বুধবার, ৫ মার্চ, ২০১৪


ভিডিও >> টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং একটি বগল বাজানো ‘আইটেম সং’ মাত্র 05 Mar, 2014
আর মাত্র ১১ দিন পরেই শুরু হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ২০১৪ সালের এই বিশ্বকাপের আয়োজক বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই সব ধরণের প্রস্তুতি শেষ। এখন চলছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরকে সাজানোর নানা আয়োজন। এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং। প্রকাশিত হয়েছে গানটির ভিডিও। ‘চার ছক্কা হই হই, বল গড়াইয়া গেল কই’ শিরোনামের গানের ভিডিও দেখেই চমকে উঠতে হয়। এটা কি কোনো বাংলাদেশি গান! বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে কি এই গানের কোনো মিল দেখা যায়? ভিডিওটি দেখে মনে হয়, এটি ‘ডিজুস’ মার্কা কোনো বিজ্ঞাপন কিংবা ভারতীয় হিন্দি ছবির ‘আইটেম সং’ ছাড়া আর কিছু না!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০১৪ এর গর্বিত আয়োজক বাংলাদেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ভারত তাকিয়েছিল বাংলাদেশের দিকে, যদি লুফে নেওয়া যায় এই আয়োজন। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেই সময়কার (ডিসেম্বরের পর মুহুর্তে) ভারতের মিডিয়াগুলো এই সংক্রান্ত সংবাদও প্রকাশ করেছে যে, কলকাতার ইডেনসহ কয়েকটি মাঠ প্রস্তুত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনে! কিন্তু ভারতীয়দের সে আশায় গুঁড়ে বালি। রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে এশিয়া কাপ ২০১৪। মার্চের পনেরোতম রাত পেরোলেই শুরু হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু সেই বিশ্বকাপের থিম সঙের এটি কী ধরণের ‘মিউজিক ভিডিও’? গানটির ভিডিওটি সত্যিই বাংলাদেশের জন্য লজ্জার, বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের জন্য লজ্জার। শুধু তাই নয়, বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ ও বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিংবা সুন্দরভাবে উপস্থাপনের অনেক বড় একটি সুযোগও হাতছাড়া হয়েছে বাংলাদেশের। গানটির মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের ‘ডিজুস’ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বগল বাজিয়ে প্রমাণ করেছে, বাংলাদেশের মানুষ খুব সুন্দরভাবে বগল বাজাতে পারে! বগল বাজিয়ে চলছেন মিউজিক ভিডিও‘র মডেলরা
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের মিউজিক ভিডিওগুলো দেখলে প্রশংসা না করে থাকা যায় না। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের থিম সং এর মিউজিক ভিডিওটি বিশ্বের কাছে বাঙালিদের কেবল আনাড়ি-ই প্রমাণ করেনি। সঙ্গে এটাও জানান দিয়েছে যে, বাঙালিদের মাথায় সত্যিকার অর্থে কিছু নেই! কিছু পারে না। বিশ্বকাপ ক্রিকেট বলতেই চোখে ভেসে উঠে মাঠ, গ্যালারি ভর্তি দর্শক, ক্রিকেট খেলা। কিন্তু গানটির পুরো ভিডিওতে কোথাও কোনো ব্যাট-বল দেখা যায়নি। দেখা যায়নি কোনো মাঠ কিংবা গ্যালারি ভর্তি দর্শক। গানটির ভিডিও‘র শুরুতেই দেখা গেছে, কয়েকজন তরুণ-তরুণী যেসব পোশাক, গলায় মালা, হাতে ব্রেসলেট লাগিয়ে নাচ শুরু করেছে, যা সত্যিই বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। বাংলাদেশের কোথাও এমন দৃশ্য দেখা যায় না। হয়তো বা কোনো ডিজে পার্টি অথবা গুলশানের আলিশান কোনো হোটেলে বা বাসায় একান্তই বন্ধুদের সঙ্গে গুটি কয়েক তরুণ-তরুণীর আয়োজন হতে পারে। মাঝে মাঝে তা শোনাও যায়। কিন্তু প্রকাশ্যে বাংলাদেশের কোথাও এমনটা দেখা যায়নি, যায় না। আর তাই হয়তো মিউজিক ভিডিও‘র নির্মাতা বাইরে নাচের দৃশ্যায়ন করার সাহস পাননি। দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরের ভেতরে স্টেজ সাজিয়ে গানটির দৃশ্যায়ন করা হয়েছে। বাহ! এই না হলে বাংলাদেশের নির্মাতা! ফেসবুকে মিউজিক ভিডিওটির পক্ষ নিয়ে কেউ একজন বলছিল, এটি আন্তর্জাতিকভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং স্মার্টনেস বোঝাতে করা হয়েছে! তার কথা শুনে চমকে উঠা ছাড়া উপায় থাকে না। স্মার্টনেস বলতে এরা আসলে কি বোঝে? বাঙালি মেয়েরা কি ল্যাগিন্স, টাইট টি-শার্ট, হাতাকাটা টি-শার্ট পড়েন? সচরাচর তা চোখে পড়ে না। তাছাড়া এসব পড়া মানেই স্মার্ট নয়, বরং নিজেদের বিকৃতভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা। ভিডিওজুড়ে রয়েছে মডেলদের লাফালাফি আর আন্তর্জাতিক মানের কথা তুললে এই ভিডিওটি দেখে ভারতীয় উপমহাদেশের চলচ্চিত্রগুলোর ‘আইটেম সং’ ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না। আমরা যদি দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত ফুটবল বিশ্বকাপের থিম সঙ ‘ওয়াকা ওয়াকা’র মিউজিক ভিডিও দেখি, তাহলে সেখানে দেখা যায়- মাঠে ফুটবল খেলা দিয়েই গানটির ভিডিও শুরু হয়েছে। পাশাপাশি আফ্রিকার ক্ষেতে-খামারে যে ছেলেরা ফুটবল খেলে, তাও উঠে এসেছে। সঙ্গে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতি, তাদের নিজস্ব নৃত্য। অথচ বাংলাদেশের নির্মিত ‘চার-ছক্কার’ এই মিউজিক ভিডিওতে নেই কোনো ক্রিকেট খেলার রেশ। দেখা যায়নি কোনো ক্রিকেটারকে। এক কথায় বলা যায়, ক্রিকেটের কোনো আবহও দেখা যায়নি। এটি যে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট একটি গান, তা কোনোভাবেই বোঝার উপায় নেই। যদিও ‘ওয়াকা ওয়াকা’র সঙ্গে ‘চার-ছক্কা’ মিউজিক ভিডিও‘র তুলনা করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। কিন্তু বাংলাদেশ যখন সব বিষয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সেখানে এই থিম সঙের মাধ্যমে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে কেন? কেন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হলো বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের কি কোনো নিজস্ব সংস্কৃতি নেই, নৃত্য নেই। একটি ধানক্ষেত আর নদী দেখানো ছাড়া তেমন কিছু নেই এই ভিডিওতে। তাও আবার ঐ বগল বাজিয়েই কাজ সেরেছে। অথচ আমাদের মেয়েদের রয়েছে নিজস্ব পোশাক। আমাদের শাড়ি বহির্বিশ্বে পরিচিত। বাইরের মেয়েরা বাংলাদেশে ঘুরতে এসে শাড়ি পড়ে থাকেন। রয়েছে আমাদের নিজস্ব নাচ। আমাদের আদিবাসীদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। কিন্তু এসবের কিছুই খোঁজ পাননি ভিডিও নির্মাতা। খোঁজ পেয়েছেন ডিজে পার্টি কিংবা আইটেম সঙের। আর তাই ক্রিকেট বিশ্বে জন্ম দিয়েছেন এক বগল বাজানো ‘আইটেম সং’! বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে পর্যটন খাত অনেক বড় একটি ভূমিকা পালন করে। বিশ্বকাপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাইরের দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশের পর্যটন খাতকে তুলে ধরার ব্যাপক একটা সুযোগ ছিল। এক্ষেত্রে যেমন বাংলাদেশের পর্যটন খাত লাভবান হতো, তেমনই সরকারের রাজস্বও বাড়তো। আর এই সুযোগটি ছিল থিম সঙের মাধ্যমে। গানটির ভিডিওতে উঠে আসতে পারতো, বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত ‘কক্সবাজার’। উঠে আসতে পারতো সেন্টমার্টিন, সুন্দরবন, চা-বাগান, মহাস্থানগড়। যা বিদেশি পর্যটকদের সহজেই মনোযোগ আকর্ষণ করতো। মিউজিক ভিডিওর একাংশে দেখানো যেত যে, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে এক দল কিশোর ক্রিকেট খেলছে। এভাবে অন্যান্য জায়গাগুলোও উঠে আসতে পারতো মিউজিক ভিডিওতে। কিন্তু পর্যটন খাতের এই সুযোগটি একদম মাঠে নামার আগেই মারা গেছে! ঠিক মারা গেছে না, বলা যায় মেরে ফেলা হয়েছে! এছাড়াও খেলার বাইরের আরও কিছু বিষয় যেমন- জাতীয় সংসদ ভবন, কার্জন হল, শহীদ মিনার উঠে আসতে পারতো। অবাক হওয়ার বিষয় হলো, সিলেটে এই মিউজিক ভিডিও অনুকরণে এভাবেই নেচেছে একদল ক্রিকেটপ্রেমী! মিউজিক ভিডিওটি দেখে বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীরা ভাববে, বাঙালিরা পারেও অনেক কিছু! আইটেম সঙ কিংবা ডিজে পার্টি থেকেও এগিয়ে আছে তারা। আহা! বাঙালিরা এগিয়ে আছে অনেক দূর! টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মিউজিক ভিডিও নির্মাতাকে ধন্যবাদ! https://www.youtube.com/watch?v=6unJ2Cdt4-Y

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন