২৮ অক্টোবর : বর্বরতার সেই দিন আজ
28 Oct, 2013
আওয়ামী বর্বরতার প্রতীক সেই ভয়াল ২৮ অক্টোবর আজ। মানবতা-মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে লগি-বৈঠাধারী হায়েনার তাণ্ডব কত যে ভয়ঙ্কর, এদিন তা দেখেছে বিশ্ববাসী। আজ থেকে সাত বছর আগে ২০০৬ সালের এই দিনে পল্টন মোড়ে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে ৭ জনকে হত্যা করে। মহাজোট নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় শুধু হত্যাই নয়, এরপর মৃতদেহের ওপর তারা উল্লাস-নৃত্য করে। সাপকে যেভাবে পিটিয়ে মারা হয়, সেভাবেই মারা হয়েছিল মানুষকে। টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ভয়াল সেই দৃশ্য দেখে গোটা বিশ্ববিবেক সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আজ সাত বছর পরও এই হায়েনাদের আচরণে একটু পরিবর্তন হয়নি। এখনও তাদের বর্বরতা চলছে ভিন্নভাবে, নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের সাহায্যে। গত কয়েক দিনে এরকম বর্বরতার শিকার হয়েছেন বহু মানুষ।
সেই ২৮ অক্টোবরের প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে হায়েনার মতো উল্লাস প্রকাশের সেই দৃশ্য মনে হলে মানুষ আজও শিউরে ওঠে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি এরই মধ্যে নির্বাহী আদেশবলে নির্লজ্জভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। মহাজোটের লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়া হলেও ওই লাশের দায় কে নেবে? এ প্রশ্ন আজ স্বজন হারানো পরিবারসহ দেশবাসীর। বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা সেদিন সারাদেশে চালিয়েছে এই নারকীয় তাণ্ডব। ওইদিন লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডবে ঢাকাসহ সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ঢাকায় নিহত হয়েছিল ৭ জন। ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর ৩ দিনে নিহত হয়েছিল চারদলীয় জোটের ৫৪ নেতাকর্মী। ওইদিনের ঘটনায় প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে এখনও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই ঘটনা বাংলাদেশ সম্পর্কে গোটা বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়। সেই পৈশাচিক ঘটনার রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। বিচার হয়নি একজন অপরাধীরও। ওইদিনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পথ ধরে আসে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ওয়ান-ইলেভেন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় আসে সেনা সমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকার ও বর্তমান মহাজোট সরকার। জরুরি অবস্থার সরকার নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে আর বর্তমান সরকার মামলাটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিয়ে খুনিদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়।
সেদিন যা ঘটেছিল : ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তার ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশব্যাপী শুরু হয় লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডব। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অফিসসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে চালানো হয় পৈশাচিক হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় অনেক অফিস ও বাড়িঘর। পরদিন চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই সভার মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাত্ করেই বেলা ১১টার দিকে লগি-বৈঠা ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। পুরো পল্টনজুড়ে চলতে থাকে লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডব। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকেন নিরস্ত্র জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের মেধাবী ছাত্র ও শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার লাশের ওপর উঠে নৃত্য করতে করতে উল্লাস প্রকাশ করে। এ সময় তারা কয়েকজন জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেও পুলিশ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। পুলিশের সামনেই জামায়াত কর্মী মোশাররফকে রক্তাক্ত অবস্থায় মারতে থাকলেও পুলিশ বাঁশিতে একটি বারের জন্য হুইসেলও দেয়নি সেদিন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে জামায়াতের সমাবেশ শুরু হয়। মাওলানা নিজামীর বক্তব্য শুরু হওয়ার পর নির্মাণাধীন র্যাংগস টাওয়ারের ছাদ থেকে সমাবেশ লক্ষ্য করে ১০-১২টি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দফায় দফায় গুলি ছোড়ে লগি-বৈঠা বাহিনীর লোকেরা। সেদিন তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি পথচারী, এমনকি ছোট্ট শিশুরাও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের তাণ্ডব। সেদিন পুলিশের নির্লিপ্ততা ও নীরব দর্শকের ভূমিকা জনমনে হাজারও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মামলা প্রত্যাহার : জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। যুবমৈত্রীর পক্ষ থেকে জামায়াত নেতাদের আসামি করে আরও একটি মামলা করা হয়। যুবমৈত্রীর মামলায় ১০ জামায়াত নেতাকে অভিযুক্ত করে ১১ এপ্রিল চার্জশিট দেয়া হয়। জামায়াতের দায়ের করা মামলাটি পল্টন থানা ও পুলিশ তদন্ত করে ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেয়। চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি’র সাব-ইন্সপেক্টর এনামুল হক। চার্জশিট দাখিলের পর একই বছর ২২ এপ্রিল তা গ্রহণ করেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল এক আদেশে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। সারাদেশে লগি-বৈঠা নিয়ে মহাজোট নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়ায় এ মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চার্জশিটে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে এ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতে আদালত বাদীপক্ষ ও নিহতদের পরিবারের বক্তব্য গ্রহণ ছাড়াই একতরফ মামলাটি বাতিল করে দেন। অপরদিকে ওই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কাউন্টার মামলা হিসেবে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মহাজোটের দায়ের করা মামলাটি সরকার এখনও প্রত্যাহার করেনি।
আজও থামেনি নিহতদের পরিবারের কান্না : ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডবে নিহত হয়েছিল ছাত্রশিবিরের সদস্য স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম, হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন, লালবাগের জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন, জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান হাবিব, জুরাইনের জামায়াত কর্মী হাজী আনোয়ারুল্লার ছেলে জসিম, সিদ্ধিরগঞ্জের আবদুল্লাহ আল ফয়সাল। একই সময় যুবমৈত্রীর কর্মী রাসেল আহমদ নিহত হয়। পরে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুম। একই দিন গাজীপুরে মারা যান জামায়াত কর্মী রুহুল আমিন, নীলফামারীতে মারা যান জামায়াত কর্মী সাবের হোসেন, মাগুরায় আরাফাত হোসেন সবুজ, মেহেরপুরে আব্বাস আলী ও সাতক্ষীরায় জাবিদ আলী। হামলার তিন বছর পার হলেও এখনও শোকের সাগরে ভাসছে নিহতদের পরিবার। মহাজোট নেতাকর্মীদের হামলায় আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন। পাঁচ বছর ধরে এ ঘটনার বিচার দাবি জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
আওয়ামী বর্বরতার প্রতীক সেই ভয়াল ২৮ অক্টোবর আজ। মানবতা-মনুষ্যত্বের বিরুদ্ধে লগি-বৈঠাধারী হায়েনার তাণ্ডব কত যে ভয়ঙ্কর, এদিন তা দেখেছে বিশ্ববাসী। আজ থেকে সাত বছর আগে ২০০৬ সালের এই দিনে পল্টন মোড়ে আওয়ামী লীগসহ মহাজোট নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে প্রকাশ্যে ৭ জনকে হত্যা করে। মহাজোট নেতাকর্মীরা লগি-বৈঠা দিয়ে বর্বরোচিত কায়দায় শুধু হত্যাই নয়, এরপর মৃতদেহের ওপর তারা উল্লাস-নৃত্য করে। সাপকে যেভাবে পিটিয়ে মারা হয়, সেভাবেই মারা হয়েছিল মানুষকে। টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ভয়াল সেই দৃশ্য দেখে গোটা বিশ্ববিবেক সেদিন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।
আজ সাত বছর পরও এই হায়েনাদের আচরণে একটু পরিবর্তন হয়নি। এখনও তাদের বর্বরতা চলছে ভিন্নভাবে, নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের সাহায্যে। গত কয়েক দিনে এরকম বর্বরতার শিকার হয়েছেন বহু মানুষ।
সেই ২৮ অক্টোবরের প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ ও মুহুর্মুহু বোমা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা করে হায়েনার মতো উল্লাস প্রকাশের সেই দৃশ্য মনে হলে মানুষ আজও শিউরে ওঠে।
এ ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি এরই মধ্যে নির্বাহী আদেশবলে নির্লজ্জভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার। মহাজোটের লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়া হলেও ওই লাশের দায় কে নেবে? এ প্রশ্ন আজ স্বজন হারানো পরিবারসহ দেশবাসীর। বিচারের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, লগি-বৈঠাধারী সন্ত্রাসীরা সেদিন সারাদেশে চালিয়েছে এই নারকীয় তাণ্ডব। ওইদিন লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডবে ঢাকাসহ সারাদেশে মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ঢাকায় নিহত হয়েছিল ৭ জন। ২৬ থেকে ২৮ অক্টোবর ৩ দিনে নিহত হয়েছিল চারদলীয় জোটের ৫৪ নেতাকর্মী। ওইদিনের ঘটনায় প্রিয় মানুষটিকে হারিয়ে এখনও দুঃসহ অবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে তাদের পরিবার। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা বিশ্বের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। জাতিসংঘের তত্কালীন মহাসচিব থেকে শুরু করে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ওই ঘটনা বাংলাদেশ সম্পর্কে গোটা বিশ্বে নেতিবাচক ধারণার জন্ম দেয়। সেই পৈশাচিক ঘটনার রহস্য আজও উদ্ঘাটিত হয়নি। বিচার হয়নি একজন অপরাধীরও। ওইদিনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির পথ ধরে আসে বহুল আলোচিত-সমালোচিত ওয়ান-ইলেভেন। তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় আসে সেনা সমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকার ও বর্তমান মহাজোট সরকার। জরুরি অবস্থার সরকার নৃশংস ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করে আর বর্তমান সরকার মামলাটি সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিয়ে খুনিদের হত্যার দায় থেকে মুক্তি দেয়।
সেদিন যা ঘটেছিল : ২০০৬ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রেডিও-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তার ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই দেশব্যাপী শুরু হয় লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডব। বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত অফিসসহ নেতাকর্মীদের বাড়িতে চালানো হয় পৈশাচিক হামলা, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয় অনেক অফিস ও বাড়িঘর। পরদিন চারদলীয় জোট সরকারের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সকাল থেকেই সভার মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। হঠাত্ করেই বেলা ১১টার দিকে লগি-বৈঠা ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা জামায়াতের সমাবেশস্থলে হামলা চালায়। পুরো পল্টনজুড়ে চলতে থাকে লগি-বৈঠা বাহিনীর তাণ্ডব। লগি-বৈঠা আর অস্ত্রধারীদের হাতে একের পর এক আহত হতে থাকেন নিরস্ত্র জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীরা। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের মেধাবী ছাত্র ও শিবির নেতা মুজাহিদুল ইসলামকে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার লাশের ওপর উঠে নৃত্য করতে করতে উল্লাস প্রকাশ করে। এ সময় তারা কয়েকজন জামায়াত ও শিবির নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। কাছে দাঁড়িয়ে থাকলেও পুলিশ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। পুলিশের সামনেই জামায়াত কর্মী মোশাররফকে রক্তাক্ত অবস্থায় মারতে থাকলেও পুলিশ বাঁশিতে একটি বারের জন্য হুইসেলও দেয়নি সেদিন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বায়তুল মোকাররমের উত্তর সড়কে জামায়াতের সমাবেশ শুরু হয়। মাওলানা নিজামীর বক্তব্য শুরু হওয়ার পর নির্মাণাধীন র্যাংগস টাওয়ারের ছাদ থেকে সমাবেশ লক্ষ্য করে ১০-১২টি বোমা নিক্ষেপ করা হয়। প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে দফায় দফায় গুলি ছোড়ে লগি-বৈঠা বাহিনীর লোকেরা। সেদিন তাদের আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি পথচারী, এমনকি ছোট্ট শিশুরাও। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তাদের তাণ্ডব। সেদিন পুলিশের নির্লিপ্ততা ও নীরব দর্শকের ভূমিকা জনমনে হাজারও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
মামলা প্রত্যাহার : জামায়াত-শিবিরের ৭ নেতাকর্মী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ৩টি মামলা দায়ের করা হয়। যুবমৈত্রীর পক্ষ থেকে জামায়াত নেতাদের আসামি করে আরও একটি মামলা করা হয়। যুবমৈত্রীর মামলায় ১০ জামায়াত নেতাকে অভিযুক্ত করে ১১ এপ্রিল চার্জশিট দেয়া হয়। জামায়াতের দায়ের করা মামলাটি পল্টন থানা ও পুলিশ তদন্ত করে ৪৬ জনকে অভিযুক্ত করে ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আদালতে চার্জশিট দেয়। চার্জশিট দাখিল করেন ডিবি’র সাব-ইন্সপেক্টর এনামুল হক। চার্জশিট দাখিলের পর একই বছর ২২ এপ্রিল তা গ্রহণ করেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল এক আদেশে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন। সারাদেশে লগি-বৈঠা নিয়ে মহাজোট নেতাকর্মীদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার নির্দেশ দেয়ায় এ মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চার্জশিটে হুকুমের আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে এ মামলাকে রাজনৈতিক মামলা হিসেবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতে আদালত বাদীপক্ষ ও নিহতদের পরিবারের বক্তব্য গ্রহণ ছাড়াই একতরফ মামলাটি বাতিল করে দেন। অপরদিকে ওই ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কাউন্টার মামলা হিসেবে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মহাজোটের দায়ের করা মামলাটি সরকার এখনও প্রত্যাহার করেনি।
আজও থামেনি নিহতদের পরিবারের কান্না : ২৮ অক্টোবরের তাণ্ডবে নিহত হয়েছিল ছাত্রশিবিরের সদস্য স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্র মুজাহিদুল ইসলাম, হাফেজ গোলাম কিবরিয়া শিপন, লালবাগের জামায়াত কর্মী জসিম উদ্দিন, জামায়াত কর্মী হাবিবুর রহমান হাবিব, জুরাইনের জামায়াত কর্মী হাজী আনোয়ারুল্লার ছেলে জসিম, সিদ্ধিরগঞ্জের আবদুল্লাহ আল ফয়সাল। একই সময় যুবমৈত্রীর কর্মী রাসেল আহমদ নিহত হয়। পরে হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান সাইফুল্লাহ মুহাম্মদ মাসুম। একই দিন গাজীপুরে মারা যান জামায়াত কর্মী রুহুল আমিন, নীলফামারীতে মারা যান জামায়াত কর্মী সাবের হোসেন, মাগুরায় আরাফাত হোসেন সবুজ, মেহেরপুরে আব্বাস আলী ও সাতক্ষীরায় জাবিদ আলী। হামলার তিন বছর পার হলেও এখনও শোকের সাগরে ভাসছে নিহতদের পরিবার। মহাজোট নেতাকর্মীদের হামলায় আহতদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে কষ্টের জীবন কাটাচ্ছেন। পাঁচ বছর ধরে এ ঘটনার বিচার দাবি জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
উৎসঃ আমার দেশ
http://www.bdtomorrow.com/newsdetail/detail/200/52144
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন