হরতালে অচল দেশ
28 Oct, 2013
আওয়ামী লীগ সরকারের
দানবীয় শাসনের প্রতিবাদে এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে
সারাদেশে গণবিস্ফোরণ ঘটেছে। ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৬০ ঘণ্টা টানা হরতালের
প্রথম দিনেই বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে পড়েছে দেশ। এদিন সারাদেশে সর্বাত্মক ও
নজিরবিহীন হরতাল পালিত হয়েছে। তবে বিরোধী দলের আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করে
নিরস্ত্র শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে সরকারের
ঘাতক বাহিনী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
১৮ দলীয় জোটের প্রথম দিনের হরতাল ছিল অন্যান্য হরতাল থেকে একেবারেই ভিন্ন। হরতাল সফল করতে এদিন রাজপথে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বহু সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র্যাব দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো হরতালকারীদের নির্বিচারে গুলি চালালেও জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যোগ দিলেও তারা সুবিধা করতে পারেনি; বরং প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং অফিসে আগুন দিয়েছে। সংঘর্ষে গতকাল যশোরে যুবলীগের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং পিরোজপুরে এক যুবলীগ ক্যাডার নিহত হয়েছে।
হরতাল চলাকালে গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটারদের রাস্তা ও রেলপথ অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, মুহুর্মুহু ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক মারমুখী অবস্থানে ছিল পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। অধিকাংশ জায়গায় পিকেটারদের দেখা মাত্রই গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে বিএনপি-জামায়াতের ৩ কর্মী নিহত হয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের পোশাক পরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় গতকাল ১৮ দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয়দের অস্ত্রের মহড়ার মধ্যে গতকালের হরতালে ছিল সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। সারাদেশে পিকেটাররাও ছিল মারমুখী। চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেটসহ সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে হরতালবিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে নামতেই পারেনি। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হয়েছে কম।
হরতাল চলাকালে সারাদেশে কয়েকশ’ গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
হরতালে পাবনার ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় জামায়াত কর্মী জুলহাস হোসেন মুন্নাফ, ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী মারুফ শেখ, যশোরের অভয়নগরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে গণপিটুনিতে স্থানীয় যুবলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলমগীর হোসেন শিমুল এবং পিরোজপুরের জিয়ানগরে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে স্বপন শীল নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় সিদ্দিক হোসেন নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ তার লাশ গুম করেছে। হরতালে সারাদেশে পুলিশ ও সরকারদলীয়দের হামলায় বিরোধী দলের শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ, ৬ শতাধিক আহত এবং দু’শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে পিকেটাররা। হরতালের শুরুতেই গাবতলী, সাভার-আশুলিয়া ও দনিয়ায় ১২টি বাসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এছাড়া মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়, রামপুরা, বাড্ডা, আজিমপুর, কাকরাইল, উত্তরা, মগবাজার, মহাখালী, নীলক্ষেত, কাফরুল, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, ধোলাইপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হরতালের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে।
পুরনো ঢাকার জজ আদালতের পুরাতন ভবনের সামনে দুটি, আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে দুটি, মিরপুরে বেসরকারি চ্যানের ২৪-এর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পিকেটার সন্দেহে ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা।
হরতালে রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য। হরতালের প্রথম দিনে গতকাল ঢাকার রাজপথে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। রাজধানীর ব্যস্ততম কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। রাজধানীর সব টার্মিনাল ছিল যাত্রীশূন্য।
দেশের স্কুল-কলেজগুলোও বন্ধ ছিল। এছাড়া ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এবং বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাচের খেলোয়াড়দের বহন করা যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
নজিরবিহীন হরতাল পালিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে। গতকাল ভোর থেকেই কড়া পিকেটিং করেছে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় হরতালবিরোধীরা মাঠে নামতেই পারেনি চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পিকেটাররা অন্ততপক্ষে ৫০টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতালের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকরা প্রশাসন ভবন অবরোধ করে রাখেন। চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ। রাজশাহীতে হরতাল সমর্থকের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকরা। খুলনায় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করেছে পিকেটাররা।
রংপুরের শঠিবাড়ী এলাকায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেছে পিকেটাররা। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে জামায়াত-শিবির ও যুবদল কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নোয়াখালীতে পুলিশের গাড়িতে পিকেটাররা হামলা চালালে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ পিকেটার গুলিবিদ্ধ হয়।
ভোলার বোরহানউদ্দিনে হরতাল সমর্থকদের মিছিলে বাধা, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনায়েত হোসেনসহ ৯ পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপির কমপক্ষে ৮৫ জন আহত হয়েছে।
হরতালের সমর্থনে গতকাল দুপুরে ফেনী শহরে বের হওয়া যুবদলের মিছিলে গুলি করেছে পুলিশ। এ সময় ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে।
হরতালে নেত্রকোনা গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল সন্ধ্যায় হরতালকারীরা সাতপাই এলাকায় জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান খানের ওপর হামলা চালালে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রায় একই সময় হরতালকারীরা বারহাট্টা রোডে আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএপির সংঘর্ষ হয়েছে। তবে বগুড়া শহরের অধিকাংশ এলাকা ছিল হরতাল সমর্থকদের দখলে। ভোলায় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে হরতাল ও অবরোধের কারণে এলাকায় সংবাদপত্রের কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। নাটোরে একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্তত ১২টি গাড়ি ভাংচুর করেছে পিকেটাররা। লালমনিরহাটে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় হরতাল সমর্থকরা। এছাড়া জয়পুরহাটে রূপসা ট্রেনে ভাংচুর চালিয়েছে পিকেটাররা। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ পিকেটার আহত হয়েছে। হবিগঞ্জে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে উভয় দলের ২০ জন আহত হয়েছে। আশুলিয়ায় অন্ততপক্ষে ১৫টি বাস ভাংচুর করেছে পিকেটাররা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পিকেটাররা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। অন্যদিকে পটুয়াখালীতে বিএনপি নেতার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
রাজধানীর হরতালচিত্র
মতিঝিল এলাকায় হরতালের সমর্থনে তেমন মিছিল-পিকেটিং না হলেও ওই এলাকায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হরতালে পিকেটারদের ঠেকাতে জলকামান ও রায়টকার প্রস্তুত করে রেখেছিল পুলিশ। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলিস্তান মোড় থেকে হরতালবিরোধী মোটরসাইকেল মিছিল বের করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিএনপি ও জামায়াতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এতে পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। এতে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বক্তব্য রাখেন।
সকাল সাড়ে ৬টায় যাত্রাবাড়ীর ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ অফিসে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা ওই আগুন নিভিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ার হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের সামনের রাস্তায় হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে শিবিরের নেতাকর্মীরা। পরে ওই মিছিলটি কিছু দূর সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ শিবিরের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। জবাবে তারা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সেখানে মোহাম্মদপুরগামী ঢাকা-তারাবো (জ-১১-১৩৬৬) নম্বরের একটি যাত্রবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এবং চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ শিবিরের এক নেতাকে আটক করে।
সকাল ৮টায় দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সামনের রাস্তায় যুবদলের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে যুবদল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার জন্য আশপাশের বাসা ও দোকানে অভিযান চালায় র্যাব।
সকাল ৭টায় টিকাটুলীর র্যাব-৩ কার্যালয়ের সামনে কে বা কারা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় হরতালের পিকেটারদের ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিমিছিল বের করে। এতে নেতৃত্ব দেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মো. মনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শ্যামপুর, বংশাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
দুপুর সোয়া ১২টায় শ্যামপুরের ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ছাত্রদলের প্রায় ৫০-৬০ নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে। এ সময় সেখানে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় বংশাল চৌরাস্তা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল একটি মিছিল বের করে। এ সময় সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে যায়।
সকাল সাড়ে ৭টায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্নার নেতৃত্বে অর্ধশত নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় মিছিল বের করে। মিছিলটি ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল করেছে ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক খালিদ মাহমুদের নেতৃত্বে মিছিলটি বাংলাবাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মু. দাইয়ান সালেহিন, ছাত্র-আন্দোলন সম্পাদক নূর মোহাম্মাদ, দফতর সম্পাদক আতিকুর রহমান প্রমুখ। দুপুর ১২টায় হরতালের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ প্রায় ২০ জন নিয়ে একটি মিছিল বের করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মিরপুর, গাবতলী, কাফরুল, তেজগাঁও
হরতালের শুরুতেই গাবতলী ও দনিয়ায় ৮টি বাসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। শনিবার ভোর ৪টায় গাবতলী বিআরটিসির দ্বিতল ছয়টি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে দুটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভোর ৪টায় ডিপোর পাঁচিল টপকে কয়েকজন যুবক তাড়াহুড়ো করে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের মিরপুর বিভাগীয় উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, পুড়ে যাওয়া বাসগুলো গাবতলী বিআরটিসি ডিপোর ভেতরে ছিল। ডিপোর বাইরে উঁচু প্রাচীর রয়েছে। এত বড় প্রাচীর থাকা সত্ত্বেও কে বা কারা আগুন দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাস ডিপোর এক কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।
সকালে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় পোড়ানো হয় পাবনা পরিবহনের একটি বাস। এ সময় সনি সিনেমা হলের দিকে কয়েকটি হাতবোমাও ফাটানো হয়।
কাফরুল আওয়ামী লীগ নেতাদের উস্কানিতে ওয়ার্ড বিএনপির দফতর সম্পাদক জাহিদ হাসান বাবুকে গতকাল আটক করে স্থানীয় থানা পুলিশ। গতকাল বিকাল ৫টায় তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে ধরে নিয়ে পুরনো পিকেটিংয়ের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার পরিবার জানায়, কোনো অভিযোগ খুঁজে না পেয়ে শুধু হয়রানি করার জন্য পুলিশ পুরনো মামলায় আটক দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
ভোর ৫টায় ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের আবাহনী মাঠের কাছে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাত কয়েকজন। সকাল ৬টায় মিরপুর প্রশিকা মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সাতজনকে আটক করে।
সকাল সাড়ে ৬টায় স্টেডিয়াম এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও স্টেডিয়াম লক্ষ করে ঢিল ছোড়ার চেষ্টাকালে যুবদল ও শিবিরের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন। রোববার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর কলাবাগানে তিনটি ককটেল ও ৫ জনকে আটকের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়, রামপুরা, বাড্ডা, আজিমপুর, কাকরাইল, উত্তরা, মগবাজার, মহাখালী, নীলক্ষেত, কাফরুল, যাত্রাবাড়ী, খিলাগাঁও, ধোলাইপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হরতলের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পুরনো ঢাকার জজ আদালতের পুরনো ভবনের সামনে দুটি, মিরপুরে বেসরকারি চ্যানেল ২৪-এর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পিকেটার সন্দেহে ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। বেলা দেড়টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রধান গেটের সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি। পরে তারা মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসের অফিসের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কে বা কারা রাজধানীর গ্রিন রোডে তাপসের অফিসের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে।
সকাল সোয়া ৯টায় সংসদ ভবন এলাকায় বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। এতে বিএনপির ৫ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যসহ ৭ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংসদ সদস্য আশিফা আশরাফি পাপিয়া বক্তৃতা করেন।
উত্তরা, গুলশান, রামপুরা, বনানী, বাড্ডা
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পুলিশ বক্সের সামনে কে বা কারা পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। এ সময় অদূরেই কয়েকজন পুলিশ ও র্যাব সদস্য টহল দিচ্ছিল। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এছাড়া আজমপুর ব্রিজের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনে সকাল ১০টায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে উত্তরার কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে গতকাল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ ২ জন ও পশ্চিম থানা পুলিশ জামায়াত কর্মীকে আটক করে।
সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তরার আজমপুর এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। দুপুর পৌনে ১২টায় রামপুরা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ হরতালের প্রতিবাদে মিছিল বের হয়। রামপুরা বাজার থেকে মিছিলটি চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আবার রামপুরা বাজারে আসে। এ সময় মিছিলের পেছনে ও সামনে পুলিশ পাহারা দেখা গেছে।
সকাল ১০টায় বনানী এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। তবে গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন মোড়ে র্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি চোখে পড়েছে। বনানীর বিভিন্ন মোড়ে রাস্তায় চলাচলরত মানুষের দেহ তল্লাশিও করে পুলিশ। বারিধারায় আমেরিকান এম্বাসি ও ভাটারা থানার সামনের সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন ছিল।
সকালে মধ্যবাড্ডায় বন্ধু পরিবহনের একটি ও তুরাগ পরিবহনের তিনটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। হরতালের সময় উত্তরা থেকে মালিবাগ ও পল্টন পর্যন্ত কিছু গাড়ি চলাচল করলেও গতকাল কম গাড়ি চলেছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় দু-একটি গাড়ি চললেও তাতে তেমন যাত্রী দেখা যায়নি। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট এলাকায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির। সেখান থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফকিরাপুলের দিকে চলে যায়। রোববার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বায়তুল মোকাররমের বিপরীত পাশের জনতা ব্যাংক শাখার কাচ ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেখানে তারা একটি অ্যাম্বুলেন্স ও পথচারীর মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এতে আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালায়।
১৮ দলীয় জোটের প্রথম দিনের হরতাল ছিল অন্যান্য হরতাল থেকে একেবারেই ভিন্ন। হরতাল সফল করতে এদিন রাজপথে অত্যন্ত সক্রিয় ছিল বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বহু সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও র্যাব দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর মতো হরতালকারীদের নির্বিচারে গুলি চালালেও জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যোগ দিলেও তারা সুবিধা করতে পারেনি; বরং প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং অফিসে আগুন দিয়েছে। সংঘর্ষে গতকাল যশোরে যুবলীগের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং পিরোজপুরে এক যুবলীগ ক্যাডার নিহত হয়েছে।
হরতাল চলাকালে গতকাল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটারদের রাস্তা ও রেলপথ অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর, আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ, মুহুর্মুহু ককটেলের বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক মারমুখী অবস্থানে ছিল পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা। অধিকাংশ জায়গায় পিকেটারদের দেখা মাত্রই গুলি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে বিএনপি-জামায়াতের ৩ কর্মী নিহত হয়েছে। অন্যদিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশের পোশাক পরে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় গতকাল ১৮ দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয়দের অস্ত্রের মহড়ার মধ্যে গতকালের হরতালে ছিল সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। সারাদেশে পিকেটাররাও ছিল মারমুখী। চট্টগ্রাম, বগুড়া, সিলেটসহ সব বিভাগীয় ও জেলা শহরে হরতালবিরোধী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে নামতেই পারেনি। আতঙ্কে সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হয়েছে কম।
হরতাল চলাকালে সারাদেশে কয়েকশ’ গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
হরতালে পাবনার ঈশ্বরদীতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় জামায়াত কর্মী জুলহাস হোসেন মুন্নাফ, ফরিদপুরের নগরকান্দায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দল কর্মী মারুফ শেখ, যশোরের অভয়নগরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে গণপিটুনিতে স্থানীয় যুবলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী আলমগীর হোসেন শিমুল এবং পিরোজপুরের জিয়ানগরে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে স্বপন শীল নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় সিদ্দিক হোসেন নামে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছে। স্থানীয় বিএনপির অভিযোগ, পুলিশ তার লাশ গুম করেছে। হরতালে সারাদেশে পুলিশ ও সরকারদলীয়দের হামলায় বিরোধী দলের শতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ, ৬ শতাধিক আহত এবং দু’শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে পিকেটাররা। হরতালের শুরুতেই গাবতলী, সাভার-আশুলিয়া ও দনিয়ায় ১২টি বাসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। এছাড়া মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়, রামপুরা, বাড্ডা, আজিমপুর, কাকরাইল, উত্তরা, মগবাজার, মহাখালী, নীলক্ষেত, কাফরুল, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, ধোলাইপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হরতালের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে।
পুরনো ঢাকার জজ আদালতের পুরাতন ভবনের সামনে দুটি, আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে দুটি, মিরপুরে বেসরকারি চ্যানের ২৪-এর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পিকেটার সন্দেহে ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা।
হরতালে রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য। হরতালের প্রথম দিনে গতকাল ঢাকার রাজপথে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল না বললেই চলে। রাজধানীর ব্যস্ততম কয়েকটি বাসস্ট্যান্ডের মধ্যে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস। রাজধানীর সব টার্মিনাল ছিল যাত্রীশূন্য।
দেশের স্কুল-কলেজগুলোও বন্ধ ছিল। এছাড়া ‘ও’ লেভেল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা এবং বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ম্যাচের খেলোয়াড়দের বহন করা যানবাহন হরতালের আওতামুক্ত ছিল বলে জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
নজিরবিহীন হরতাল পালিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগজুড়ে। গতকাল ভোর থেকেই কড়া পিকেটিং করেছে ১৮ দলের নেতাকর্মীরা। এ সময় হরতালবিরোধীরা মাঠে নামতেই পারেনি চট্টগ্রামের অধিকাংশ এলাকায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় পিকেটাররা অন্ততপক্ষে ৫০টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতালের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত শিক্ষকরা প্রশাসন ভবন অবরোধ করে রাখেন। চাঁদপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে পুলিশ। রাজশাহীতে হরতাল সমর্থকের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বরিশালে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে এবং গাছের গুঁড়ি ফেলে পিকেটিং করেছে হরতাল সমর্থকরা। খুলনায় বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করেছে পিকেটাররা।
রংপুরের শঠিবাড়ী এলাকায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেছে পিকেটাররা। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে জামায়াত-শিবির ও যুবদল কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। নোয়াখালীতে পুলিশের গাড়িতে পিকেটাররা হামলা চালালে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১০ পিকেটার গুলিবিদ্ধ হয়।
ভোলার বোরহানউদ্দিনে হরতাল সমর্থকদের মিছিলে বাধা, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের যৌথ হামলায় বোরহানউদ্দিন থানার ওসি এনায়েত হোসেনসহ ৯ পুলিশ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ-বিএনপির কমপক্ষে ৮৫ জন আহত হয়েছে।
হরতালের সমর্থনে গতকাল দুপুরে ফেনী শহরে বের হওয়া যুবদলের মিছিলে গুলি করেছে পুলিশ। এ সময় ১৫ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে।
হরতালে নেত্রকোনা গতকাল রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল সন্ধ্যায় হরতালকারীরা সাতপাই এলাকায় জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিউর রহমান খানের ওপর হামলা চালালে তিনি গুরুতর আহত হন। প্রায় একই সময় হরতালকারীরা বারহাট্টা রোডে আওয়ামী লীগের দুই কর্মীকে কুপিয়ে জখম করে।
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএপির সংঘর্ষ হয়েছে। তবে বগুড়া শহরের অধিকাংশ এলাকা ছিল হরতাল সমর্থকদের দখলে। ভোলায় পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে হরতাল ও অবরোধের কারণে এলাকায় সংবাদপত্রের কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারেনি। নাটোরে একটি অ্যাম্বুলেন্সসহ অন্তত ১২টি গাড়ি ভাংচুর করেছে পিকেটাররা। লালমনিরহাটে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় হরতাল সমর্থকরা। এছাড়া জয়পুরহাটে রূপসা ট্রেনে ভাংচুর চালিয়েছে পিকেটাররা। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়। সিরাজগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ৩০ পিকেটার আহত হয়েছে। হবিগঞ্জে হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে উভয় দলের ২০ জন আহত হয়েছে। আশুলিয়ায় অন্ততপক্ষে ১৫টি বাস ভাংচুর করেছে পিকেটাররা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পিকেটাররা ছাত্রলীগের দুই কর্মীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে। অন্যদিকে পটুয়াখালীতে বিএনপি নেতার পায়ের রগ কেটে দিয়েছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা।
রাজধানীর হরতালচিত্র
মতিঝিল এলাকায় হরতালের সমর্থনে তেমন মিছিল-পিকেটিং না হলেও ওই এলাকায় পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের তত্পরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। হরতালে পিকেটারদের ঠেকাতে জলকামান ও রায়টকার প্রস্তুত করে রেখেছিল পুলিশ। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গুলিস্তান মোড় থেকে হরতালবিরোধী মোটরসাইকেল মিছিল বের করে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা বিএনপি ও জামায়াতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এতে পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। এতে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বক্তব্য রাখেন।
সকাল সাড়ে ৬টায় যাত্রাবাড়ীর ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ অফিসে কে বা কারা অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা ওই আগুন নিভিয়ে ফেলে। খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
অন্যদিকে সকাল সাড়ে ৮টায় যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়ার হামদর্দ ল্যাবরেটরিজের সামনের রাস্তায় হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে শিবিরের নেতাকর্মীরা। পরে ওই মিছিলটি কিছু দূর সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ শিবিরের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। জবাবে তারা পুলিশের প্রতি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় সেখানে মোহাম্মদপুরগামী ঢাকা-তারাবো (জ-১১-১৩৬৬) নম্বরের একটি যাত্রবাহী বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এবং চারটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশ শিবিরের এক নেতাকে আটক করে।
সকাল ৮টায় দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের সামনের রাস্তায় যুবদলের নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে যুবদল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করার জন্য আশপাশের বাসা ও দোকানে অভিযান চালায় র্যাব।
সকাল ৭টায় টিকাটুলীর র্যাব-৩ কার্যালয়ের সামনে কে বা কারা তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। যাত্রাবাড়ী এলাকায় হরতালের পিকেটারদের ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিমিছিল বের করে। এতে নেতৃত্ব দেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি মো. মনোয়ারুল ইসলাম। এ সময় পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শ্যামপুর, বংশাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
দুপুর সোয়া ১২টায় শ্যামপুরের ধোলাইপাড় বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ছাত্রদলের প্রায় ৫০-৬০ নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে। এ সময় সেখানে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
সকাল সাড়ে ৮টায় বংশাল চৌরাস্তা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দল একটি মিছিল বের করে। এ সময় সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা সেখান থেকে চলে যায়।
সকাল সাড়ে ৭টায় হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক মুন্নার নেতৃত্বে অর্ধশত নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন লক্ষ্মীবাজার এলাকায় মিছিল বের করে। মিছিলটি ভিক্টোরিয়া পার্কের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পুরান ঢাকার বাংলাবাজার এলাকায় হরতাল সমর্থনে মিছিল করেছে ছাত্রশিবির জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক খালিদ মাহমুদের নেতৃত্বে মিছিলটি বাংলাবাজারের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মু. দাইয়ান সালেহিন, ছাত্র-আন্দোলন সম্পাদক নূর মোহাম্মাদ, দফতর সম্পাদক আতিকুর রহমান প্রমুখ। দুপুর ১২টায় হরতালের প্রতিবাদে ছাত্রলীগ প্রায় ২০ জন নিয়ে একটি মিছিল বের করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে।
মিরপুর, গাবতলী, কাফরুল, তেজগাঁও
হরতালের শুরুতেই গাবতলী ও দনিয়ায় ৮টি বাসে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। শনিবার ভোর ৪টায় গাবতলী বিআরটিসির দ্বিতল ছয়টি বাসে আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে দুটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ভোর ৪টায় ডিপোর পাঁচিল টপকে কয়েকজন যুবক তাড়াহুড়ো করে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশের মিরপুর বিভাগীয় উপকমিশনার ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, পুড়ে যাওয়া বাসগুলো গাবতলী বিআরটিসি ডিপোর ভেতরে ছিল। ডিপোর বাইরে উঁচু প্রাচীর রয়েছে। এত বড় প্রাচীর থাকা সত্ত্বেও কে বা কারা আগুন দিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাস ডিপোর এক কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে।
সকালে মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় পোড়ানো হয় পাবনা পরিবহনের একটি বাস। এ সময় সনি সিনেমা হলের দিকে কয়েকটি হাতবোমাও ফাটানো হয়।
কাফরুল আওয়ামী লীগ নেতাদের উস্কানিতে ওয়ার্ড বিএনপির দফতর সম্পাদক জাহিদ হাসান বাবুকে গতকাল আটক করে স্থানীয় থানা পুলিশ। গতকাল বিকাল ৫টায় তার বাসায় তল্লাশি চালিয়ে তাকে ধরে নিয়ে পুরনো পিকেটিংয়ের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার পরিবার জানায়, কোনো অভিযোগ খুঁজে না পেয়ে শুধু হয়রানি করার জন্য পুলিশ পুরনো মামলায় আটক দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
ভোর ৫টায় ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের আবাহনী মাঠের কাছে সাতটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাত কয়েকজন। সকাল ৬টায় মিরপুর প্রশিকা মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা একটি ঝটিকা মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে সাতজনকে আটক করে।
সকাল সাড়ে ৬টায় স্টেডিয়াম এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও স্টেডিয়াম লক্ষ করে ঢিল ছোড়ার চেষ্টাকালে যুবদল ও শিবিরের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন। রোববার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর কলাবাগানে তিনটি ককটেল ও ৫ জনকে আটকের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া মিরপুর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, পুরনো ঢাকা, তেজগাঁও নাবিস্কো মোড়, রামপুরা, বাড্ডা, আজিমপুর, কাকরাইল, উত্তরা, মগবাজার, মহাখালী, নীলক্ষেত, কাফরুল, যাত্রাবাড়ী, খিলাগাঁও, ধোলাইপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় হরতলের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ও ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটেছে। পুরনো ঢাকার জজ আদালতের পুরনো ভবনের সামনে দুটি, মিরপুরে বেসরকারি চ্যানেল ২৪-এর গাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে পিকেটার সন্দেহে ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। বেলা দেড়টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের প্রধান গেটের সামনে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি। পরে তারা মোটরসাইকেলে চড়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ ও নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপসের অফিসের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কে বা কারা রাজধানীর গ্রিন রোডে তাপসের অফিসের সামনে ককটেল নিক্ষেপ করে।
সকাল সোয়া ৯টায় সংসদ ভবন এলাকায় বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা হরতালের সমর্থনে একটি মিছিল বের করে। এতে বিএনপির ৫ সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্যসহ ৭ সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। পরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সংসদ সদস্য আশিফা আশরাফি পাপিয়া বক্তৃতা করেন।
উত্তরা, গুলশান, রামপুরা, বনানী, বাড্ডা
দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর আবদুল্লাহপুর পুলিশ বক্সের সামনে কে বা কারা পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি। এ সময় অদূরেই কয়েকজন পুলিশ ও র্যাব সদস্য টহল দিচ্ছিল। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। এছাড়া আজমপুর ব্রিজের সামনে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় হরতাল সমর্থকরা। বিমানবন্দর রেলস্টেশনের সামনে সকাল ১০টায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে উত্তরার কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগে গতকাল বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। দুপুরে উত্তরা পূর্ব থানা পুলিশ ২ জন ও পশ্চিম থানা পুলিশ জামায়াত কর্মীকে আটক করে।
সকাল সাড়ে ১১টায় উত্তরার আজমপুর এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতের একটি মিছিল বের হলে পুলিশ ধাওয়া দেয়। দুপুর পৌনে ১২টায় রামপুরা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ হরতালের প্রতিবাদে মিছিল বের হয়। রামপুরা বাজার থেকে মিছিলটি চৌধুরীপাড়া পর্যন্ত গিয়ে ঘুরে আবার রামপুরা বাজারে আসে। এ সময় মিছিলের পেছনে ও সামনে পুলিশ পাহারা দেখা গেছে।
সকাল ১০টায় বনানী এলাকায় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। তবে গুলশান ও বনানীর বিভিন্ন মোড়ে র্যাব ও পুলিশের কড়া নজরদারি চোখে পড়েছে। বনানীর বিভিন্ন মোড়ে রাস্তায় চলাচলরত মানুষের দেহ তল্লাশিও করে পুলিশ। বারিধারায় আমেরিকান এম্বাসি ও ভাটারা থানার সামনের সড়কে অতিরিক্ত পুলিশ ও র্যাব সদস্য মোতায়েন ছিল।
সকালে মধ্যবাড্ডায় বন্ধু পরিবহনের একটি ও তুরাগ পরিবহনের তিনটি গাড়ির গ্লাস ভাঙচুর করে হরতাল সমর্থকরা। হরতালের সময় উত্তরা থেকে মালিবাগ ও পল্টন পর্যন্ত কিছু গাড়ি চলাচল করলেও গতকাল কম গাড়ি চলেছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক থাকায় দু-একটি গাড়ি চললেও তাতে তেমন যাত্রী দেখা যায়নি। হরতালের সমর্থনে রাজধানীর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট এলাকায় সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় মিছিল করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির। সেখান থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে দৈনিক বাংলা মোড় হয়ে কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে ফকিরাপুলের দিকে চলে যায়। রোববার এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বায়তুল মোকাররমের বিপরীত পাশের জনতা ব্যাংক শাখার কাচ ভাঙচুর করা হয় এবং কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সেখানে তারা একটি অ্যাম্বুলেন্স ও পথচারীর মোটরসাইকেলে আগুন দেয়। এতে আশপাশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে তারা রাস্তায় টায়ার জ্বালায়।
উৎসঃ আমার দেশ
http://www.bdtomorrow.com/newsdetail/detail/200/52141
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন