শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৩

হাসিনার কথোপকথন রেকর্ড : মুন্নী সাহার ভিডিও ক্যাসেট জদ্ধ হলো যেভাবে

 
29 Sep, 2013
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তোপের মুখে পড়েছেন এটিএন নিউজের সাংবাদিক মুন্নী সাহা। এ ঘটনায় ঢাকা থেকে আগত সাংবাদিকরা অস্বস্তিতে পড়েন। আর ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার বিকালে। সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত্কার নিতে গেলে প্রশ্ন করার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী ক্ষিপ্ত হন এবং তার নিরাপত্তারক্ষী এসএসএফ মুন্নী সাহার ক্যামেরা কেড়ে নেয়। পরে ক্যাসেট রেখে ক্যামেরা ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘের মিডিয়া রুমে এ ঘটনাটি ছিল বাংলাদেশী সাংবাদিকদের মুখে মুখে। বিষয়টি নিয়ে মুন্নী সাহা ছিলেন নীরব। সরকারি খরচে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে নিউইয়র্কে আসা এ সাংবাদিকের এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার ঘটনায় সহকর্মীদের মাঝেও অস্বস্তি বিরাজ করে।
সূত্র জানায়, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা বিনা অনুমতিতে রেকর্ড করেন। ক্যাসেটটি নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়লে সেটি জব্দ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকালে এটিএন নিউজের হেড অব নিউজ মুন্নী সাহা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হোটেল রুমে তার সঙ্গে সাক্ষাত্ করতে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছিল ভিডিও ক্যামেরা। এটাকে অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাত্ হিসেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কথাবার্তা রেকর্ড করতে নিষেধ করেন। মুন্নী সাহাও কোনো কথা রেকর্ড না করার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় দু’জনের মধ্যে অনেক বিষয়ে কথা হয়। আর প্রধানমন্ত্রীর অগোচরে সব কথাই রেকর্ড হয়। মুন্নী বেরিয়ে গেলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করে ক্যাসেটটি জব্দ করার নির্দেশ দেন। এপর এসএসএফ ক্যামেরা থেকে ক্যাসেট খুলে নেয়।
অন্য সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্কার নিতে যান এটিএন নিউজের সিনিয়র সাংবাদিক মুন্নী সাহা। সাক্ষাত্কার নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে ‘সময় স্বল্পতার’ কারণে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে সময় দিতে রাজি হননি। অনেক অনুরোধের পর ৫ মিনিট সময় দিতে রাজি হন তিনি। সাক্ষাত্কারের একপর্যায়ে প্রশ্নবাণে জর্জরিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রাগতস্বরে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে তিনি ধমকের সুরে কথা বলেন। এ পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) সদস্যরা মুন্নী সাহাকে চলে যেতে বলেন এবং তার ক্যামেরা নিয়ে নেন তারা। পরে রেকর্ডিং করা ক্যাসেট রেখে দিয়ে মুন্নী সাহার ক্যামেরা ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে সাংবাদিকদের বলেছেন, অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাতের কথা বলে গোপনে কথোপকথন ভিডিও রেকর্ড করার ঘটনা ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
রাতেই ঘটনা জানাজানি হয়ে যায়। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে মুন্নী সাহাকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি অনেকেই বিশ্বাস করেননি। শুক্রবার বিকালে জাতিসংঘ মিডিয়া রুমে এ নিয়ে সাংবাদিকদের মাঝে ব্যাপক গুঞ্জন চলতে থাকে। সেখানে মুন্নী সাহাকে নীরব দেখা যায়।
একপর্যায়ে গুঞ্জন পৌঁছায় মুন্নী সাহার কানে। পরে মুন্নী সাহা এ নিয়ে টেলিভিশনের আরেকজন নারী সহকর্মীর কাছে সবার সামনেই জানতে চান তিনি এ ধরনের সংবাদ সবাইকে পরিবেশন করেছেন কিনা। ওই রিপোর্টার তটস্থ হয়ে জবাব দেন, ‘দিদি বিশ্বাস করেন আমি এমন কিছু বলিনি। আমি কাউকে কিছু বলিনি।’ উপস্থিত আরেক টেলিভিশন সাংবাদিক বলে ওঠেন, ‘হ্যাঁ, ওর কাছ থেকে আমরা কিছুই শুনিনি।’
পুরো বিকালটায় মুন্নী সাহা স্বাভাবিক হতে পারেননি। এমনকি জাতিসংঘ দফতরের পাশের নদীর মনোরম দৃশ্যও তার মনের কষ্ট দূর করতে পারেনি। সব সময় হাস্যোজ্জ্বল মুন্নী সাহার সঙ্গে নিউইয়র্কের এক সাংবাদিক ছবি তুলতে গিয়ে হাস্যরসের চেষ্টা করেও সাংবাদিক মুন্নী সাহাকে হাসানো সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, সাক্ষাতের সময় প্রধানমন্ত্রীর কথা গোপনে ক্যামেরায় ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে তার সফরসঙ্গী সাংবাদিক মুন্নী সাহার বিরুদ্ধে।
তবে নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন এটিএন নিউজের বার্তা প্রধান মুন্নী সাহা গোপনে কথা ধারণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর নির্দেশে নিরাপত্তারক্ষীরা তার কাছ থেকে ভিডিও টেপটি চেয়ে নেন।
বুধবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক সিটির গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাংবাদিকদের সাক্ষাতপর্বে এ ঘটনা ঘটে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্প্রার্থীদের একজন ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী।
তিনি বলেন, “মুন্নী সাহা যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে সময় সেখানে ছিলেন ইকবাল সোবহান চৌধুরীও। কক্ষ থেকে বের হয়ে আসার পরই এসএসএফ’র একজন অফিসার রেকর্ডার থেকে টেপ মুছে ফেলেন। সে সময় মুন্নী সাহা দুঃখ প্রকাশ করে চলে যান।”
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে এ মোমেন বলেন, “ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। তবে পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের একজন আমাকে তা জানান। বিষয়টি আমাকেও ব্যথিত করেছে। কারণ, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর মত মিডিয়া ফ্রেন্ডলি প্রধানমন্ত্রী খুব কমই দেখা যায়।”
মুন্নী সাহা টেলিফোনে বলেন, “গোপনে আমি কোনোকিছু ধারণ করিনি। আমার সঙ্গে ক্যামেরাম্যানও ছিল। সাক্ষাত্কার নেয়ার শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী পানি খাওয়ার জন্য থামলে তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী আমাকে বলেন, ‘সব কথাই তো রাজনৈতিক বিষয়ে হলো। সাউথ সাউথ পুরস্কারসহ এখানের কোনো বিষয়ই তো আসল না।’ তখন ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলে উঠেন, ‘এটা প্রচার না করাই ভালো।’ তখন এসএসএফ’র একজন টেপটি রেখে যেতে বললে আমি তার হাতে দেই।”
১৩৩ জনের প্রতিনিধি বহর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যান। প্রতিনিধি দলে কয়েকজন সাংবাদিকও রয়েছে।
http://www.bdtomorrow.net/newsdetail/detail/200/48206

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন