শনিবার, ২২ মার্চ, ২০১৪


৭৬ শতাংশ ছাত্রীই যৌন হয়রানির শিকার (বি দ্রঃ এখানে বিবাহের আগের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত প্রেম এবং স্বেচ্ছাপ্রণোদিত পরকীয়া সংক্রান্ত হয়রানী অন্তর্ভূক্ত করা হয় নি। যদি হত তাহলে প্রকৃত সংখ্যা কত হত তা আল্লাহই ভাল জানেন) বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত জরিপে তথ্য মোছাব্বের হোসেন | আপডেট: ০২:২৮, মার্চ ১৩, ২০১৪ | নিজের ক্যাম্পাসও নিরাপদ নয় ছাত্রীদের কাছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ৭৬ শতাংশ ছাত্রীই কোনো না কোনোভাবে যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে পাবলিক বা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ হার সবচেয়ে বেশি, ৮৭ শতাংশ। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোতে ৭৬ শতাংশ, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ শতাংশ এবং মেডিকেল কলেজে যৌন হয়রানির শিকার হন ৫৪ শতাংশ ছাত্রী। জরিপ অনুযায়ী, নিজ শ্রেণীর নয়, অন্য শ্রেণীর শিক্ষার্থীরাই ছাত্রীদের বেশি হয়রানি করেন। দুই-তৃতীয়াংশ ছাত্রী তাঁদের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। আর ছেলে সহপাঠীদের মাধ্যমে ২৫ শতাংশ এবং ক্যাম্পাসে আসা অন্য পুরুষদের মাধ্যমে ৭ দশমিক ৯ শতাংশ ছাত্রী হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া নিজেদের বিভাগ ও অন্য বিভাগের পুরুষ শিক্ষকদের মাধ্যমেও ছাত্রীরা হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ক্লাস চলাকালীন, ক্লাস না থাকার সময়, করিডর, খেলার মাঠ প্রভৃতি স্থানে হয়রানির ঘটনা ঘটে। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান ইউএন-উইমেনের করা এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এমডিজি অ্যাচিভমেন্ট ফান্ডের সহায়তায় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাতের নেতৃত্বে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। দুটি করে সরকারি, বেসরকারি, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং মেডিকেল কলেজের ৮৯৭ জন মেয়েশিক্ষার্থীর ওপর জরিপটি চালানো হয়। ২০১২ সালের জুলাইয়ে গবেষণার কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় গত বছরের মে মাসে। জরিপে দেখা গেছে, বিভিন্ন অশালীন মন্তব্যের মাধ্যমেই ছাত্রীদের সবচেয়ে বেশি যৌন হয়রানি করা হয়। এ হার ৪৫ শতাংশ। এ ছাড়া ৩ ভাগের ১ ভাগ ছাত্রী মুঠোফোনে কল ও খুদে বার্তার (এসএমএস) মাধ্যমে হয়রানির শিকার হন। যৌন অঙ্গভঙ্গি দেখানোর মাধ্যমে ১৫ শতাংশ, শরীর স্পর্শ করে ১২ শতাংশ, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে ১১ শতাংশ, নজরদারিতে ৯ শতাংশ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে ৬ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ ছাত্রী তাঁদের থাকার জায়গা বা পড়াশোনা করার স্থানে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যৌন হয়রানির ফলে ছাত্রীদের জীবনে নানা ধরনের জটিলতা নেমে আসে। বিপর্যস্ত হয় শিক্ষাজীবন। জরিপ অনুযায়ী, যৌন হয়রানির ফলে ৫৩ শতাংশ ছাত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিছু ছাত্রী অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যান, কিছু পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। আবার কিছু ছাত্রী হয়রানির শিকার হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, হয়রানির শিকার ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করেন না, চুপ থাকেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৯০ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁরা যৌন হয়রানির বিষয়ে কোনো প্রতিবাদ করেননি। এর মধ্যে অর্ধেক কিছুই করেননি এবং চুপ ছিলেন। ২৮ শতাংশ তাঁদের মেয়েবন্ধুদের বিষয়টি জানিয়েছেন কিন্তু তাঁদের কিছুই করার ছিল না। শুধু ৭ শতাংশ ছাত্রী বিষয়টি তাঁদের পরিবারকে জানিয়েছেন। লজ্জা, সামাজিক অবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে ছাত্রীরা এর প্রতিবাদ করেন না। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যৌন হয়রানি সম্পর্কে সচেতনতা অনেক কম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা’ সম্পর্কে জানেন মাত্র ৩ শতাংশ। আবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি কার্যকর নয়। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী প্রতিরোধ কমিটি সম্পর্কে জানেন না। প্রতিবেদনে সুপারিশ অংশে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানি সম্পর্কে সচেতন করতে সহজ ভাষায় (বাংলা এবং ইংরেজি) প্রচারপত্র ও বই বিতরণ করতে হবে। এতে হাইকোর্টের নীতিমালা, হয়রানি প্রতিরাধে করণীয় প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ থাকবে। কম্পিউটার ল্যাবের মাধ্যমে যৌন হয়রানির ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যৌন হয়রানি রোধে একটি সেল গঠন করতে হবে। অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা ও যেসব স্থানে হয়রানি বেশি হয়, সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। উল্লেখ্য, হাইকোর্ট ২০০৯ সালে মহিলা আইনজীবী সমিতির এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ ধরনের কর্মকাণ্ডকে যৌন হয়রানি হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে রয়েছে সরাসরি কিংবা ইঙ্গিতে অশালীন আচরণ, হয়রানি বা নিপীড়নমূলক উক্তি ও মন্তব্য বা ভঙ্গি, প্রাতিষ্ঠানিক এবং পেশাগত ক্ষমতা ব্যবহার করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা। এ ছাড়া চিঠি, মোবাইল, খুদে বার্তাসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যৌন ইঙ্গিতমূলক অপমানজনক কথা লেখা, চরিত্র হননের জন্য স্থির বা ভিডিওচিত্র ধারণ করা, প্রেমের প্রস্তাব করে প্রত্যাখ্যাত হয়ে হুমকি দেওয়া প্রভৃতি। যৌন হয়রানি বন্ধে আদালত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ দেন। একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নীতিমালা বাস্তবায়িত হয়নি। কোথাও প্রতিরোধ কমিটি হলেও তার কোনো কার্যকারিতা নেই। http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/167590/%E0%A7%AD%E0%A7%AC_%E0%A6%B6%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B6_%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%87_%E0%A6%AF%E0%A7%8C%E0%A6%A8_%E0%A6%B9%E0%A7%9F%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0_%E0%A6%B6%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন