লাশের লাথি এবং আদুরীর মুখচ্ছবি
30 Sep, 2013
ছবিটি হয়তো আমরা ভুলে
গেছি, হয়তো ভুলিনি। রানা প্লাজায় ভবন ধসের দিনের ছবি। মেয়েটির মুখচ্ছবি
দেখা যায়নি। শুধু একখানা পা। কঙ্কন পরা যে পা উদ্ধত ছিল বাংলাদেশের দিকে।
যেন লাথি মারছিল আমাদের সবাইকে। লাশের লাথি খেয়ে হুঁশ ফেরার আশা করেছিলাম
আমরা। কিন্তু আমাদের হুঁশ যে ফিরেনি তার প্রমাণ হিসেবে হাজির হয়েছে আরেকটি
মুখচ্ছবি।
না, আদুরী লাশ হয়নি। সে মরেনি। তাকে পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে। ২৩শে সেপ্টেম্বর সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করেন লিলি নামের এক নারী। এরপর তিনি আদুরীকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আদুরীর মুখচ্ছবি ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। নির্মম নির্যাতনের শিকার মেয়েটির ছবি দেখে আঁতকে উঠি আমরা। কতই বা বয়স মেয়েটির। দশ কিংবা এগারো। বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিল আদুরী। যদিও খুব বেশি আদর তার জীবনে জোটেনি। নয় ভাই-বোনের সংসারের সপ্তম সদস্য আদুরী খুব কম বয়সেই চলে আসে ঢাকায়। ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল তার। ওই সংগ্রামে প্রতিনিয়ত গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সে। তবে আদুরী নিজেও হয়তো ভাবতে পারেনি নির্যাতন করে গৃহকর্ত্রী নওরীন আখতার নদী তাকে ফেলে দেবে ডাস্টবিনে। ছোট্ট মেয়েটি কি একটুও অবাক হয়নি মানুষের নির্মমতা দেখে। যে বয়সে তার যাওয়ার কথা ছিল স্কুলে, খেলার মাঠ হওয়ার কথা ছিল ঠিকানা সে বয়সে গৃহকর্মীর জীবন বেছে নিতে হয়েছে তাকে। মানুষের কাছে হয়তো সে বেশি কিছু আশা করেনি। হয়তো সামান্য ভালবাসা চেয়েছিল। বোকা মেয়ে কি সভ্য দুনিয়ার কাছে বেশি কিছু প্রত্যাশা করেছিল। মাসে ৫০০ টাকা বেতন কি বেশি কিছু?
ক্ষত-বিক্ষত আদুরীর ছবি কিছু পুরনো প্রশ্ন নতুন করে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। যান্ত্রিকতার স্পর্শে ক্রমশ মানুষ কি তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলছে? কোন দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে মানুষের? ইতিহাস যে যুগের মানুষকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করে সে যুগেও কি আদুরীরা এরকম নির্মম নির্যাতনের শিকার হতো। এটা ঠিক এখন ক’দিন আদুরীকে নিয়ে কিছু লেখালেখি হবে। বড় বড় মানুষেরা কিছু বাণী আউড়াবেন। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা লোকেরা টিভি ক্যামেরার আলোতে চোখের পানি ফেলবেন। এবং এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কিছুদিন পর সবাই আদুরীকে ভুলে যাবেন। আদুরী ফিরে যাবে তার সাধারণ জীবনে। হয়তো নতুন কোন বাসায় কাজে। হয়তো নতুন কোন নির্যাতনে। যতদিন আমাদের মৃত বিবেক না জাগবে ততদিন আদুরীদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হবে। কঙ্কন পরা মেয়েটি তার উদ্ধত পা আমাদের দিকে তাক করবে। আমাদের মৃত বিবেকের জন্য লাশের লাথিই প্রাপ্য।
না, আদুরী লাশ হয়নি। সে মরেনি। তাকে পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে। ২৩শে সেপ্টেম্বর সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করেন লিলি নামের এক নারী। এরপর তিনি আদুরীকে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আদুরীর মুখচ্ছবি ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। নির্মম নির্যাতনের শিকার মেয়েটির ছবি দেখে আঁতকে উঠি আমরা। কতই বা বয়স মেয়েটির। দশ কিংবা এগারো। বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিল আদুরী। যদিও খুব বেশি আদর তার জীবনে জোটেনি। নয় ভাই-বোনের সংসারের সপ্তম সদস্য আদুরী খুব কম বয়সেই চলে আসে ঢাকায়। ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল তার। ওই সংগ্রামে প্রতিনিয়ত গৃহকর্ত্রীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিল সে। তবে আদুরী নিজেও হয়তো ভাবতে পারেনি নির্যাতন করে গৃহকর্ত্রী নওরীন আখতার নদী তাকে ফেলে দেবে ডাস্টবিনে। ছোট্ট মেয়েটি কি একটুও অবাক হয়নি মানুষের নির্মমতা দেখে। যে বয়সে তার যাওয়ার কথা ছিল স্কুলে, খেলার মাঠ হওয়ার কথা ছিল ঠিকানা সে বয়সে গৃহকর্মীর জীবন বেছে নিতে হয়েছে তাকে। মানুষের কাছে হয়তো সে বেশি কিছু আশা করেনি। হয়তো সামান্য ভালবাসা চেয়েছিল। বোকা মেয়ে কি সভ্য দুনিয়ার কাছে বেশি কিছু প্রত্যাশা করেছিল। মাসে ৫০০ টাকা বেতন কি বেশি কিছু?
ক্ষত-বিক্ষত আদুরীর ছবি কিছু পুরনো প্রশ্ন নতুন করে আমাদের সামনে নিয়ে এসেছে। যান্ত্রিকতার স্পর্শে ক্রমশ মানুষ কি তার মানবিকতা হারিয়ে ফেলছে? কোন দিকে যাত্রা শুরু হয়েছে মানুষের? ইতিহাস যে যুগের মানুষকে বর্বর হিসেবে চিহ্নিত করে সে যুগেও কি আদুরীরা এরকম নির্মম নির্যাতনের শিকার হতো। এটা ঠিক এখন ক’দিন আদুরীকে নিয়ে কিছু লেখালেখি হবে। বড় বড় মানুষেরা কিছু বাণী আউড়াবেন। ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা লোকেরা টিভি ক্যামেরার আলোতে চোখের পানি ফেলবেন। এবং এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, কিছুদিন পর সবাই আদুরীকে ভুলে যাবেন। আদুরী ফিরে যাবে তার সাধারণ জীবনে। হয়তো নতুন কোন বাসায় কাজে। হয়তো নতুন কোন নির্যাতনে। যতদিন আমাদের মৃত বিবেক না জাগবে ততদিন আদুরীদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হবে। কঙ্কন পরা মেয়েটি তার উদ্ধত পা আমাদের দিকে তাক করবে। আমাদের মৃত বিবেকের জন্য লাশের লাথিই প্রাপ্য।
উৎসঃ মানবজমিন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন