে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। মিলিন সম্ভব, মিলন আমি কামনা করি। কিন্তু সেটা বাতিল থেকে তওবা করে হতে হবে। বাতিলকে দমন করে হতে হবে। যে কথাটা হজরত হাফেজ্জি হুজুর রহ. বলেছিলেন গোলাম আযমকে, মওদুদির আদর্শকে বর্জন করতে হবে। গোলাম আযম বলেছিলেন, মওদুদির আদর্শে আমাদের কোনো সখ্য নেই, জামায়াতে ইসলামী আলাদা। হাফেজ্জি হুজুর বললেন, তাহলে আনার এই কথাটা লিখিত আকারে মিডিয়ায় বলা হোক, 'মওদুদিবাদের সাথে আমাদের জামায়াত ইসলামীর কোনো সম্পর্ক নেই'। তারা বললেন, তাহলে তো একটু চিন্তা ভাবনা করতে হবে, আলাপ করতে হবে, আমরা করবো ইনশাল্লাহ। কিন্তু তারপর আজ পর্যন্ত হয়নি। সুতরাং আমিও চাই, এভাবে নয় যে, হক বাতিলের মধ্যে লীন হয়ে যাবে। বরং বাতিল থেকে তওবা করে হতে হবে। লিখনী : এছাড়া..... ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : না, এছাড়া বিকল্প কোনো পদ্ধতি তো দেখছি না। এখন আপনি যদি বলেন বিষ আর মধুটাকে একসাথে মেশানো হোক, তাহলে তো বিষের ক্রিয়াটাকে নিস্ক্রিয় করেই তারপর করতে হবে। লিখনী : যেসব নাস্তিক ব্লগার ইসলামের প্রতি কটূক্তি করেছে, অনেক ইসলামপ্রিয় মানুষও চান সেসব নাস্তিকদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক, আপনিও কি তাই চান? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : অবশ্যই। তবে বিচারের ব্যাপারে আমি বলবো না। আমি ইসলামী শরিয়তের কথা বলবো। শরিয়ত তাদের যে শাস্তি দিতে চায়, সেটাই দেয়ার দাবি জানাবো। শরিয়ত তো বলে, তাদের বোঝানো হোক। তওবার সুযোগ দেয়া হোক। না করলে সেটা বিচারকের ইচ্ছা। কেবল ফাঁসি দিয়ে দেয়াটা একমাত্র শরিয়তি বিচার নয়। তবে এ জন্য আপনাকে বুঝতে হবে। এ পর্যন্ত যতো সংগ্রাম হয়েছে, সব হয়েছে হক ও বাতিলের সংগ্রাম। কিন্তু এই জামায়াতে ইসলামী কী করলো, হেফাজতের যেই আন্দোলন, আমি এটাকে মহাআন্দোলন বলবো এবং এর অত্যন্ত সমর্থকও আমি, তো জামায়াত এই আন্দোলনকে কব্জ করে ফেললো। তারপর হক ও বাতিলের আন্দোলন না বলে বললো, আস্তিক নাস্তিকের লড়াই। এটা একটা চক্রান্ত ছিলো জামায়াতের। দেখুন, তারা জানে যদি সংগ্রামটাকে আস্তিক নাস্তিকে রূপ দেয়া যায়, তবে শয়তানও তো আস্তিক ছিলো। তো আস্তিক বলতে হিন্দুরা আছে, নাসারা আছে, কাদিয়ানিরা আছে, মওদুদিরা আছে। এরা সবাই আস্তিকের দলে।তাদের চক্রান্ত হলো, যখন আস্তিক নাস্তিকের কথা উঠবে,তখন মওদুদিবিরোধী আন্দোলন লোপ পেয়ে যাবে। কুরআন হাদিস বা ইসলামের কোথাও আপনি এ ধরনের নাস্তিকবিরোধী সংগ্রাম দেখাতে পারবেন না। কুরআনে কারিমে সংগ্রামটাকে হক ও বাতিলের সংগ্রাম বলে উল্লেখ করেছে। এখন যদি আপনি হক ও বাতিল বলেন, তবে হিন্দু-নাসারা বাতিল হিসেবে বের হয়ে যাবে, কাদিয়ানি বের হবে, শয়তান বের হবে, মওদুদির বের হয়ে যাবে। এজন্য তারা হক ও বাতিলকে চাপা দিয়ে, আস্তিক ও নাস্তিককে বড় করে দেখিয়েছে। নইলে তো তারাই প্রতিপক্ষ হয়ে যাবে। লিখনী : তাহলে আপনি বলছেন জামায়াত নাস্তিকের চেয়েও খারাপ? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : অবশ্যই। তাদের সম্পর্কে আমার যে গভীর জানাশোনা, সেখানে থেকেই বলছি। আপনি বর্তমানে খাঁটি নাস্তিক একশটা পাবেন কিনা সন্দেহ। কিন্তু ওরা হলো সংগঠিত। ওদেরকে দমন করতে হবে। লিখনী : লেখালেখির জগতে আপনার ভালো একটা জায়গা আছে। এখন কী লিখছেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : এখন নিজের যতটুকু আছে সে ইলমটুকু দিয়েই কুরআনের একটা তরজমা লিখছি। সাথে শাব্দিক ব্যাখ্যা থাকবে। রাসুলের সংগ্রামী দিক নিয়ে তো অনেক লেখা হয়েছে, আমি মানবিক দিকগুলো নিয়ে একটা বই লিখছি। যেনো বলতে পারি, পূর্বসূরীদের কাতারে আমিও শামিল ছিলাম। লিখনী : হেফাজতের যেসব নেতৃবৃন্দ কারাগারে আছেন, তাদের মুক্তির ব্যাপারে আপনার কোনো ভূমিকা আছে কি না? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : মুফতি ওয়াক্কাস সাহেবকে মুক্ত করার ব্যাপারে তো অনেক চেষ্টা করছি। যদিও আমার কারাগারে যাওয়ার ব্যাপারে তার হাত ছিলো। কিন্তু আলেম ওলামা কষ্ট পাবে এটা আমি কখনোই চাই না। ওয়াক্কাস সাহেবেরও সেই একই সমস্যা। তার দলের অনেকেই চায়, তিনি জেলে থাকুন। গ্রেফতারের পরে তো তার দলের অনেকেই মিষ্টি পর্যন্ত বিতরণ করেছে। আল্লাহ সবাইকে সহি সালামতে রাখুন। লিখনী : দাওয়াতের ক্ষেত্রে মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা তো এখন অনস্বীকার্য বলা চলে। এ বিষয়ে নিজে কখনো ভেবেছেন? ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : এটা তো খুবই জরুরী। আমিও নিজেও ভেবেছি। একবার তো একটা টিভির লাইসেন্স নেয়ার চেষ্টা করেছিলাম। পরে আর হয়ে ওঠেনি। লিখনী : কষ্ট করে আমাদের সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ফরীদ উদ্দিন মাসউদ : আপনারাও অনেক কষ্ট করেছেন। আমি চেষ্টা করেছি আপনাদের মাধ্যমে আমার বক্তব্যটা তুলে ধরতে। আপনাদেরও ধন্যবাদ। সৌজন্যে >> সাপ্তাহিক লিখনী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন