জানা গেল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের হারানো বিমানের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর
17 Mar, 2014
৮ মার্চ থেকে নিখোঁজ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমানটি টেক অফের সাত ঘণ্টা পরেও আকাশে উড়ছিল। নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই বিমানটির বিষয়ে নানা তথ্য সংগ্রহ করে আসছেন সিমন ক্যালডার। সম্প্রতি ইনডিপেনডেন্টে প্রকাশিত হয়েছে এ বিষয়ে তার একটি নিবন্ধ। যেখানে উঠে এসেছে বিমানটির বিষয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর।
বিমানটি বিষয়ে কোন কোন তথ্য আমরা নিশ্চিত?
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৭৭ মডেলের হারানো বিমানটির ফ্লাইট নম্বর ছিল এমএইচ৩৭০। ৮ মার্চ, শনিবার কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্ট থেকে রাত ১২.৪১ মিনিটে এটি আকাশে উড়ে যায়। এতে ২২৭ জন যাত্রী ও ১২ জন বিমানকর্মী ছিল। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে বিমানটি সেখান থেকে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে ওড়া শুরু করে। কিন্তু বিমানটি মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলে পৌঁছানোর আগেই এর তথ্য পাঠানোর ব্যবস্থাটি (এসিএআরএস ডেটা-ট্রান্সমিশন সিস্টেম) বন্ধ হয়ে যায় (বা কেউ বন্ধ করে দেয়)। এর পরেই ভূমির রাডারের সঙ্গে বিমানটির যোগাযোগ ও পরিচিতি তথ্য বিনিময়ে ব্যবহৃত ট্রান্সপন্ডার যন্ত্রটি বন্ধ হয়ে যায়। এ যন্ত্রটিতেই হাইজ্যাক অ্যালার্ম কাজ করে। রাত ২:৪০ মিনিটে বিমানটি থেকে শেষ কথা শোনা যায়, সবকিছু ঠিক আছে। এরপর জানা যায়, বিমানটির যাত্রাপথ পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং বিমানটি আকাশে ওড়ার সাড়ে সাত ঘণ্টা পরেও আকাশে ছিল।
click here
কিভাবে আমরা জানলাম, এটা তখনো আকাশে উড়ছিল?
একটা যোগাযোগের চ্যানেল এরপরেও চালু ছিল। যোগাযোগ উপগ্রহগুলো ব্যবহার করে ইনমারস্যাট জাহাজ ও বিমানের জন্য পথনির্দেশনা দেয়। ভারত মহাসাগরের ওপরে থাকা একটি স্যাটেলাইট বিমানটির সঙ্গে ঘণ্টায় ঘণ্টায় যোগাযোগ রাখছিল। স্বয়ংক্রিয় এ ব্যবস্থায় বিমানটি আকাশে আছে, এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল। সকাল ৮.১১ মিনিট পর্যন্ত এ সংকেত পাওয়া গিয়েছিল। তবে তখন বিমানটি কোন স্থানে আছে, এ তথ্য পাওয়া যায়নি। বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল তার সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আগে। এ সময়ে বিমানটি স্বাভাবিক গতিতে তিন হাজার মাইল দূরেও উড়ে যেতে পারে।
স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি ম্যাপ আঁকা হয়েছে। এটা কি বিমানটির উড়ার পথ নিদের্শ করে?
না, ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিমানটির সঙ্গে স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগের ফলে এর মাধ্যমে বিমানটির সম্ভাব্য অবস্থানের স্থান দেখা যাচ্ছে।
জানা গেল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের হারানো বিমানের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর
click here
কী কারণে দুটি করিডোর?
বিমানের সঙ্গে স্যাটেলাইটের দূরত্বের ভিত্তিতে এ অবস্থান নির্ণয় করা হয়েছে। ভারত মহাসাগরের প্রায় ২২ হাজার মাইল উপরে অবস্থিত একটি স্যাটেলাইট থেকে বিমানটির দূরত্ব নির্ণয় করা গেছে। যা ছিল পাঁচ হাজার মাইলের। এসব তথ্যের ভিত্তিতে বিমানটির দুটি সম্ভাব্য এলাকায় অবস্থানের সম্ভাবনা জানা গেছে। অন্য বহু তথ্যের ভিত্তিতে বিমানটির সে সময়কার সম্ভাব্য স্থান দুটি রেখার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। উত্তর দিকের লাইনটি রয়েছে উত্তর থাইল্যান্ড, দক্ষিণ-পশ্চিম চীন ও দক্ষিণ কাজাখাস্তান। দক্ষিণের লাইনটি ভারত মহাসাগর ও পশ্চিম জাভা জুড়ে বিস্তৃত। এ ছাড়াও লাইন অংকিত এলাকাটি অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূলের এক হাজার মাইল দূরে অবস্থিত।
এর অর্থ কি বিমানটি এ লাইনের ভেতর আছে?
না। সকাল ৮:১১ মিনিটে স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে (পিং) বিমানটির সঙ্গে যখন সর্বশেষ যোগাযোগ হয়েছিল তখন বিমানটি সেই স্থানে ছিল বলে জানা গেছে। এর এক ঘণ্টা পরেও বিমানটিকে একটি স্বয়ংক্রিয় সংকেত দেওয়া হয় কিন্তু বিমানটি থেকে তার কোনো উত্তর আসেনি। তবে এ সময়ের মধ্যেই বিমানটি সে লাইন থেকে যে কোনো দিকে আরো ৫০০ মাইল সরে যেতে পারে।
কতো দূরে যেতে পারে বিমানটি?
বোয়িং ৭৭৭ইআর বিমানটি সম্পূর্ণ জ্বালানি ভরার পর প্রায় আট হাজার মাইল উড়তে পারে। তবে হারিয়ে যাওয়ার আগে বিমানটি যাচ্ছিল ২ হাজার ৭০০ কিলোমিটার দূরে। বিমানটিতে জ্বালানিও ভরা ছিল সেই অনুপাতে। ফলে বিমানটিতে সে সময় দুই ঘণ্টা ওড়ার মতো জ্বালানি অবশিষ্ট ছিল।
অবতরণ করার জন্য কেমন রানওয়ে দরকার বিমানটির?
জ্বালানি প্রায় খালি হয়ে গেলে বিমানটি অবতরণ করার জন্য এক মাইল বা এ ধরনের মাপের রানওয়েই যথেষ্ট। হিথ্রো এয়ারপোর্টের রানওয়ের তুলনায় অর্ধেক হলেই এটি অবতরণ করতে পারবে।
বিমানটির সম্ভাব্য ‘দখলকারীর’ পরিকল্পনা কী ছিল?
বিমানের সম্ভাব্য দখলকারী যদি এটি ধ্বংস করে দিতে চাইতো তাহলে তারা তা সেখানেই নামিয়ে দিতে পারতো বা কুয়ালালামপুরের পেট্রোনাস টাওয়ারের মতো কোনো স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে পারতো। কিন্তু যে বা যারা বিমানটির গতিপথ পরিবর্তিত করেছিল, তারা বিমানটি বহুক্ষণ ধরে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে।
কিভাবে বিমানটি মিলিয়ে যেতে পারে? রাডারের আওতার বাইরের এলাকা কতোখানি?
বহু ভ্রমণকারীই এ বিষয়টিতে খুবই অবাক হয়েছেন যে, সারা বিশ্বের বিমানগুলো সবসময় ট্র্যাক করার মতো কোনো রাডার সিস্টেম নেই। সাগরের ওপর ও অতিরিক্ত জনবহুল এলাকায় বিমান ট্র্যাক করার মতো ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। পাইলট যদি চায় তাহলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়ে ২৫০ টন ওজনের কোনো বিমানকেও প্রায় অদৃশ্য করে ফেলতে পারে।
কে হতে পারে এজন্য দায়ী?
এক বা একাধিক যাত্রী, এক বা একাধিক পাইলট বা বিমানকর্মী বা বিমানে লুকিয়ে থাকা কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি এজন্য দায়ী হতে পারে।
বিমানের পাইলটদের বাড়ি সার্চ করার পর সেখানে অস্বাভাবিক কোনোকিছু পাওয়া গেছে কি?
না। তবে অস্বাভাবিক বিষয় হলো এটা তাড়াতাড়ি করা হয়নি।
তদন্তকারীদের সামনে এখন প্রধান প্রশ্ন কোনটি?
যদি বিমানের পাইলটরা স্বাভাবিক কাজ করতে বাধার সম্মুখিন হন তাহলে কেন তারা বিমানের ফ্লাইট ডেকের জরুরি সংকেতটি চালু করলেন না? আর বিমানের কর্মীরা কেন এসিএআরএস সিস্টেম বন্ধ করায় বাধা দিলেন না? আর ঘটনাটির পরে বিমানের কোনো যাত্রীর কি কোনো মোবাইল ফোন কল বা এসএমএস ছিল? শেষ প্রশ্নটির উত্তর যদি ‘না’ হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে বিমানটির শেষ ঠিকানা হয়েছে- সাগর।
জানা গেল মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের হারানো বিমানের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর
উৎসঃ কালের কণ্ঠ
Share on facebook Share on email Share on print 2
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন