রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০১৪


রাতের এফডিসি ও ১৫ মিনিটের রহস্য 17 Mar, 2014 সারা দিন হিরো-হিরোইন আর পরিচালকের আনাগোনায় এফডিসি প্রাণবন্ত থাকলেও আঁধার ঘনিয়ে আসতেই পাল্টে যায় চিত্র। রহস্যে ভরে ওঠে চারপাশ। শুরু হয় রহস্যময় মানুষের আনাগোনা। ভেতরে আসা এবং ১৫ মিনিটের সিডিউল নিয়ে আরো গভীরে চলে যাওয়া। সারা রাতই চলে এমন। অনুসন্ধানে যা বেরিয়ে এলো তা এফডিসির মতো জায়গায় কারোরই প্রত্যাশিত নয়।
দিনের ব্যস্ততা শেষে আঁধার নামতেই এফডিসির ফ্লোরগুলো জমে ওঠে আড্ডায়। মুখরিত হয় নানা খুঁনসুটিতে। যেন মুহূর্তেই দূর হয়ে যায় সব অবসাদ। কোথাও চেয়ার নিয়ে কোথাও সবুজ ঘাসে গোল হয়ে বসে চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা। আর এই আড্ডায় বাড়তি আমেজ ছড়াতে থাকে গান-বাজনার আসর। রাত ৯টা। এফডিসির গেটটি যেন বুক উদম করে দাঁড়িয়ে আছে কাওরান বাজার এলাকার দিকে। বাইরে রয়েছে উৎসুক জনতার ভিড়। কেউ অপেক্ষা করছেন নায়ক বা নায়িকা দেখতে, কেউ আবার অপেক্ষা করছেন সুযোগের। গেটে দাঁড়ানো ভয়ঙ্কর গোঁফওয়ালা দারোয়ানকে ম্যানেজ করতে পারলেই ভেতরে ১৫ মিনিটের মজা! রাত ঘন হতেই বিশেষ এক শ্রেণীর লোকের আনাগোনা বেড়ে যায় মূল ফটকের সামনে। এরা যারা গেটে দাঁড়িয়ে আছেন ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় তারা কেউই অভিনয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তাহলে কেন তারা ভেতরে ঢুকতে চাইছেন? এমন এক প্রশ্নের জবাব খুঁজতে ভিড় ঠেলে গেটের সামনে যেতেই পথ আগলে দাঁড়ালেন সেই গোঁফওয়ালা প্রহরী। হাতে ইয়া মোটা লাঠি, যদিও এর প্রয়োগ খুব একটা হয় না। সাংবাদিক পরিচয় দিতেই তিনি আর ঝামেলা করলেন না।
ভেতরে পা ফেলতেই কেমন একটা থমথমে অনুভূতি। রাস্তার দু’ধারে শ্যুটিং সেটের লোকজন গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। আড্ডার পাশাপাশি কেউ ঠিক করছেন লাইট। কেউ আবার কাজ করছেন পরের দিনের শ্যুটিংয়ের সেট তৈরিতে। একটু এগিয়ে ক্যান্টিনের কাছে যেতেই যেন অন্যরকম পরিবেশের হাওয়া শরীর ছুঁয়ে যায়। সেখানেও গোল হয়ে চলছে নারী-পুরুষের আড্ডা। তবে রহস্যের ব্যাপারটা হচ্ছে ১০ বা ১৫ মিনিট পরপর একজন করে উঠে সোজা হেঁটে চলে যাচ্ছেন। ফিরছেনও ১০ বা ১৫ মিনিট পরে। কোথায় যাচ্ছেন তারা, কী এমন কাজ করছেন যে নিয়মিত ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে সময় লাগছে ফিরতে? রহস্যের জাল ছেদ করতে ধীরে ধীরে উঠে যাওয়া মানুষগুলোর পিছু নিয়ে দেখা যায়, সবাই ছোট ছোট পা ফেলে যাচ্ছেন মান্না ডিজিটাল হলের দিকে। বিড়ালের মতো নিঃশব্দে মান্না ডিজিটাল হলের কাছে যেতেই দেখা যায় ছোট একটি লোহার গেট দিয়ে সবাই একে একে প্রবেশ করছেন ঝর্ণা স্পটে। সোজা হেঁটে চলে যাচ্ছেন ঝর্ণা স্পটের ব্রিজের ওপারে। সেখানে আবার রয়েছে বসার জন্য সুন্দর বন্দোবস্ত। খুব সাবধানে পা ফেলে ঝর্ণা স্পটের পেছনে পৌঁছে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে চলছে নারী-পুরুষের সঙ্গম। পাশেই পড়ে রয়েছে অসংখ্য ব্যবহৃত টিস্যু ও নানা ব্র্যান্ডের প্যাকেট। প্রতিবেদকের উপস্থিতি টের পেতেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান তারা। ব্যস্ত হয়ে ছুটতে থাকেন এদিক ওদিক। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই নারীরাই দিনে কাজ করেন ছবির বিভিন্ন দৃশ্যে এক্সট্রা হিসেবে। আর রাতে কিছু বাড়তি উপার্জনের নেশায় চলে শরীর বিক্রি। পুরুষগুলোও কাজ করেন বিভিন্ন সেটে। রাত হলে তারাও চান নারী শরীরের ঘাম শুষতে।
চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের কেন্দ্র বলা হয় এফডিসিকে। এটা ধরতে গেলে দেশের নির্মাতাদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখানে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখে যে কেউই হতবাক হবেন। এখানে শুধু অনৈতিক কর্মকাণ্ডই চলছে এসব যারা করছেন তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ লোকেসনে ময়লা আবর্জনা ফেলে ব্যবহারের অনুপযোগী করে ফেলেছেন। উৎসঃ বাংলামেইল২৪ডটকম Share on facebook Share on email Share on print 1

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন