দিল্লি বৈঠক: দেশের ভাগ্য যখন বিদেশীদের হাতে
31 Oct, 2013
আমীর খসরু
ঢাকা: বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি নিজে তার নিজের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কখনই স্বাধীন ও সার্বভৌম ভাবে নিতে পেরেছে - এমনটা কারো স্মৃতিতে আছে বলে মনে হয় না। সব সময়ই বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থাকেই - তা সে প্রভূ হোক বা বন্ধু নামধারীই হোক। কখনও মৃদু চাপ, কখনও প্রবল চাপ আবার কখনও জোর করে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত এই দেশটিকে বার বার হজম করতে হয়েছে নিজেদের অক্ষমতা আর অযোগ্যতার কারণে। আর এটা হজম করার প্রেক্ষাপট যতোটা না বিদেশীরা তৈরি করেছে তার চেয়ে হাজার গুণে আমরা দায়ী তাদের এমন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। একটি দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে আগে কিংবা এখনও - একটি ভূখণ্ড, জনগোষ্ঠী, পতাকা ইত্যাকার কিছু বিষয়ের উল্লেখ আছে। তবে সম্ভবত এখন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাটি পরিবর্তনের সময় এসে গেছে। এবং দেশি এবং বিদেশীদের চিন্তার জগতে এমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্যও করা যাচ্ছে। আমাদের মতো দেশ কী স্বাধীন ভাবে কোনো অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিদেশীদের অনুমোদন বা অনুমতি ছাড়া? ছোট একটি স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হয়। কাজেই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা এবং যোগ্যতা হারিয়ে বসে আছি বলেই এখন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাটি পরিবর্তনের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় সম্পর্কে সক্ষমতার ব্যাপারে ভাববার সময় এসেছে। মুখে মুখে স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্বের কথা বলা যায় বটে, তবে প্রকৃতার্থে কতোটা স্বাধীন এবং সার্বভৌম তা বোঝার জন্য তাত্ত্বিক কচকচানিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। চারিদিকে চোখ ঘোরালে, চোখ কান খোলা রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
আগেই এমনটা বলা হয়েছে যে, আমাদের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে কোনো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটি আমরাই হারিয়ে বসে আছি। কেউ প্রকাশ্য যুদ্ধ করে জোর করে এই অধিকারটি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জন্ম নেয়ার পরে ছিনিয়ে নিয়েছে তা নয়। আমাদের রাজনীতিকদের দক্ষতা, প্রজ্ঞা এবং সুদূর-প্রসারী চিন্তার হীনতা - দীনতা এবং নানা কিছু পাওয়ার লোভ এই সর্বনাশটি করে দেয়ার ফলশ্র“তিতে শাসক শ্রেণী বরাবরই নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে নির্বিকার বসে আছে। এমন নির্লিপ্ততা যে কতো বড় ভয়ঙ্কর হতে পারে তা এখন মর্মে মর্মে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারছেন। আর বিদেশীরা তাই প্রথমে বৈঠকখানায় এবং শেষমেষ একেবারে অন্দর মহলে ঢুকে পড়েছে।
একটি ছোট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরাল - যাকে সবাই আই কে গুজরাল নামেই বেশি চেনেন। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ ভাগে এসে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আজীবন তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। বিশেষ করে কূটনৈতিক এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে তার মেধা এবং প্রজ্ঞা ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। কূটনৈতিক সংবাদদাতা থাকার সুবাদে অসংখ্যবার তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি ঢাকায় এবং দিল্লিতে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে আলাপচারিতাও তার সঙ্গে হয়েছে অফিস এবং অধিকাংশ সময় বাসভবনে বসে। একটি কি দুটো ঘটনায় ঢাকার দু’একজন সাংবাদিক আমার সঙ্গীও হয়েছিলেন। কিন্তু জনাব আই কে গুজরালকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে যখনই কোনো প্রশ্ন করেছি, তিনি তার জবাব দেননি বা এড়িয়ে গেছেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে একটি কথা তিনি বলে দিয়েছেন, এটা আমার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একজন ভিনদেশীর সঙ্গে তিনি এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। বিশ্বের বহু রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানকে এমনটা করতে দেখেছি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের চিত্রটি এর সম্পূর্ণভাবে বিপরীত। বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা বিদেশীদেরই আমরা সব সময় ভরসা মেনেছি, এখনও মানছি - দেশের জনগণকে নয়। আর তারই ফলশ্র“তিতে এখন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে দেশের বাইরে বসে। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য একটি দেশের জন্য, এর জনগণের জন্য আর কিছুই হতে পারে না। শাসক শ্রেণী এবং তারই অংশ রাজনীতিকদের লজ্জা শরম না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের আছে অর্থাৎ আমজনতা এতে দারুণভাবে লজ্জিত, ক্ষুব্ধ এবং অন্যদিকে উৎকণ্ঠিত।
দিল্লি বৈঠকের বিষয় নিয়ে নানা কথা, নানা আলোচনা চলছে দেশজুড়ে। সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, শুক্রবার মার্কিন এবং ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকটি করেছেন দিল্লিতে। বৈঠকে ঢাকাস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব এবং ওই দেশের পররাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আর আলোচনার বিষয় ছিল - বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বৈঠকে ঠিক কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় পক্ষ থেকে বার বার যে কথাটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত বা উভয় পক্ষের ঐক্যমত বলে সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেছে তার কতোটা সঠিক তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের মতামত ভিন্ন। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে নির্বাচনটি হোক তা চায়।
বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে - জঙ্গিবাদ, ইসলামী মৌলবাদ দমন ও এর উত্থান রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং ধর্মনিরপেক্ষ একটি সরকার তারা বাংলাদেশে দেখতে চায়। এটা ভারতের কোনো লুকোছাপা নীতি নয়, প্রকাশ্যে অবস্থান। তবে এর মধ্যদিয়ে ওই দেশটি যা মনে করে তাহলো, গত পাঁচ বছরে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারটি এ কাজটি খুবই দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। আরো পরিষ্কার করে বলা যায় এবং এই বিষয়টি ভারত প্রকাশ্যে কখনই বলেনি যে, দিল্লি মনে করে আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং তারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ দমন এবং রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিকল্প কোনো দল বাংলাদেশে নেই।
বিষয়টি শুধু এখানেই ক্ষান্ত দিলে হবে না। বিগত পাঁচ বছরে ভারত সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের যে সব সংগ্রামকারী দলগুলো রয়েছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যে সীমাহীন সহযোগিতা করেছে - তাকে ভারত খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
চীনের সঙ্গে ভারতের বড় ধরনের একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা হয়ে গেল গত সপ্তাহে। এটা হলেও ওই দুটো দেশের বৈরি সম্পর্কের অবসান হয়েছে তা তো বলা যাবেই না, বরং সম্পর্ক আগের পর্যায়েই রয়েছে। চীনকে উদ্দেশ্য করে এবং মাথায় রেখেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে বিশেষ করে অরুনাচলসহ ওই এলাকায় ভারতের সমরশক্তি আরো ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি নিশ্চয়ই সামরিক এবং নিরাপত্তা কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনকে মাথায় রেখেই চিকেননেকসহ সামগ্রিক ভৌগোলিক দূরত্ব বিবেচনায় ভারতের কাছে বাংলাদেশ নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত দিক দিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ - তা এ দেশের রাজনীতিকরা উপলব্ধি করতে না পারলেও ভারত ঠিকই পেরেছে।
চীন এবং একে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অবস্থান মাথায় রেখেই মূলত রেল, সড়ক, নৌ করিডোর, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার, আখাউড়া বন্দর ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এর অর্থনৈতিক লাভালাভের বিষয় তো রয়েছেই।
ভারত তো অবশ্যই চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও বাংলাদেশ নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর কারণ বঙ্গোপসাগর, বিশেষ করে ভারত মহাসাগর। বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সবার কাছেই অতি লোভনীয় একটি কৌশলগত অবস্থান। চীনের কথাই যদি ধরা যায়, তাহলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং প্রস্তাবিত ডিপ-সি পোর্টটি (গভীর সমুদ্র বন্দর) কৌশলগত কারণে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশের শাসকদের পক্ষে এটা বোঝা খুবই দুরূহ। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, ভারত মহাসাগরে চীন ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা মুক্তার মালা বানাতে চায়। অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী সমুদ্র বন্দরগুলোকে চীন তার আয়ত্বে এবং কর্তৃত্বের মধ্যে রাখতে চায়। ইতোমধ্যে কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানের গোয়াদার সমুদ্র বন্দর, শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা’র সমুদ্র বন্দর চীনের কর্তৃত্বে রয়েছে। বার্মার পট-পরিবর্তনে চীন বেশ বেকায়দায় আছে বলেই ধারণা করা যায়। বার্মার সিট্টেও সমুদ্র বন্দরটি চীনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারত বার্মা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সিট্টেও সমুদ্র বন্দরের মেরামতের কাজ ২০১০ সালে পেয়েছে। ভারত এই সমুদ্র বন্দরটিকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখতে যারপরনাই ইচ্ছুক। চীনও এই বন্দরটি পাওয়ার ব্যাপারে হাল ছাড়েনি। যেহেতু সিট্টেও চীন পাবে কি পাবে না - এমন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর চীনের কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর নিয়ে চীন - ভারত - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এটা পাওয়া যায়। এ কারণেই চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরটি তাদের কাছে লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিযোগিতা’ চলছে বেশ কিছুদিন যাবত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ওই অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত। আর এর কারণ চীনের সঙ্গে বৈরিতা। এসব মিলিয়ে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু করে পুরো ভারত মহাসাগর এখন নিরাপত্তা কৌশলগত দিক দিয়ে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে, কেউ কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ। চীনের সঙ্গে বৈরিতার কারণে ভারত এবং চীন উভয়ই তাদের নৌ-শক্তি ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে এবং বৃদ্ধি করে চলেছে। এখানে মালদ্বীপও ভারত মহাসাগরের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পরিণত হয়েছে।
এসব বিষয় বাদ দিলেও বাংলাদেশের তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদও সব শক্তির কাছে লোভনীয় এবং কাম্য। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন বৃহৎ শক্তিগুলোর অপ্রকাশ্যে লড়াই এবং প্রতিযোগিতা চলছে এই ভূখন্ডটিকে নিয়ে। এ বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, ভারত কেন, এমন একটা দেশ হাতে পেয়েও হাতছাড়া করবে?
ভূ-রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা কৌশলগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশের রাজনীতিকরা এবং শাসক দলগুলো হয় জানে না অথবা লোভে পড়ে সোনার ডিম দেয়া হাঁসের পেট কাটার মতো কাজগুলোই অবিরাম করে যাচ্ছে। কেন রাজনৈতিক সঙ্কট কাটছে না, কবে কাটবে তা এ দেশের মানুষ জানে না, জানতেও পারবে না। কারণ ওই একই কথা - দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের ভাগ্য এখন নির্ধারিত হচ্ছে বিদেশে বসে, বিদেশীদের হাতে।
এ প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে কোন দলের বা কেমন সরকার থাকবে তাই দেশের বাইরে অনেকের চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী একটি শক্তির কাছে তো অবশ্যই। এ লক্ষ্যে কাজও চলছে, চলতে থাকবে। ততোদিনই চলতে থাকবে যতোদিন না রাজনৈতিক নেতৃত্ব পুরোমাত্রায় দেশপ্রেমিক হবেন - সামান্য কিছুর জন্য লোভাতুর হবেন না।
আমীর খসরু
ঢাকা: বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি নিজে তার নিজের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত কখনই স্বাধীন ও সার্বভৌম ভাবে নিতে পেরেছে - এমনটা কারো স্মৃতিতে আছে বলে মনে হয় না। সব সময়ই বিদেশী রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ থাকেই - তা সে প্রভূ হোক বা বন্ধু নামধারীই হোক। কখনও মৃদু চাপ, কখনও প্রবল চাপ আবার কখনও জোর করে চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত এই দেশটিকে বার বার হজম করতে হয়েছে নিজেদের অক্ষমতা আর অযোগ্যতার কারণে। আর এটা হজম করার প্রেক্ষাপট যতোটা না বিদেশীরা তৈরি করেছে তার চেয়ে হাজার গুণে আমরা দায়ী তাদের এমন সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। একটি দেশের সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে আগে কিংবা এখনও - একটি ভূখণ্ড, জনগোষ্ঠী, পতাকা ইত্যাকার কিছু বিষয়ের উল্লেখ আছে। তবে সম্ভবত এখন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাটি পরিবর্তনের সময় এসে গেছে। এবং দেশি এবং বিদেশীদের চিন্তার জগতে এমন একটা পরিবর্তন লক্ষ্যও করা যাচ্ছে। আমাদের মতো দেশ কী স্বাধীন ভাবে কোনো অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে বিদেশীদের অনুমোদন বা অনুমতি ছাড়া? ছোট একটি স্থাপনা নির্মাণেও তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হয়। কাজেই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ার সক্ষমতা এবং যোগ্যতা হারিয়ে বসে আছি বলেই এখন সার্বভৌমত্বের সংজ্ঞাটি পরিবর্তনের আশু প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশের প্রকৃত সার্বভৌমত্ব এবং নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয় সম্পর্কে সক্ষমতার ব্যাপারে ভাববার সময় এসেছে। মুখে মুখে স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্বের কথা বলা যায় বটে, তবে প্রকৃতার্থে কতোটা স্বাধীন এবং সার্বভৌম তা বোঝার জন্য তাত্ত্বিক কচকচানিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। চারিদিকে চোখ ঘোরালে, চোখ কান খোলা রাখলেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়।
আগেই এমনটা বলা হয়েছে যে, আমাদের নিজস্বতা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে কোনো রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটি আমরাই হারিয়ে বসে আছি। কেউ প্রকাশ্য যুদ্ধ করে জোর করে এই অধিকারটি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি জন্ম নেয়ার পরে ছিনিয়ে নিয়েছে তা নয়। আমাদের রাজনীতিকদের দক্ষতা, প্রজ্ঞা এবং সুদূর-প্রসারী চিন্তার হীনতা - দীনতা এবং নানা কিছু পাওয়ার লোভ এই সর্বনাশটি করে দেয়ার ফলশ্র“তিতে শাসক শ্রেণী বরাবরই নিজেদের অস্তিত্ব বিলীন করে নির্বিকার বসে আছে। এমন নির্লিপ্ততা যে কতো বড় ভয়ঙ্কর হতে পারে তা এখন মর্মে মর্মে যে কেউ উপলব্ধি করতে পারছেন। আর বিদেশীরা তাই প্রথমে বৈঠকখানায় এবং শেষমেষ একেবারে অন্দর মহলে ঢুকে পড়েছে।
একটি ছোট উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দর কুমার গুজরাল - যাকে সবাই আই কে গুজরাল নামেই বেশি চেনেন। তার পাণ্ডিত্যপূর্ণ বর্ণাঢ্য জীবনের শেষ ভাগে এসে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। আজীবন তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। বিশেষ করে কূটনৈতিক এবং পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে তার মেধা এবং প্রজ্ঞা ছিল ব্যাপক ও বিস্তৃত। কূটনৈতিক সংবাদদাতা থাকার সুবাদে অসংখ্যবার তার সাক্ষাৎকার নিয়েছি ঢাকায় এবং দিল্লিতে। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে আলাপচারিতাও তার সঙ্গে হয়েছে অফিস এবং অধিকাংশ সময় বাসভবনে বসে। একটি কি দুটো ঘটনায় ঢাকার দু’একজন সাংবাদিক আমার সঙ্গীও হয়েছিলেন। কিন্তু জনাব আই কে গুজরালকে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে যখনই কোনো প্রশ্ন করেছি, তিনি তার জবাব দেননি বা এড়িয়ে গেছেন। তবে সঙ্গে সঙ্গে একটি কথা তিনি বলে দিয়েছেন, এটা আমার দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। একজন ভিনদেশীর সঙ্গে তিনি এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। বিশ্বের বহু রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানকে এমনটা করতে দেখেছি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের চিত্রটি এর সম্পূর্ণভাবে বিপরীত। বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা বিদেশীদেরই আমরা সব সময় ভরসা মেনেছি, এখনও মানছি - দেশের জনগণকে নয়। আর তারই ফলশ্র“তিতে এখন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে দেশের বাইরে বসে। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য একটি দেশের জন্য, এর জনগণের জন্য আর কিছুই হতে পারে না। শাসক শ্রেণী এবং তারই অংশ রাজনীতিকদের লজ্জা শরম না থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের আছে অর্থাৎ আমজনতা এতে দারুণভাবে লজ্জিত, ক্ষুব্ধ এবং অন্যদিকে উৎকণ্ঠিত।
দিল্লি বৈঠকের বিষয় নিয়ে নানা কথা, নানা আলোচনা চলছে দেশজুড়ে। সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, শুক্রবার মার্কিন এবং ভারতীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকটি করেছেন দিল্লিতে। বৈঠকে ঢাকাস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, দিল্লির মার্কিন রাষ্ট্রদূত, ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব এবং ওই দেশের পররাষ্ট্র দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। আর আলোচনার বিষয় ছিল - বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। বৈঠকে ঠিক কি কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তবে ভারতীয় পক্ষ থেকে বার বার যে কথাটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত বা উভয় পক্ষের ঐক্যমত বলে সংবাদ মাধ্যমকে দিয়ে বলানোর চেষ্টা করেছে তার কতোটা সঠিক তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের মতামত ভিন্ন। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে নির্বাচনটি হোক তা চায়।
বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে - জঙ্গিবাদ, ইসলামী মৌলবাদ দমন ও এর উত্থান রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম এবং ধর্মনিরপেক্ষ একটি সরকার তারা বাংলাদেশে দেখতে চায়। এটা ভারতের কোনো লুকোছাপা নীতি নয়, প্রকাশ্যে অবস্থান। তবে এর মধ্যদিয়ে ওই দেশটি যা মনে করে তাহলো, গত পাঁচ বছরে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারটি এ কাজটি খুবই দক্ষতার সঙ্গে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। আরো পরিষ্কার করে বলা যায় এবং এই বিষয়টি ভারত প্রকাশ্যে কখনই বলেনি যে, দিল্লি মনে করে আওয়ামী লীগ একটি ধর্মনিরপেক্ষ দল এবং তারা জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ দমন এবং রোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিকল্প কোনো দল বাংলাদেশে নেই।
বিষয়টি শুধু এখানেই ক্ষান্ত দিলে হবে না। বিগত পাঁচ বছরে ভারত সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের যে সব সংগ্রামকারী দলগুলো রয়েছে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যে সীমাহীন সহযোগিতা করেছে - তাকে ভারত খুবই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।
চীনের সঙ্গে ভারতের বড় ধরনের একটি প্রতিরক্ষা সমঝোতা হয়ে গেল গত সপ্তাহে। এটা হলেও ওই দুটো দেশের বৈরি সম্পর্কের অবসান হয়েছে তা তো বলা যাবেই না, বরং সম্পর্ক আগের পর্যায়েই রয়েছে। চীনকে উদ্দেশ্য করে এবং মাথায় রেখেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে বিশেষ করে অরুনাচলসহ ওই এলাকায় ভারতের সমরশক্তি আরো ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি নিশ্চয়ই সামরিক এবং নিরাপত্তা কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীনকে মাথায় রেখেই চিকেননেকসহ সামগ্রিক ভৌগোলিক দূরত্ব বিবেচনায় ভারতের কাছে বাংলাদেশ নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত দিক দিয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ - তা এ দেশের রাজনীতিকরা উপলব্ধি করতে না পারলেও ভারত ঠিকই পেরেছে।
চীন এবং একে কেন্দ্র করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর অবস্থান মাথায় রেখেই মূলত রেল, সড়ক, নৌ করিডোর, চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার, আখাউড়া বন্দর ব্যবহারসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এর অর্থনৈতিক লাভালাভের বিষয় তো রয়েছেই।
ভারত তো অবশ্যই চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও বাংলাদেশ নিরাপত্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এর কারণ বঙ্গোপসাগর, বিশেষ করে ভারত মহাসাগর। বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সবার কাছেই অতি লোভনীয় একটি কৌশলগত অবস্থান। চীনের কথাই যদি ধরা যায়, তাহলে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং প্রস্তাবিত ডিপ-সি পোর্টটি (গভীর সমুদ্র বন্দর) কৌশলগত কারণে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে বাংলাদেশের শাসকদের পক্ষে এটা বোঝা খুবই দুরূহ। ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলে থাকেন, ভারত মহাসাগরে চীন ‘স্ট্রিং অব পার্ল’ বা মুক্তার মালা বানাতে চায়। অর্থাৎ ভারত মহাসাগরের পার্শ্ববর্তী সমুদ্র বন্দরগুলোকে চীন তার আয়ত্বে এবং কর্তৃত্বের মধ্যে রাখতে চায়। ইতোমধ্যে কৌশলগত কারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানের গোয়াদার সমুদ্র বন্দর, শ্রীলঙ্কার হাম্বানতোতা’র সমুদ্র বন্দর চীনের কর্তৃত্বে রয়েছে। বার্মার পট-পরিবর্তনে চীন বেশ বেকায়দায় আছে বলেই ধারণা করা যায়। বার্মার সিট্টেও সমুদ্র বন্দরটি চীনের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারত বার্মা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সিট্টেও সমুদ্র বন্দরের মেরামতের কাজ ২০১০ সালে পেয়েছে। ভারত এই সমুদ্র বন্দরটিকে নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখতে যারপরনাই ইচ্ছুক। চীনও এই বন্দরটি পাওয়ার ব্যাপারে হাল ছাড়েনি। যেহেতু সিট্টেও চীন পাবে কি পাবে না - এমন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর চীনের কাছে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর নিয়ে চীন - ভারত - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এটা পাওয়া যায়। এ কারণেই চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরটি তাদের কাছে লোভনীয় হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রতিযোগিতা’ চলছে বেশ কিছুদিন যাবত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ওই অঞ্চলের মিত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভারত। আর এর কারণ চীনের সঙ্গে বৈরিতা। এসব মিলিয়ে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু করে পুরো ভারত মহাসাগর এখন নিরাপত্তা কৌশলগত দিক দিয়ে এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে যে, কেউ কর্তৃত্ব ছাড়তে নারাজ। চীনের সঙ্গে বৈরিতার কারণে ভারত এবং চীন উভয়ই তাদের নৌ-শক্তি ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি করেছে এবং বৃদ্ধি করে চলেছে। এখানে মালদ্বীপও ভারত মহাসাগরের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থানে পরিণত হয়েছে।
এসব বিষয় বাদ দিলেও বাংলাদেশের তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদও সব শক্তির কাছে লোভনীয় এবং কাম্য। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন বৃহৎ শক্তিগুলোর অপ্রকাশ্যে লড়াই এবং প্রতিযোগিতা চলছে এই ভূখন্ডটিকে নিয়ে। এ বিষয়টিকেও মাথায় রাখতে হবে। বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, ভারত কেন, এমন একটা দেশ হাতে পেয়েও হাতছাড়া করবে?
ভূ-রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা কৌশলগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ দেশের রাজনীতিকরা এবং শাসক দলগুলো হয় জানে না অথবা লোভে পড়ে সোনার ডিম দেয়া হাঁসের পেট কাটার মতো কাজগুলোই অবিরাম করে যাচ্ছে। কেন রাজনৈতিক সঙ্কট কাটছে না, কবে কাটবে তা এ দেশের মানুষ জানে না, জানতেও পারবে না। কারণ ওই একই কথা - দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের ভাগ্য এখন নির্ধারিত হচ্ছে বিদেশে বসে, বিদেশীদের হাতে।
এ প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশে কোন দলের বা কেমন সরকার থাকবে তাই দেশের বাইরে অনেকের চিন্তার বিষয়। বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী একটি শক্তির কাছে তো অবশ্যই। এ লক্ষ্যে কাজও চলছে, চলতে থাকবে। ততোদিনই চলতে থাকবে যতোদিন না রাজনৈতিক নেতৃত্ব পুরোমাত্রায় দেশপ্রেমিক হবেন - সামান্য কিছুর জন্য লোভাতুর হবেন না।
উৎসঃ আমাদের বুধবার