মঙ্গলবার, ৪ মার্চ, ২০১৪


প্রকাশ : ০৫ মার্চ, ২০১৪ ০১:২৩:৩১ অঅ-অ+ printer নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বঙ্গভবন
বঙ্গভবন ঘেঁষে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক বহুতল ভবনকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে মনে করছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। এসব ভবনের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন ছাড়াও ঢাকা সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মূল ভবন ও সরকারি সোনালী ব্যাংকের কার্যালয়ও রয়েছে। অমিতোষ পাল বঙ্গভবন ঘেঁষে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক বহুতল ভবনকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে মনে করছে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়। এসব ভবনের মধ্যে ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন ছাড়াও ঢাকা সিটি করপোরেশন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) মূল ভবন ও সরকারি সোনালী ব্যাংকের কার্যালয়ও রয়েছে। দ্রুত এসব ভবনের ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণের জন্য রাজউক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ (ডিএসসিসি) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে বঙ্গভবন।নিরাপত্তা ঝুঁকিতে বঙ্গভবন জানা গেছে, বর্তমানে বঙ্গভবন লাগোয়া আরও যেসব ভবন নির্মাণাধীন, সেগুলোর কাজ দ্রুত বন্ধ করার জন্য ডিএসসিসি ও রাজউককে অনুরোধ করেছে বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ভবনটির কাজও বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে। ডিএসসিসি ও রাজউক এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সে বিষয়ে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে বঙ্গভবনকে জানানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম সমকালকে বলেন, এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণের জন্য প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন। প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম সমকালকে জানান, ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগ থেকে ওইসব ভবনের ব্যাপারে তথ্য নিয়ে রাজউককে সরবরাহ করা হয়েছে। এসব ভবন কীভাবে অনুমোদন পেয়েছে, বিস্তারিত বিষয় রাজউককে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণ করতে রাজউকের বোর্ড সদস্যকে (নিয়ন্ত্রণ) আহ্বায়ক করে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সিরাজুল ইসলাম আরও জানান, কেপিআই (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩ অনুযায়ী কেপিআইভুক্ত ভবনের ৩০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে কোনো ভবন থাকতে পারে না।বিশেষ প্রয়োজনে কোনো অবকাঠামো নির্মাণ করতে হলে কেপিআই ডিফেন্স কমিটি থেকে পৃথকভাবে অনুমতি নিতে হয়। এসব ভবনের ক্ষেত্রে সে নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। রাজউকের মূল ভবন, সিটি করপোরেশনের একটি বহুতল কারপার্কিং ভবন, সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের ভবনও এর মধ্যে পড়েছে। এসব ভবনের সংখ্যা অর্ধশতাধিক হবে বলে মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম।জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গভবনের পক্ষ থেকে 'বিশেষ শ্রেণীর কেপিআই হিসেবে বঙ্গভবনের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে' একটি বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে পূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক, ডিএসসিসি, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের রাখা হয়। বৈঠকে জনবিভাগের সিনিয়র সচিব শেখ আলতাফ আলী বঙ্গভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি উত্থাপন করেন। পরে ২৬ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণের জন্য রাজউক ও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেন শেখ আলতাফ আলী। চিঠিতে বলা হয়, 'কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ২০১৩-তে স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও সেই নীতিমালা ভঙ্গ করে বঙ্গভবনের অতি সনি্নকটে (আনুমানিক ১৮ মিটার দূরে) অনেকগুলো বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের একটি ভবন ১৬ তলা থেকে ৩০ তলায় উন্নীত করার কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, যা বিশেষ শ্রেণী কেপিআই হিসেবে বঙ্গভবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।' যেসব ভবনের নির্মাণকাজ বর্তমানে চলছে সেগুলো দ্রুত বন্ধ করার ব্যাপারেও চিঠিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, 'এসব ভবনের যাবতীয় কার্যক্রম ও অনুমোদন-সংক্রান্ত বিষয়ে রাজউক ও সিটি করপোরেশনের যেহেতু ভূমিকা রয়েছে, তাতে মনে হয় এসব ভবনের অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশকিছু দুর্বলতা/ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনুমোদনের ক্ষেত্রে এসব সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কোনোরূপ গাফিলতি আছে কি-না তা খতিয়ে দেখার জন্য পূর্ত মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও অনুরোধ করা হলো।' এসব বিষয়ের অগ্রগতি ও ভবনগুলোর তথ্য বঙ্গভবনকে অবহিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট পাঠাতে হবে।এ বিষয়ে রাজউকের বোর্ড সদস্য (নিয়ন্ত্রণ) ও আহ্বায়ক কমিটির প্রধান হেলাল উদ্দিন সমকালকে বলেন, 'বঙ্গভবনের পাশের ভবন মালিকরা এত প্রভাবশালী যে কোনো কিছু করতে গেলে খুব সাবধানে ও কৌশলে করতে হবে। তবে বঙ্গভবনের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।' তিনি জানান, কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী ২০ মিটারের মধ্যে কোনো অবকাঠামো থাকার নিয়ম ছিল না। পরে ২০১৩ সালে আইন সংশোধনের পর ১৫০ মিটারের মধ্যে কিছুই থাকতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে ১৫০ মিটারের মধ্যে করতে গেলে অনুমতি নিয়ে করতে হবে। ২০১৩ সালের নিয়মটিই কঠোরভাবে অনুসরণের চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন