সোমবার, ৩ মার্চ, ২০১৪


একদিনে ৩ ক্রসফায়ার ‘আমার সামনেই র‌্যাব ওয়াসিমকে গুলি করে’ 04 Mar, 2014
রাজধানী ও সাভারে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজধানীর কদমতলী এলাকায় দিনদুপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান দুই ব্যক্তি। র‌্যাব দাবি করেছে নিহতরা অপহরণকারী এবং বন্দুকযুদ্ধে তাদের মৃত্যু হয়। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, র‌্যাব তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কদমতলী আলমবাগ মদিনা মসজিদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোহাম্মদ ওয়াসিম ও সংগ্রাম চৌধুরী পোস্তগোলা সেতুতে টোল আদায় করতেন। ওয়াসিম ওই সেতুর টোল আদায়ের ঠিকাদার এবং সংগ্রাম তার সহকারী বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। র‌্যাব ১০-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার গোলাম সারোয়ার জানান, গোপন সংবাদে সোমবার দুপুরে অপহৃত কয়েকজন ব্যক্তিকে উদ্ধারে কদমতলীর একটি বাসায় অভিযান চালানো হয়। অপহরণকারীরা এক পর্যায়ে র‌্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষায় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গোলাগুলিতে অপহরণকারী দলের দু’জন ও র‌্যাবের তিনজন সদস্য আহত হন। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে রানা, জাহাঙ্গীর, আখতার ও জনি নামে অপহৃত চার ব্যক্তি ও দু’টি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অপহরণের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাতে পারেনি র‌্যাব। এদিকে গতকাল ঘটনার পর মদিনা মসজিদ এলাকার নিহত ওয়াসিমের বাসায় গিয়ে দেখা যায় সাততলা ওই বাসার আসবাবপত্র এলোমেলো। মালামাল ভাঙচুর করা। বাসার নিচে সিঁড়ির কাছে জমাট বাঁধা রক্ত। নিহতের স্ত্রী সোনিয়া আক্তার জানান, দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ওয়াসিম বাসার সপ্তম তলার চিলেকোঠার অফিসে অবস্থান করছিলেন। তখন সাদা পোশাকের র‌্যাব সদস্যরা বাসা ঘিরে ফেলে। তারা বাসায় প্রবেশের চেষ্টা করলে ষষ্ঠ তলার একটি বাথরুমে আশ্রয় নেন ওয়াসিম। এক পর্যায়ে বাসায় প্রবেশ করে র‌্যাব সদস্যরা তল্লাশি চালায় এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তল্লাশির এক পর্যায়ে বাথরুম থেকে ওয়াসিমকে বের করে আনে র‌্যাব সদস্যরা। এরপর সিঁড়ির কাছে নিয়ে তারা পরপর তিনটি গুলি করে। গুলি করার আগে আমি একজন র‌্যাব সদস্যের পা জড়িয়ে ধরে বলেছি, আমাদের যা আছে নিয়ে যান। তবুও আমার স্বামীকে মারবেন না। আমি তার প্রাণভিক্ষা চাইছি। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সোনিয়া বলেন, আমি বলেছি আমার স্বামী অপরাধী হলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিন। যা শাস্তি হয় মেনে নেবো। আমার অনাগত সন্তানের দিকে চেয়ে আপনারা তাকে মারবেন না। কিন্তু তারা আমার কান্না শোনেনি। তিনি বলেন, এসময় আমাকে লাথি ও চড় মারে র‌্যাব সদস্যরা। চোখের সামনে তাকে গুলি করে রক্তাক্ত অবস্থায় তুলে নিচে নিয়ে যায়। তিনি দাবি করেন নিহত ওয়াসিমের বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। কোন ধরনের অপরাধের সঙ্গেও তিনি জড়িত ছিলেন না। এদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংগ্রাম চৌধুরী ওই বাসায় র‌্যাবের অভিযান চালানোর সময় সপ্তম তলা থেকে একটি পাইপ বেয়ে নিচে নামার সময় র‌্যাব সদস্যরা তাকে ধরে ফেলেন। এর কিছুক্ষণ পর পার্শ্ববর্তী একটি স্থানে নিয়ে তাকেও গুলি করা হয়। পরে দু’জনকে রক্তাক্ত অবস্থায় মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন হাসপাতালে নেয়ার আগেই তাদের মৃত্যু হয়। নিহত ওয়াসিমের শাশুড়ি শিরিন বেগম জানান, তার ছোট মেয়ের জামাই একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। স্থানীয় কোন রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। পোস্তগোলা ব্রিজের টোল ইজারা আদায় করতেন। এদিকে র‌্যাবের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কদমতলী থানাধীন ১৩১ নম্বর নতুন জুরাইন, আলমবাগ, মদিনা মসজিদ রোডে সন্ত্রাসীরা কিছু লোককে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য একটি বাসায় শারীরিক নির্যাতন করছে- এই তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ১০-এর একটি দল তাৎক্ষণিক অভিযান চালায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা ভবনের সিঁড়ি এবং পাইপ বেয়ে পালিয়ে যেতে থাকে। এসময় সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের মুখোমুখি হলে গুলি করতে করতে পালানোর চেষ্টা করে। এ পরিস্থিতিতে সরকারি সম্পদ ও জানমালের নিরাপত্তার জন্য র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালালে মো. ওয়াসিম ও সংগ্রাম নামের দু’জন সন্ত্রাসী আহত হয়। আহত অবস্থায় তাদের ঢাকা মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় র‌্যাবের তিন জন সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে দু’টি বিদেশী পিস্তল, দু’টি ম্যাগাজিন, ৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। বাসার ৭ম তলার চিলেকোঠা থেকে নির্যাতনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জামসহ অপহৃত আক্তার (৪২), রানা (১৮), জনি (২৪) ও জাহাঙ্গীর (২৮)-কে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সন্ত্রাসী দলের বিভিন্ন সদস্যদের নামে ঢাকার বিভিন্ন থানায় হত্যা, সিএনজি গাড়ি চুরি, চাঁদাবাজি, মাদক, জুয়া, অস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সাভারে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১ স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সাভারে পুলিশের কথিত বন্দুকযুদ্ধে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি (৩৫) নিহত হয়েছেন। পুলিশ দাবি করেছে নিহত ব্যক্তি ডাকাত দলের সদস্য। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ডাকাতদের ব্যবহৃত ১টি চাপাতি, ১টি রামদা, ১টি হাতবোমা, ১টি টর্চ লাইট, ১টি মোবাইল ফোন সেট, দুই জোড়া জুতাসহ বিস্ফোরিত হাতবোমার আলামত উদ্ধার করেছে বলে সাভার সার্কেলের এএসপি শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি বলেন, রোববার দিবাগত গভীর রাত আনুমানিক ২টার দিকে সাভারের রাজফুলবাড়িয়ার হারাননগর এলাকার পুলিশ টাউনের সামনে মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়েছে। এদিকে ডাকাত-পুলিশ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে একেক জনের কাছ থেকে একেক ধরনের বক্তব্য পাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজালের। এছাড়া হাসপাতাল থেকে ‘ডেথ’ সার্টিফিকেট নেয়ার পর তড়িঘড়ি করে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আশিস কুমার সান্যাল সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ভোর রাতেই লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়ে দেন। সাভার মডেল থানার পরিদর্শর্ক (তদন্ত) দীপক কুমার সাহা বলেন, গভীর রাত আনুমানিক ৩টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের রাজফুলবাড়িয়ার পুলিশ টাউনের কাছে একদল দুর্বৃত্ত ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তখন পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পেরে সামনের দিকে এগিয়ে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ও গুলি ছুড়তে থাকে। তখন আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি ছুড়লে এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়। ডাকাতদের হামলায় চার পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আহত পুলিশের এসআই রফিকুল ইসলামকে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আহত কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম, আবদুল আজিজসহ তিন জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তবে ঘটনাটি নিয়ে এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আহত এসআই রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে দেয়নি পুলিশ। আর বন্দুকযুদ্ধে নিহত ডাকাত সদস্যের কোন পরিচয়ও জানাতে পারেনি তারা। এদিকে আবার ঘটনার সময় উপস্থিত এএসআই মনিরুজ্জামান বলেন অন্য কথা। তিনি বলেন, মহাসড়কে ব্যারিকেড দিয়ে ডাকাতির চেষ্টা করছিল ১০-১২ জনের ডাকাত দল। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতরা গুলি ও বোমা ছুড়তে থাকে। পরে পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়লে এক ডাকাত সদস্য নিহত হয়। আর অন্যরা পালিয়ে যায়। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল জানেন না দাবি করে বলেন, ঘটনাটি শোনার পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। পরে জানতে পারি ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তখন পুলিশ গুলি ছুড়লে এক ডাকাত নিহত হয়। তবে ঘটনাস্থলের সামনে সাভার পল্লী বিদ্যুতের ১৩২/১৩৩ কেবি গ্রিড উপকেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য সুমন, রফিক ও সাদ্দাম বলেন, আমরা শুধু গুলির শব্দ শুনেছি। এর বেশি কিছু আর জানি না। এদিকে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক জাহিদুর রহমান জানান, রাত পৌনে ৩টার দিকে আহত অবস্থায় আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সের এক ব্যক্তিকে সাভার থানার এসআই আশিস্‌ কুমার নিয়ে আসেন। আহত ওই ব্যক্তির বাম হাতের কনুইয়ের নিচে ও বাম পায়ের হাঁটুর নিচে ছররা গুলির আঘাত ছিল। আর পুরো শরীর পানিতে ভেজা ও কাদা মাখানো ছিল। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর রাত ৩টার দিকে ওই ব্যক্তি মারা যায়। তবে গুলিতে তার মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেন ওই চিকিৎসক। উৎসঃ manabzamin Share on facebook Share on email Share on print

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন