বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৩

দিল্লি বৈঠক: দেশের ভাগ্য যখন বিদেশীদের হাতে

আওয়ামী সরকারের ইসলাম ফোবিয়া

এম এ নোমান
পরের সংবাদ»
আওয়ামী লীগ ও অস্তিত্বের সঙ্কটে থাকা বামদের নিয়ে গঠিত মহাজোট সরকার পুরো মেয়াদজুড়েই ইসলাম ফোবিয়ায় ভুগছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইসলামী মূল্যবোধ নির্মূল করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ধর্মহীন অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে কাজ করছে এ সরকার। আদালত ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে আসে। এ সময় সরকারি মহলের চরম বিদ্বেষের শিকার হয় ইসলাম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানগুলো। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন না করা ও আলেম-ওলামাদের নির্যাতন না করার নির্বাহী ইশতেহারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা অজুহাতে মাদরাসা বন্ধ করার পাশাপাশি অসংখ্য আলেম-ওলামাকে হত্যা করে এ সরকার।
ইসলাম ফোবিয়া আক্রান্ত সরকার শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে সংবিধান থেকে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারী নীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বোরকাবিরোধী পরিপত্র জারি, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য, মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে বিভিন্ন সরকারি মহলের কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি দমন ও মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকারের ব্যাপক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এ সময়ে। ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গৃহবন্দি করে রাখা, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অর্ধনগ্ন মার্কিন তরুণীদের দ্বারা নৃত্য পরিবেশন, মহান আল্লাহকে দেবদেবীর সঙ্গে তুলনা করা, কোরআনের আয়াত সংশোধনে হাইকোর্টে রিট করার ঘটনাও ঘটে এ সরকারের আমলে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই আবির্ভাব ঘটে ইসলামবিদ্বেষী ভয়ানক ব্লগারচক্রের।

সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর ওপর বিশ্বাস’ বাদ
মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে দায়ের করা একটি রিটের শুনানি শেষে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে। যদিও ওই সংশোধনীতে বৈধতা দেয়া ১৭৪টি অধ্যাদেশের মধ্যে মাত্র দুটি বাদ দিয়ে ১৭২টিই রেখে দেয় সরকার। কিন্তু সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাগুলো তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি চালু প্রতিস্থাপন করে সরকার। অথচ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে কোরআন সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো কাজ না করার অঙ্গীকার করেছিল। মুন সিনেমা হলের মালিকানা দাবি নিয়ে মামলার রায়েও সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার কথা বলা হয়নি। রায়ের কথা বলেই আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংবিধান থেকে মহান
আল্লাহর নামটি মুছে দিলেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে ৮নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে স্থান পেয়েছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থাত্ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার। এই নীতিগুলো এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত সব নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে গণ্য করা হয়েছিল পঞ্চম সংশোধনীতে। ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকে এ বিষয়গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে মান্য হয়ে আসছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। তখন আওয়ামী লীগ ওই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে ছিল। এছাড়া একটি গণভোটের মাধ্যমেও এগুলো জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। নতুন সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন ছাপানো সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এবং এই নীতিগুলো থেকে উদ্ভূত নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে। পৃথিবী থেকে সমাজতন্ত্র বিদায় নিলেও আইন মন্ত্রণালয়ের ছাপানো সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র আবার জায়গা করে নিয়েছে।

ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্রকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা
ইসলামবিদ্বেষী ভয়ানক ব্লগারচক্র মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানকে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ করে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য লেখে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ব্লগে মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.), পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুরুচিপূর্ণ বিষোদগারমূলক প্রপাগাণ্ডা চালায় নাস্তিক ও প্রতিক্রিয়াশীল এ ব্লগাররা। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় চার বছর আগে থেকেই পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া প্রপাগান্ডা চালাতে শুরু করে তারা। হাইকোর্ট ইসলামবিদ্বেষী এসব ব্লগ বন্ধসহ ধর্মদ্রোহী নাস্তিক ব্লগারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও ব্লগাররা তা পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং উচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শাহবাগের কথিত প্রজন্ম চত্বরের নেতৃত্বদানকারী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে, ‘সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ঐ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উত্কট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ঐ যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত, দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।’ হাইকোর্টকে কটূক্তি করে আসিফ আরও লিখেছে যে, ‘তোমাদের যুক্তিহীন হাস্যকর অনুভূতি এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায় আমার নয়, অযৌক্তিক সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তা যাচাই করা, প্রয়োজনে ছুড়ে ফেলা আমার বাক-স্বাধীনতা এবং আমার অধিকার। কোন সভ্য আদালত আমার এই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না’। শুধু আদালত অবমাননাই নয়, পবিত্র ধর্মগ্রন্থও উচ্ছেদের ডাক দেয় শাহবাগের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ব্লগারচক্র।
পবিত্র ইসলাম, দেশের প্রচলিত আইন-আদালত এবং সভ্যতার শত্রু ব্লগারদের এসব কুিসত মন্তব্য ও বক্তব্যের ডাউনলোড করা কপি সম্পূরক নথি হিসেবে আদালতে পেশ করেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তারা আদালতের আদেশসহ তা বিটিআরসি, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পেশ করেন। এসব ব্লগার গত ৫ মে শাহবাগে কথিত জাগরণ মঞ্চের জন্ম দেয়। শাহবাগেও তারা ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানকে কটাক্ষ করে পথনাট্য পরিচালনা করে। সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা দলবেঁধে তা উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীও শাহবাগে তার মন পড়ে থাকে বলে জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন। ইসলামবিদ্বেষী এ ব্লগারচক্রকে সরকার খাবার ও নানা ধরনের উপকরণ সরবরাহ করে ।

মতিঝিলে গণহত্যা
ইসলাম বিদ্বেষী ব্লাগারচক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে দেশের সর্বস্তরের আলেম ওলামারা আন্দোলনে নামেন। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ৫ মে লংমার্চ করে ঢাকায় এসে মতিঝিলে অবস্থান নেন তারা। ওইদিন গভীর রাতে বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য অভিযান চালায়। এ অভিযানে ১ লাখ ৫৫ হাজার গুলি ব্যয় হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ গণহত্যার প্রতিবাদ করেছে। এতে কত লোক প্রাণ হারিয়েছে তা এখনও অজানাই রয়েছে। তবে এ গণহত্যাকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাকিস্তান আর্মির চালানো গণহত্যার সঙ্গেই তুলনা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। দেশের আলেম ওলামাসহ সর্বস্তরের মুসলমানের মনে এই গণহত্যা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ ৫ মে’র রাতকে কালোরাত হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর ডেমরা এলাকায় ময়লার স্তূপ থেকে বস্তভর্তি মানুষের হাড় পাওয়া যায। হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে, এসব কঙ্কাল মতিঝিলে গণহত্যার শিকার আলেম-ওলামাদের। বিভিন্ন সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে এলেও সরকার তা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে, সরকারি বাহিনী তাদের আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। নির্বিচারে আলেম-ওলামাদের হত্যার ঘটনায় সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও অংশ নেয়।

মাদরাসাছাত্র কমাতে জয়ের আন্দোলন
বাংলাদেশে মাদরাসাছাত্রের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে এবং মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে তা হ্রাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় (যিনি পবিত্র ইসলাম ধর্মের অবমাননা করে খ্রিস্টান নারীকে বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন) নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ‘রূপকল্প-২০২১ : গত ৫ বছরের অর্জন এবং আগামী ৫ বছরের অঙ্গীকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, পঁচাত্তরের পর দেশে স্কুল তৈরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় প্রতি তিনজন স্কুলছাত্রের বিপরীতে এখন একজন মাদরাসাছাত্র তৈরি হয়েছে। এটা কমিয়ে দিতে আমরা এরই মধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি।

কোরআনের আয়াত সংশোধনে হাইকোর্টে রিট
দেবনারায়ণ নামের জনৈক আওয়ামী লীগ সমর্থক ২০১০ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট করে পবিত্র কোরআনের ‘কোরবানি’ সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত সংশোধনের প্রার্থনা জানায়। পবিত্র কোরআন সংশোধনের ঔদ্ধত্বপূর্ণ এ রিটটি হাইকোর্ট গ্রহণ করে শুনানির তারিখও ধার্য করে। ইসলাম ও মানবতার শত্রু দেবনারায়ণ তার আবেদনে উল্লেখ করেছে যে, কোরবানি সংক্রান্ত আয়াতটি ভুল (নাউজুবিল্লাহ)। এটি সংশোধন করতে হবে। রিট আবেদনের সঙ্গে দেবনারায়ণ সংশোধনের একটি খসড়া প্রস্তাবও জমা দেয়। রিট আবেদনে পরবর্তীতে অবশ্য হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে একটি আদেশ দেয়।

ইমামদের প্রশিক্ষণে নগ্ন নৃত্য
সরকারের ইসলামবিদ্বেষী অপকর্মের আরেক ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো. আফজাল। মাজার পূজারী এ ডিজি সারাদেশের ইমামদের নিয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন অর্ধনগ্ন তরুণীদের দিয়ে ব্যালে নৃত্য পরিবেশন করায়। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে কয়েকশ’ ইমাম ও খতিব অংশ নেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে কয়েকজন মার্কিন অর্ধনগ্ন তরুণীকে ডেকে এনে নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে বিতর্কিত ও ইসলামবিদ্বেষী ডিজি সামীম আফজাল। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার ছবিসহ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর সারাদেশে আন্দোলনের ঝড় ওঠে। সরকার সামীম আফজালের বিরুদ্ধে এহেন কর্মের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আন্দোলনকারী আলেমদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করে।

দাড়ি-টুপি নিয়ে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গচিত্র
ইসলামবিদ্বেষী ভারতীয় সেবাদাসদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিটিভিসহ সরকারি দলের সমর্থক মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত নাটক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে দাড়ি ও টুপিধারীদের দিয়ে খারাপ চরিত্রগুলোতে অভিনয় করানো হয়। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও দাড়ি-টুপি এবং পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিকে বিশাল দ্বৈত্যের রূপ দিয়ে ভাস্কর্য ব্যবহার করা হয়। ইসলামের অনুসারী আলেম-ওলামাদের বিষয়ে জনমনে একটি খারাপ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সবশেষে ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চে ইসলামবিদ্বেষীরা বীভত্স মুখ এঁকে মাথায় চাঁদ-তারা খচিত টুপি এবং থুতনিতে দাড়ি দেখিয়ে পবিত্র ইসলামের অবমাননা করে। শাহবাগি ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে ব্যঙ্গ করে অভিনয় করে। তারা বোরকা নিয়েও ব্যঙ্গচিত্র আঁকে। ইসলামের বিধান পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে মাদকাসক্ত ও গাঁজাসেবী তরুণ-তরুণীদের দিয়ে পথনাটকে অভিনয় করানো হয়। এছাড়াও দাড়ি-টুপিধারী লোকদের বিশাল ছবি টানিয়ে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দিয়ে তাতে জুতাপেটা করানো হয় শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারদের কথিত ওই মঞ্চে।

বোরকার বিধান বিচারপতি মানিকের কোর্টে
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারীদের জন্য বোরকা বা হিজাব বাধ্যতামূলক। এ বোরকা পরিধান নিয়েও সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করে। নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজের ছাত্রীদের বোরকা পরে ক্লাসে আসতে বলায় হাইকোর্টের বিতর্কিত বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বোরকার বিষয়ে রায় দেন। হাইকোর্টের বিতর্কিত এ রায়ের সূত্র ধরে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়।

ইসলামবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন
সরকার গত পৌনে ৫ বছরে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী বেশ কয়েকটি আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। এ সময় সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করে। সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এর বিরোধী ওলামা-মাশায়েখরা হরতালও পালন করেন। নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে সরকার ২০১১ সালের ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতির খসড়া অনুমোদন করে।

‘কওমি মাদরাসা জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র’ বলে মিথ্যা প্রচারণা
সরকারের কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে। ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, কওমি মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমি মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাত্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। ২০১১ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন—‘এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে’। একই বছর ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই’। আর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে’। একই বছর পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা’। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো কওমি মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে’। গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন’। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম আফজাল বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়’।

আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি
২০১১ সালের ১৪ জুলাই টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাসে দাড়ি রাখা নিয়ে সমালোচনাকালে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে ছাগলের সঙ্গে তুলনা করে (নাউজুবিল্লাহ্)। এতে ওই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কর বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া থেকে পালিয়ে যায়। একই বছর ২৬ জুলাই ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করে। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে এক সভায় সে মন্তব্য করে, এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মোহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানদের মোহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়। একইভাবে মানিকগঞ্জে বিশ্বজিত্ মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.)-এর জন্ম এবং পবিত্র কোরআন নিয়ে কটূক্তি, বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিবলিঙ্গের সঙ্গে তুলনা, খুলনার পাইকগাছায় আরেক হিন্দু মহান আল্লাহ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাইস্কুল গেটের কোরআনের আয়াত সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, বাগেরহাটের কচুয়ায় এক হিন্দু কর্তৃক মহান আল্লাহর ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্কন করা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাসুল (সা.) সম্পর্কে হিন্দু কর্তৃক চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক হিন্দুর (সা.)-এর প্রতি কটূক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড
দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ইসলামি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ইসলামি মূল্যবোধ তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের বন্দনা প্রকাশের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে এরই মধ্যে মাজার-খানকাপন্থীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে ডিজি সামীম আফজাল। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে করমর্দনও করে ডিজি আফজাল। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার একতারা এবং শরীর দুলিয়ে নাচ-গানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। এছাড়া ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে জাতীয় শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে হাম্দ ও নাতের বিচারক হিসেবে এমন শিল্পীদের আনা হয় যাদের অনেকেই ইসলামি সঙ্গীতের ধারার সঙ্গে পরিচিত নয়। এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই বছর ২৭ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। ওইদিন আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ডিজির অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন অর্ধনগ্ন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য।

দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডের এক বাড়িতে র্যাব হানা দিয়ে বোরকা পরে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জড়ো হওয়ার অপরাধে ২১ নারীকে গ্রেফতার করে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জঙ্গি সংশ্লিতার কোনো তথ্য না পেয়ে ২১ পরহেজগার নারীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনার দীর্ঘ দু’মাস পর ২৩ জুন আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেয়। একইভাবে বোরকা পরার অপরাধে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগরে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচনায় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণীকে গ্রেফতার করে। তারপর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তিন তরুণীকে ঢাকায় টিএফআই সেলে নিয়ে আসা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা তরুণীদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন অমর সিংহ। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি থেকে অবশেষে তিন অসহায়, নিরপরাধ তরুণী মুক্তি পায়। ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সে ক্লাসে মধ্যযুগীয় পোশাক ‘বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন এবং বদরুন্নেছা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকা পরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাইখুল ইসলাম জিয়াদ নামের এক শিক্ষক বোরকা পরায় তিন ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়।

জঙ্গি ধুয়া তুলে কওমি মাদরাসা বন্ধ
সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পুলিশ বিভিন্ন মাদরাসায় হানা দিয়ে ইসলামি বই-পুস্তক ও পবিত্র কোরআন-হাদিসকে জিহাদি বই হিসেবে চিহ্নিত করে নিরীহ ছাত্রদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ ধারা এখনও অব্যাহত। হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর সরকার বিভিন্ন কৌশলে মাদরাসাগুলোকে টার্গেট করে তা বন্ধে উদ্যোগী হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে কর্তৃপক্ষ মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছে। কোথাও আবার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বল প্রয়োগ করে মাদরাসা বন্ধ করে দেন। ইমাম এবং খতিবরা মসজিদে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেই তাদের গ্রেফতার ও চাকরিচ্যুতিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর মাদরাসায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার ‘জঙ্গি নাটকের’ অবতারণা করে। সকাল বেলায় কম্পিউটারের আইপিএস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দমকল বাহিনীসহ স্থানীয়রা তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রায় আট ঘণ্টা পর পুলিশ এটিকে হাতে তৈরি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। এ ঘটনায় আহত ও নিহতদের বিষয়ে চিকিত্সকদের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগুনে তাদের শরীর ঝলসে গেছে। তাদের শরীরে কোনো স্পিল্গন্টার কিংবা বোমা বা গ্রেনেডের আলামত পাওয়া যায়নি।
সরকারের চরম ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচক মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে সরকার দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দি করে রাখে। সরকারি বাহিনীর জুলুম-নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিত্সাতেও বাধা দেয় সরকার। শেষ পর্যন্ত চিকিত্সাহীন অবস্থায়ই মারা যান বিশ্ববরেণ্য এ আলেমে দীন।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/10/31/222740

আওয়ামী সরকারের ইসলাম ফোবিয়া

এম এ নোমান
পরের সংবাদ»
আওয়ামী লীগ ও অস্তিত্বের সঙ্কটে থাকা বামদের নিয়ে গঠিত মহাজোট সরকার পুরো মেয়াদজুড়েই ইসলাম ফোবিয়ায় ভুগছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ইসলামী মূল্যবোধ নির্মূল করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও ধর্মহীন অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠায় মরিয়া হয়ে কাজ করছে এ সরকার। আদালত ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে সরকার ইসলামী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের কিনারে নিয়ে আসে। এ সময় সরকারি মহলের চরম বিদ্বেষের শিকার হয় ইসলাম, ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানগুলো। কোরআন-সুন্নাহবিরোধী আইন না করা ও আলেম-ওলামাদের নির্যাতন না করার নির্বাহী ইশতেহারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা অজুহাতে মাদরাসা বন্ধ করার পাশাপাশি অসংখ্য আলেম-ওলামাকে হত্যা করে এ সরকার।
ইসলাম ফোবিয়া আক্রান্ত সরকার শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশে সংবিধান থেকে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিস্থাপন, কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারী নীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতি চালু, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বোরকাবিরোধী পরিপত্র জারি, সরকারের কর্তাব্যক্তিদের ইসলামবিরোধী বক্তব্য, মহান আল্লাহ, রাসুল (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান নিয়ে বিভিন্ন সরকারি মহলের কটূক্তি, আলেমদের নির্যাতন, দাড়ি-টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, জেহাদি বইয়ের নামে অপপ্রচার, ইসলামী রাজনীতি দমন ও মাদরাসাবিরোধী ষড়যন্ত্রসহ সরকারের ব্যাপক ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের ঘটনা ঘটে এ সময়ে। ইসলামী আন্দোলনের পুরোধা মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে গৃহবন্দি করে রাখা, ইমাম প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে অর্ধনগ্ন মার্কিন তরুণীদের দ্বারা নৃত্য পরিবেশন, মহান আল্লাহকে দেবদেবীর সঙ্গে তুলনা করা, কোরআনের আয়াত সংশোধনে হাইকোর্টে রিট করার ঘটনাও ঘটে এ সরকারের আমলে। সরকারের প্রত্যক্ষ মদদেই আবির্ভাব ঘটে ইসলামবিদ্বেষী ভয়ানক ব্লগারচক্রের।

সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর ওপর বিশ্বাস’ বাদ
মুন সিনেমা হলের মালিকানা নিয়ে দায়ের করা একটি রিটের শুনানি শেষে সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে। যদিও ওই সংশোধনীতে বৈধতা দেয়া ১৭৪টি অধ্যাদেশের মধ্যে মাত্র দুটি বাদ দিয়ে ১৭২টিই রেখে দেয় সরকার। কিন্তু সংবিধানের মূলনীতি থেকে ‘মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ কথাগুলো তুলে দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি চালু প্রতিস্থাপন করে সরকার। অথচ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে কোরআন সুন্নাহ পরিপন্থী কোনো কাজ না করার অঙ্গীকার করেছিল। মুন সিনেমা হলের মালিকানা দাবি নিয়ে মামলার রায়েও সংবিধান থেকে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দেয়ার কথা বলা হয়নি। রায়ের কথা বলেই আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সংবিধান থেকে মহান
আল্লাহর নামটি মুছে দিলেন। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের দ্বিতীয়ভাগে ৮নং অনুচ্ছেদে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে স্থান পেয়েছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র অর্থাত্ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার। এই নীতিগুলো এবং এগুলো থেকে উদ্ভূত সব নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সংবিধানে গণ্য করা হয়েছিল পঞ্চম সংশোধনীতে। ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাস হওয়ার পর থেকে এ বিষয়গুলো রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে মান্য হয়ে আসছে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সময় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। তখন আওয়ামী লীগ ওই সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে ছিল। এছাড়া একটি গণভোটের মাধ্যমেও এগুলো জনগণের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছিল। নতুন সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নতুন ছাপানো সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিতে বলা হয়েছে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা এবং এই নীতিগুলো থেকে উদ্ভূত নীতি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে গণ্য হবে। পৃথিবী থেকে সমাজতন্ত্র বিদায় নিলেও আইন মন্ত্রণালয়ের ছাপানো সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে সমাজতন্ত্র আবার জায়গা করে নিয়েছে।

ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারচক্রকে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা
ইসলামবিদ্বেষী ভয়ানক ব্লগারচক্র মহান আল্লাহ, মহানবী (সা.) ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানকে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ করে ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য লেখে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘন করে ব্লগে মহান আল্লাহ, মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.), পবিত্র কোরআন, ইসলাম ধর্ম ও ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, কুরুচিপূর্ণ বিষোদগারমূলক প্রপাগাণ্ডা চালায় নাস্তিক ও প্রতিক্রিয়াশীল এ ব্লগাররা। সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় চার বছর আগে থেকেই পবিত্র ধর্ম ইসলাম ও নবী-রাসুলদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মনগড়া প্রপাগান্ডা চালাতে শুরু করে তারা। হাইকোর্ট ইসলামবিদ্বেষী এসব ব্লগ বন্ধসহ ধর্মদ্রোহী নাস্তিক ব্লগারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেও ব্লগাররা তা পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং উচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শাহবাগের কথিত প্রজন্ম চত্বরের নেতৃত্বদানকারী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন লিখেছে, ‘সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সচেতনভাবে ঐ যুক্তিহীন অন্ধ ষাঁড়ের মতো উত্কট দুর্গন্ধময় ধর্মীয় অনুভূতি এবং ঐ যুক্তিহীন ধর্মীয় অনুভূতির রক্ষক আদালত, দুই জিনিসেরই অবমাননা করলাম।’ হাইকোর্টকে কটূক্তি করে আসিফ আরও লিখেছে যে, ‘তোমাদের যুক্তিহীন হাস্যকর অনুভূতি এবং তা রক্ষণাবেক্ষণের দায় আমার নয়, অযৌক্তিক সমস্ত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা, তা যাচাই করা, প্রয়োজনে ছুড়ে ফেলা আমার বাক-স্বাধীনতা এবং আমার অধিকার। কোন সভ্য আদালত আমার এই অধিকার কেড়ে নিতে পারে না’। শুধু আদালত অবমাননাই নয়, পবিত্র ধর্মগ্রন্থও উচ্ছেদের ডাক দেয় শাহবাগের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ব্লগারচক্র।
পবিত্র ইসলাম, দেশের প্রচলিত আইন-আদালত এবং সভ্যতার শত্রু ব্লগারদের এসব কুিসত মন্তব্য ও বক্তব্যের ডাউনলোড করা কপি সম্পূরক নথি হিসেবে আদালতে পেশ করেন আইনজীবীরা। একই সঙ্গে তারা আদালতের আদেশসহ তা বিটিআরসি, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পেশ করেন। এসব ব্লগার গত ৫ মে শাহবাগে কথিত জাগরণ মঞ্চের জন্ম দেয়। শাহবাগেও তারা ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানকে কটাক্ষ করে পথনাট্য পরিচালনা করে। সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা দলবেঁধে তা উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীও শাহবাগে তার মন পড়ে থাকে বলে জাতীয় সংসদে ঘোষণা দেন। ইসলামবিদ্বেষী এ ব্লগারচক্রকে সরকার খাবার ও নানা ধরনের উপকরণ সরবরাহ করে ।

মতিঝিলে গণহত্যা
ইসলাম বিদ্বেষী ব্লাগারচক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে দেশের সর্বস্তরের আলেম ওলামারা আন্দোলনে নামেন। এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ৫ মে লংমার্চ করে ঢাকায় এসে মতিঝিলে অবস্থান নেন তারা। ওইদিন গভীর রাতে বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য অভিযান চালায়। এ অভিযানে ১ লাখ ৫৫ হাজার গুলি ব্যয় হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ গণহত্যার প্রতিবাদ করেছে। এতে কত লোক প্রাণ হারিয়েছে তা এখনও অজানাই রয়েছে। তবে এ গণহত্যাকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পাকিস্তান আর্মির চালানো গণহত্যার সঙ্গেই তুলনা করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। দেশের আলেম ওলামাসহ সর্বস্তরের মুসলমানের মনে এই গণহত্যা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ ৫ মে’র রাতকে কালোরাত হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর ডেমরা এলাকায় ময়লার স্তূপ থেকে বস্তভর্তি মানুষের হাড় পাওয়া যায। হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে, এসব কঙ্কাল মতিঝিলে গণহত্যার শিকার আলেম-ওলামাদের। বিভিন্ন সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডের বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে এলেও সরকার তা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছে, সরকারি বাহিনী তাদের আড়াই হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। নির্বিচারে আলেম-ওলামাদের হত্যার ঘটনায় সরকারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সরকার দলীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাও অংশ নেয়।

মাদরাসাছাত্র কমাতে জয়ের আন্দোলন
বাংলাদেশে মাদরাসাছাত্রের সংখ্যা ব্যাপকহারে বাড়ছে এবং মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করে তা হ্রাস করার জন্য প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় (যিনি পবিত্র ইসলাম ধর্মের অবমাননা করে খ্রিস্টান নারীকে বিয়ে করে ঘর-সংসার করছেন) নতুন আন্দোলন শুরু করেছেন। গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ‘রূপকল্প-২০২১ : গত ৫ বছরের অর্জন এবং আগামী ৫ বছরের অঙ্গীকার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, পঁচাত্তরের পর দেশে স্কুল তৈরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। ওই সময় স্কুল বন্ধ করে দেয়ায় প্রতি তিনজন স্কুলছাত্রের বিপরীতে এখন একজন মাদরাসাছাত্র তৈরি হয়েছে। এটা কমিয়ে দিতে আমরা এরই মধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি।

কোরআনের আয়াত সংশোধনে হাইকোর্টে রিট
দেবনারায়ণ নামের জনৈক আওয়ামী লীগ সমর্থক ২০১০ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্টে একটি রিট করে পবিত্র কোরআনের ‘কোরবানি’ সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত সংশোধনের প্রার্থনা জানায়। পবিত্র কোরআন সংশোধনের ঔদ্ধত্বপূর্ণ এ রিটটি হাইকোর্ট গ্রহণ করে শুনানির তারিখও ধার্য করে। ইসলাম ও মানবতার শত্রু দেবনারায়ণ তার আবেদনে উল্লেখ করেছে যে, কোরবানি সংক্রান্ত আয়াতটি ভুল (নাউজুবিল্লাহ)। এটি সংশোধন করতে হবে। রিট আবেদনের সঙ্গে দেবনারায়ণ সংশোধনের একটি খসড়া প্রস্তাবও জমা দেয়। রিট আবেদনে পরবর্তীতে অবশ্য হাইকোর্ট রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে একটি আদেশ দেয়।

ইমামদের প্রশিক্ষণে নগ্ন নৃত্য
সরকারের ইসলামবিদ্বেষী অপকর্মের আরেক ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মো. আফজাল। মাজার পূজারী এ ডিজি সারাদেশের ইমামদের নিয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে মার্কিন অর্ধনগ্ন তরুণীদের দিয়ে ব্যালে নৃত্য পরিবেশন করায়। ২০১০ সালের ২৭ নভেম্বর রাজধানীর আগারগাঁও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে কয়েকশ’ ইমাম ও খতিব অংশ নেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে কয়েকজন মার্কিন অর্ধনগ্ন তরুণীকে ডেকে এনে নৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে বিতর্কিত ও ইসলামবিদ্বেষী ডিজি সামীম আফজাল। ন্যক্কারজনক এ ঘটনার ছবিসহ সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর সারাদেশে আন্দোলনের ঝড় ওঠে। সরকার সামীম আফজালের বিরুদ্ধে এহেন কর্মের জন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আন্দোলনকারী আলেমদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করে।

দাড়ি-টুপি নিয়ে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গচিত্র
ইসলামবিদ্বেষী ভারতীয় সেবাদাসদের নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিটিভিসহ সরকারি দলের সমর্থক মিডিয়াগুলোতে প্রচারিত নাটক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে দাড়ি ও টুপিধারীদের দিয়ে খারাপ চরিত্রগুলোতে অভিনয় করানো হয়। পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায়ও দাড়ি-টুপি এবং পায়জামা-পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তিকে বিশাল দ্বৈত্যের রূপ দিয়ে ভাস্কর্য ব্যবহার করা হয়। ইসলামের অনুসারী আলেম-ওলামাদের বিষয়ে জনমনে একটি খারাপ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সবশেষে ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের কথিত জাগরণ মঞ্চে ইসলামবিদ্বেষীরা বীভত্স মুখ এঁকে মাথায় চাঁদ-তারা খচিত টুপি এবং থুতনিতে দাড়ি দেখিয়ে পবিত্র ইসলামের অবমাননা করে। শাহবাগি ইসলামবিদ্বেষীরা ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে ব্যঙ্গ করে অভিনয় করে। তারা বোরকা নিয়েও ব্যঙ্গচিত্র আঁকে। ইসলামের বিধান পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে মাদকাসক্ত ও গাঁজাসেবী তরুণ-তরুণীদের দিয়ে পথনাটকে অভিনয় করানো হয়। এছাড়াও দাড়ি-টুপিধারী লোকদের বিশাল ছবি টানিয়ে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দিয়ে তাতে জুতাপেটা করানো হয় শাহবাগের নাস্তিক ব্লগারদের কথিত ওই মঞ্চে।

বোরকার বিধান বিচারপতি মানিকের কোর্টে
প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম নারীদের জন্য বোরকা বা হিজাব বাধ্যতামূলক। এ বোরকা পরিধান নিয়েও সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করে। নাটোরের সরকারি রানী ভবানী মহিলা কলেজের ছাত্রীদের বোরকা পরে ক্লাসে আসতে বলায় হাইকোর্টের বিতর্কিত বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিক বোরকার বিষয়ে রায় দেন। হাইকোর্টের বিতর্কিত এ রায়ের সূত্র ধরে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেও একটি পরিপত্র জারি করা হয়।

ইসলামবিরোধী আইন ও নীতি প্রণয়ন
সরকার গত পৌনে ৫ বছরে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী বেশ কয়েকটি আইন ও নীতি প্রণয়ন করেছে। এ সময় সরকার কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতি প্রণয়ন, ইসলামবিরোধী জাতীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করে। সরকার ক্ষমতায় আসার তিন মাসের মাথায় অধ্যাপক কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। আলেম-ওলামাদের মতামত উপেক্ষা করেই সরকার শিক্ষানীতি চূড়ান্ত করে এবং ২০১০ সালের ৭ ডিসেম্বর তা সংসদে পাস হয়। এর বিরোধী ওলামা-মাশায়েখরা হরতালও পালন করেন। নারী-পুরুষের সমঅধিকার নিশ্চিত করার কথা বলে সরকার ২০১১ সালের ৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় কোরআন-সুন্নাহবিরোধী নারীনীতির খসড়া অনুমোদন করে।

‘কওমি মাদরাসা জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র’ বলে মিথ্যা প্রচারণা
সরকারের কর্তাব্যক্তিদের লাগামহীন ইসলামবিরোধী ও বিতর্কিত বক্তব্য অব্যাহত রয়েছে। ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল একটি অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছিলেন, কওমি মাদরাসাগুলো এখন জঙ্গিদের প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। কওমি মাদরাসাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তার লাভ করেছে। এসব কওমি মাদরাসায় যে শিক্ষা দেয়া হয়, তা কূপমণ্ডূকতার সৃষ্টি করছে। ’৭৫-পরবর্তী সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সংশোধনী এনে ’৭২-এর সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনাকে নস্যাত্ করার ফলেই এবং ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার পর ধর্মের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে। ২০১১ সালে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজামণ্ডপে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন—‘এবার গজে চড়ে মা দুর্গা আসায় ফসল ভালো হয়েছে’। একই বছর ১৩ জুলাই এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, ‘আমি হিন্দুও নই, মুসলমানও নই’। আর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, ‘সংবিধান থেকে ধর্মের কালো ছায়া মুছে ফেলা হবে’। একই বছর পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘ধর্ম তামাক ও মদের মতো একটি নেশা’। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো কওমি মাদরাসাগুলো গজিয়ে উঠেছে’। গত ১০ ডিসেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক অনুষ্ঠানে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়া বলেছেন, ‘রাসুল (সা.) মসজিদের অর্ধেক জায়গা হিন্দুদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন’। ২০০৯ সালের ২৮ মার্চ এক গোলটেবিল আলোচনায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম আফজাল বলেন, ‘পৃথিবীতে যত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রয়েছে, তার সবই ইসলাম ও মুসলমানদের মধ্যে। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের মধ্যে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নেই। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানরা সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত নয়’।

আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি
২০১১ সালের ১৪ জুলাই টুঙ্গিপাড়ার জিটি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক শঙ্কর বিশ্বাস দশম শ্রেণীর ক্লাসে দাড়ি রাখা নিয়ে সমালোচনাকালে হজরত মোহাম্মদ (সা.)-কে ছাগলের সঙ্গে তুলনা করে (নাউজুবিল্লাহ্)। এতে ওই ক্লাসের ছাত্রছাত্রীসহ এলাকাবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে শঙ্কর বিশ্বাস টুঙ্গিপাড়া থেকে পালিয়ে যায়। একই বছর ২৬ জুলাই ধানমন্ডি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মদন মোহন দাস মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এবং পবিত্র হজ নিয়ে কটূক্তি করে। সহকর্মী শিক্ষকদের সঙ্গে এক সভায় সে মন্তব্য করে, এক লোক সুন্দরী মহিলা দেখলেই বিয়ে করে। এভাবে বিয়ে করতে করতে ১৫-১৬টি বিয়ে করে। মোহাম্মদও ১৫-১৬টি বিয়ে করেছে। তাহলে মুসলমানদের মোহাম্মদের হজ করা স্থান মক্কায় গিয়ে হজ না করে ওই ১৫-১৬টি বিয়ে করা লোকের বাড়িতে গিয়ে হজ করলেই তো হয়। একইভাবে মানিকগঞ্জে বিশ্বজিত্ মজুমদার কর্তৃক রাসুল (সা.)-এর জন্ম এবং পবিত্র কোরআন নিয়ে কটূক্তি, বাগেরহাটের এক হিন্দু কাবা শরিফের হাজরে আসওয়াদকে শিবলিঙ্গের সঙ্গে তুলনা, খুলনার পাইকগাছায় আরেক হিন্দু মহান আল্লাহ সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, নেত্রকোনার চন্দ্রনাথ হাইস্কুল গেটের কোরআনের আয়াত সংবলিত সাইনবোর্ড ভেঙে ফেলা, বাগেরহাটের কচুয়ায় এক হিন্দু কর্তৃক মহান আল্লাহর ছবি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্কন করা, সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে রাসুল (সা.) সম্পর্কে হিন্দু কর্তৃক চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন এবং ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক হিন্দুর (সা.)-এর প্রতি কটূক্তিসহ বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ইসলামবিরোধী বক্তব্য স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনে বিতর্কিত কর্মকাণ্ড
দেশের সর্ববৃহত্ সরকারি ইসলামি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে ইসলামি মূল্যবোধ তুলে দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের বন্দনা প্রকাশের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা) ও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমকে এরই মধ্যে মাজার-খানকাপন্থীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে ডিজি সামীম আফজাল। ২০১০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। অনুষ্ঠানে কাঙ্গালিনী সুফিয়ার সঙ্গে করমর্দনও করে ডিজি আফজাল। কাঙ্গালিনী সুফিয়ার একতারা এবং শরীর দুলিয়ে নাচ-গানে বিব্রত অবস্থায় পড়েন উপস্থিত ইমামরা। এছাড়া ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ইফার ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে জাতীয় শিশু-কিশোরদের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে হাম্দ ও নাতের বিচারক হিসেবে এমন শিল্পীদের আনা হয় যাদের অনেকেই ইসলামি সঙ্গীতের ধারার সঙ্গে পরিচিত নয়। এ নিয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একই বছর ২৭ নভেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনে ঘটে সবচেয়ে বড় ঘটনা। ওইদিন আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনে আসে একটি মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই প্রতিনিধিদলের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ডিজির অনুরোধে ইমামদের সামনে মার্কিন অর্ধনগ্ন তরুণ-তরুণীরা পরিবেশন করে অশ্লীল ব্যালে নৃত্য।

দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দাড়ি, টুপি ও বোরকাধারীদের হয়রানি বেড়ে যায়। ২০০৯ সালের ২৩ এপ্রিল বরিশালের নিউ সার্কুলার রোডের এক বাড়িতে র্যাব হানা দিয়ে বোরকা পরে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জড়ো হওয়ার অপরাধে ২১ নারীকে গ্রেফতার করে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জঙ্গি সংশ্লিতার কোনো তথ্য না পেয়ে ২১ পরহেজগার নারীকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে চালান দেয়া হয়। ঘটনার দীর্ঘ দু’মাস পর ২৩ জুন আদালত তাদের বেকসুর খালাস দেয়। একইভাবে বোরকা পরার অপরাধে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই পিরোজপুর জেলার জিয়ানগরে ছাত্রলীগের বখাটে কর্মীদের প্ররোচনায় পুলিশ জঙ্গি সন্দেহে তিন তরুণীকে গ্রেফতার করে। তারপর পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে তিন তরুণীকে ঢাকায় টিএফআই সেলে নিয়ে আসা হয়। ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করা তরুণীদের বিরুদ্ধে মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন অমর সিংহ। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি থেকে অবশেষে তিন অসহায়, নিরপরাধ তরুণী মুক্তি পায়। ২০১০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ড. একেএম শফিউল ইসলাম তার ক্লাসে ছাত্রীদের বোরকা পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সে ক্লাসে মধ্যযুগীয় পোশাক ‘বোরকা’ পরা যাবে না এবং এটি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের কোনো পোশাক হতে পারে না বলে ফতোয়া জারি করে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীর ইডেন এবং বদরুন্নেছা কলেজে বোরকাধারী ছাত্রীদের হয়রানি ও নির্যাতনের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। ইডেন কলেজে বোরকা পরা ছাত্রীদের ধরে বোরকা খুলে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শাইখুল ইসলাম জিয়াদ নামের এক শিক্ষক বোরকা পরায় তিন ছাত্রীকে ক্লাস থেকে বের করে দেয়।

জঙ্গি ধুয়া তুলে কওমি মাদরাসা বন্ধ
সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই পুলিশ বিভিন্ন মাদরাসায় হানা দিয়ে ইসলামি বই-পুস্তক ও পবিত্র কোরআন-হাদিসকে জিহাদি বই হিসেবে চিহ্নিত করে নিরীহ ছাত্রদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এ ধারা এখনও অব্যাহত। হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের পর সরকার বিভিন্ন কৌশলে মাদরাসাগুলোকে টার্গেট করে তা বন্ধে উদ্যোগী হয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে কর্তৃপক্ষ মাদরাসা বন্ধ করে দিয়েছে। কোথাও আবার সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বল প্রয়োগ করে মাদরাসা বন্ধ করে দেন। ইমাম এবং খতিবরা মসজিদে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করলেই তাদের গ্রেফতার ও চাকরিচ্যুতিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। সর্বশেষ চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর মাদরাসায় একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার ‘জঙ্গি নাটকের’ অবতারণা করে। সকাল বেলায় কম্পিউটারের আইপিএস বিস্ফোরণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে দমকল বাহিনীসহ স্থানীয়রা তা নিয়ন্ত্রণে আনেন। প্রায় আট ঘণ্টা পর পুলিশ এটিকে হাতে তৈরি গ্রেনেডের বিস্ফোরণ হিসেবে মিথ্যা প্রচারণা চালায়। এ ঘটনায় আহত ও নিহতদের বিষয়ে চিকিত্সকদের দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আগুনে তাদের শরীর ঝলসে গেছে। তাদের শরীরে কোনো স্পিল্গন্টার কিংবা বোমা বা গ্রেনেডের আলামত পাওয়া যায়নি।
সরকারের চরম ইসলামবিদ্বেষী কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচক মুফতি ফজলুল হক আমিনীকে সরকার দীর্ঘদিন ধরে গৃহবন্দি করে রাখে। সরকারি বাহিনীর জুলুম-নির্যাতনে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার চিকিত্সাতেও বাধা দেয় সরকার। শেষ পর্যন্ত চিকিত্সাহীন অবস্থায়ই মারা যান বিশ্ববরেণ্য এ আলেমে দীন।
 
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2013/10/31/222740

মজীনার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুলের দীর্ঘ বৈঠক


ফরহাদ মজহারের ‘কণ্ঠরোধের’ চেষ্টা করছেন সাংবাদিক নেতারা!


মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৩

হাসিনা-খালেদার ফোনালাপের পূর্ণ বিবরণ

29 Oct, 2013 দুনেত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য মুখিয়ে আছে পুরো জাতি। গত শনিবার সন্ধ্যায় দুনেত্রীর মধ্যে ‘ঐতিহাসিক’ ফোনালাপ জাতির প্রত্যাশা আরো বাড়িয়েছে। দুনেত্রীর ফোনালাপের কথা নিয়ে তাই কৌতূহলের অন্ত নেই।

দেশের অন্যতম জাতীয় দৈনিক মানবজমিন অনলাইন ভার্সনে দুনেত্রীর ৩৭ মিনিটের কথোপকথন প্রকাশ করেছে। ওই কথোপকথন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

খালেদা- হ্যালো, হ্যালো।
হাসিনা- হ্যালো। কেমন আছেন?
খালেদা- ভালো।
হাসিনা- দুপুর থেকে ফোন করছি।
খালেদা- দুপুরে কোনো ফোন আসেনি।
হাসিনা- ফোন করেছি তো।
খালেদা- কথা সত্য নয়। দীর্ঘদিন ধরেই টেলিফোনটি বিকল। দেশ চালান, সব খবর রাখেন, এ খবর রাখেন না। লোক পাঠান।
হাসিনা- আপনি তো জানেন, রেড ফোন বিকল থাকে না।
খালেদা- ফোন বিকল, এটাই সত্য।
হাসিনা- আমি ফোন করেছি।
খালেদা- দীর্ঘদিন ধরে ফোন ডেড। মৃত ফোন কি হঠাৎ জেগে উঠবে?
হাসিনা- যে কোন কারণে ফোন ধরতে পারেন নি।
খালেদা- না ফোন বাজেনি। আমি ফোনের কাছেই থাকি। ফোন বাজলে না ধরার কথা নয়।
হাসিনা- ফোন বেজেছে, ধরেন নি। আমি আগামীকাল দেখব।
খালেদা- ...
হাসিনা- আমি ফোন করলাম। ২৮ তারিখ (২৮শে অক্টোবর) আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। জানেন তো, আমরা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছি।
খালেদা- দাওয়াত কেন দিচ্ছেন?
হাসিনা- আমার সঙ্গে রাতের খাবার খাবেন।
খালেদা- ২৮ তারিখ আমি যেতে পারব না। ওই দিন হরতাল আছে। হরতাল থাকলে আমি বের হই না।
হাসিনা- আপনি বলেছেন, দুইদিনের মধ্যে...
খালেদা- বলেছি। আমার আন্তরিকতা আছে। আমি একা যাব না।
হাসিনা- যাকে ইচ্ছা আনেন, যতজন ইচ্ছা আনেন।
খালেদা- যতজন না। আমার দলের প্রয়োজনীয় নেতাদের নেব।
হাসিনা- দেশ জাতির স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করুন।
খালেদা- হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না।
হাসিনা- মানুষ হত্যা বন্ধ করুন।
খালেদা- মানুষ হত্যা আপনারা করছেন। আপনারা গান পাউডার দিয়ে বাস পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছেন। এসব হত্যার নির্দেশ আপনার মুখ থেকেই বেরিয়েছে। এর দায় আপনাদের।
হাসিনা- জনগনের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করুন।
খালেদা- জনগনের স্বার্থে হরতাল দিয়েছি।
হাসিনা- আমরা আলোচনা করতে চাই।
খালেদা- আপনার মন্ত্রীরা তো বলেছেন, আলোচনা হবে না। আলোচনা হতে পারে, হরতালের পর।
হাসিনা- আপনি তো দুইদিনের কথা বলেছিলেন।
খালেদা- আপনি একদিন পর ফোন করেছেন। তখন সুযোগ ছিল না।
হাসিনা- আমি তো ব্যস্ত।
খালেদা- আপনার মতো অত ব্যস্ত না হলেও আমরাও ব্যস্ত।
হাসিনা- ...
খালেদা- কাল আমাদের সমাবেশের এত দেরি করে অনুমতি দিলেন কেন? অনুমতি দিলেন মাইক ব্যবহারের অনুমতি দিলেন না কেন? লোকজন আমাদের বক্তব্য শুনতে পায়নি। অতীতে আপনাদের তো এমন করিনি।
হাসিনা- আমি বলেছি, আলোচনার কথা।
খালেদা- সমাবেশে মাইকের অনুমতি কেন দিলেন না?
হাসিনা- অনুমতি তো দিয়েছি।
খালেদা- আমরা সমাবেশ করতে গেলে আপনারা ১৪৪ ধারা জারি করেন। দেশে কি ইমার্জেন্সি জারি হয়েছে। দেশে কি যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে।
হাসিনা- এ ব্যাপারে কথা বলতে চাই না।
খালেদা- কথা তো আপনাকে বলতে হবে। মিটিং করতে চাইলে মাইকের অনুমতি দেবেন না। আপনারা আগে মিটিং করেননি।
হাসিনা- আমাদের গ্রেনেড হামলার কথা মনে আছে।
খালেদা- আমরা নই, আপনারা করিয়েছেন গ্রেনেড হামলা।
হাসিনা- আপনারাও কিন্তু রাত ১১টায় অনুমতি দিয়েছিলেন।
খালেদা- আপনার দলের নেতারা ভেন্যু পরিবর্তন করেছিল।
হাসিনা- আপনি মুক্তাঙ্গনে অনুমতি...
খালেদা- অনুমতি দিয়েছি, রেকর্ড আছে। সে রেকর্ড দেখেন না।
হাসিনা- ...
খালেদা- এখন বলছি, সত্যিকার আন্তরিক হন। তবে ২৯ তারিখের পর বলেন, আমি যাব।
হাসিনা- আমি ঝগড়া করতে চাই না। আপনি একতরফা কথা বলছেন।
খালেদা- কথা আপনিও বলছেন।
হাসিনা- হরতাল প্রত্যাহার করেন। আসেন।
খালেদা- হরতালের পর।
হাসিনা- হরতালের মাধ্যমে মানুষ খুন করছেন।
খালেদা- আপনারা মানুষ খুন করছেন। আপনার ছাত্রলীগ, যুবলীগ মানুষ খুন করছে।
হাসিনা- খুনের রাজনীতি আমরা করি না।
খালেদা- খুনের রাজনীতি আপনার পুরনো অভ্যোস। আপনাদের পুরনো অভ্যোস।
১৯৭১ এর পরও ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছেন। সেটা কি ভুলে গেছেন।
হাসিনা- ৭১-এ মানুষ খুন করেছি।
খালেদা- ৭১এর পর ক্ষমতায় থাকাকালে মানুষ খুন করেছেন।
হাসিনা- যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করছেন।
খালেদা- সত্যিকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করলে আমরা সমর্থন দিতাম। কিন্তু আপনি তা করছেন না। আপনার দলেও অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে।
হাসিনা- সত্যিকার বিচার হচ্ছে।
খালেদা- আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন। আপনি তো দলীয় প্রধানমন্ত্রী। আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন। আমার দলীয় কার্যালয়ে যে আচরণ করেছেন।
হাসিনা- আপনি জবাব দিতে পারেন। অসাংবিধানিক সরকার...
খালেদা- আপনারাই অসাংবিধানিক সরকারকে স্বাগত জানান। আপনিই এরশাদ ক্ষমতা দখলের পর বলেছিলেন, আই এ্যাম নট আনহ্যাপি।
হাসিনা- বলিনি।
খালেদা- আপনি মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনকে আপনাদের আন্দোলনের ফসল বলেছেন।
হাসিনা- না।
খালেদা- আপনি তাদের শপথ অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, আপনাদের আন্দোলনের ফসল। মানুষ সে কথা ভুলেনি।
হাসিনা- আপনি ৯জনকে ডিঙিয়ে মঈন উদ্দিনকে প্রধান বানিয়েছিলেন।
খালেদা- আপনি অনেককে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ কথা বইলেন না। অনেককে বাড়ি পাঠিয়েছেন। মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সাংবিধানিক সরকার ছিল না। কিন্তু আপনি তাদের শপথ অনুষ্ঠানে গেলেন। সেদিন তো আমরা দুই দলই ক্ষমতার বাইরে ছিলাম। আমি যাইনি, আপনি শপথ অনুষ্ঠানে গেছেন।
হাসিনা- আমি আগুনে বসে হাসি পুষ্পের হাসি। আমার বাবা ভাই মারা গিয়েছিল।
খালেদা- আপনি অতীতের দিকে নয়, সামনের দিকে আগান। সৎ উদ্দেশ্য থাকলে সামনে আগান।
হাসিনা- আপনারা ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে হত্যাকাণ্ড করেছেন।
খালেদা- হত্যা আমরা করিনি। আপনি যতদিন থাকবেন, ততই আমাদের লাভ। আপনি যতই অশ্লীল কথা বলবেন ততই আমাদের লাভ।
হাসিনা- ১৫ই আগস্ট আপনি কেন কেক কাটেন?
খালেদা- ওইদিন কি কোন মানুষ জন্ম নেবে না। আপনারা জিয়াউর রহমানের কথা বলেন। জিয়াউর রহমান তো আপনাদের আওয়ামী লীগকে জন্ম দিয়েছেন। আপনারা তো বাকশাল ছিলেন।
হাসিনা- ...
খালেদা- এ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসেন। আসুন নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করি।
হাসিনা- আপনি হরতাল প্রত্যাহার করবেন না?
খালেদা- হরতাল প্রত্যাহার করতে পারবো না। এটা ১৮ দলের সিদ্ধান্তে ঘোষণা করা হয়েছে।
হাসিনা- আপনি ১৮ দলকে ডেকে সিদ্ধান্ত নিন।
খালেদা- তাদের তো পুলিশ তাড়াচ্ছে।
হাসিনা- পুলিশ ধরবে না। বলে দেন।
খালেদা- পুলিশ কি আমাদের কথায় চলে?
হাসিনা- বোমা বাস্ট হবে...
খালেদা- বোমা বাস্ট আপনারা করেন। আপনি ২৯ তারিখের পর বলেন, আমরা আসবো।
হাসিনা- আপনি দুই দিনের আলটিমেটাম দিলেন। এর মধ্যেই তো ফোন করলাম।
খালেদা- বলেছি তো, আপনি দেরি করেছেন। আমরা বলেছি, সংলাপ ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।
হাসিনা- আপনারা কি ক্যামরায়...
খালেদা- আমাদের এখানে ক্যামেরা নেই। আমরা ক্যামেরা ছাড়া কথা বলছি। অফিসে থাকলেই বরং ক্যামেরা থাকতো। আপনারা সম্ভবত ক্যামেরাই দেখাচ্ছেন...।
হাসিনা- ফোন করেছি। ফোন তো ঠিক আছে।
খালেদা- লোক পাঠান।
হাসিনা- ১০-১২ বার ফোন করেছি।
খালেদা- আমরা শুনিনি, আপনি কেবল শুনেছেন।
হাসিনা- আমি কিভাবে শুনবো। আমার তো এক কান নষ্ট। ফোন আমি নিজেই করেছি।
খালেদা- ডেড ফোনে কথা বলেছেন।
হাসিনা- রিং হচ্ছিলো।
খালেদা- ঠিক নয়। আমরা অনেকবার লোক ডেকেছি। আপনার লোকজন আমাদের তো মানুষই মনে করে না।
হাসিনা- ফোন দিয়েছি।
খালেদা- আপনি চাইলে মোবাইলে কথা বলতে পারতেন। মৃত কে তো মৃত বলতেই হবে।
হাসিনা- (...নাম্বার বলে যান)
খালেদা- আপনার মুখস্ত থাকতেই পারে।
হাসিনা- কাল খবর নেব।
খালেদা- গুলশান এক্সচেঞ্জের লোক মিথ্যা বলেছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সে সত্য কথা বলেনি।
হাসিনা- আলাদা এক্সচেঞ্জ।
খালেদা- টেলিভিশনে স্ক্রল দেখাচ্ছে...
হাসিনা- গণভবনে আমরা কথা বলছি, এখানে কোনো টেলিভিশন নেই।
খালেদা- তাহলে কেন এটা বলা হচ্ছে...
হাসিনা- তাহলে কি কথা বলবেন না।
খালেদা- আমি আধাঘন্টা ধরেই বসে আছি। আপনার ফোন আসবে এ জন্য। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। কথা বলেছি। এখন কেন কথা বলবো না।
হাসিনা- ২৮ তারিখে আসেন।
খালেদা- সত্যিই আন্তরিক হলে ২৯ তারিখের পর বলেন।
হাসিনা- কাল বলেছেন...
খালেদা- আমরা তো হরতাল দিয়েছি।
হাসিনা- আমি তো ফোন করেছি।
খালেদা- আগে কেন করেননি। পরে করছেন কেন?
হাসিনা- আমি দুঃখিত।
খালেদা- বাংলাদেশের মানুষ...
হাসিনা- আপনি দুইদিনের কথা বলেছেন...
খালেদা- বলেছি, কিন্তু হরতালও দিয়েছি।
হাসিনা- কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
খালেদা- ১৮দলকে এখন কই পাবো।
হাসিনা- হুকুম করেন, পাবেন।
খালেদা- কই পাব? তারা তো...
হাসিনা- মিথ্যা বলছেন।
খালেদা- আপনি কাল রাতে ফোন করতে পারতেন।
হাসিনা- আমি রাত জাগি না। আমি সকালে নামাজ পড়ি।
খালেদা- নামাজ পড়েন। কোরআন পড়েন। নামাজিদের গুলি করেন হত্যা সবই করেন।
হাসিনা- আমি নামাজ পড়ি, নিয়মিত কোরআন পড়ি।
খালেদা- আপনি ২৯ তারিখের পর করেন।
হাসিনা- আপনি আপনার বক্তব্য থেকে সরে যাচ্ছেন।
খালেদা- আমার দলের নেতারা এখন নেই। ১৮দল নেই। আমি একা কিভাবে সিদ্ধান্ত নেব।
হাসিনা- হুকুম দেন। এটা হয় নাকি।
খালেদা- আপনার ডিবি-এসবি তো আমাদের ঘেরাও করে রেখেছে, কিভাবে আসবে।
হাসিনা- আপনারা তো দা-কুড়াল নিয়ে মানুষ হত্যার কথা বলছেন।
খালেদা- বিশ্বজিৎকে আপনারা হত্যা করেছেন।
হাসিনা- তারা আগেই ছাত্রলীগ থেকে বহিস্কৃত ছিল।
খালেদা- আমরা এ রকম আরো উদাহারণ দিতে পারব। আপনারা আমাদের বক্তব্য টেলিভিশনে প্রচার করতে দেননি। নিরিহ মানুষকে গ্রেপ্তার করেছেন। আল্লাহ আপনাদের বিচার করবে।
হাসিনা- ধরা পড়ার পর দেখা গেছে। তাদের বাবা-মা জামায়াত-বিএনপি করে।
খালেদা- না তারা ছাত্রলীগই করে। আমি আপনাকে অনুরোধ করি, সদ্বিচ্ছা থাকলে ২৯ তারিখের পর ডাকেন।
হাসিনা- এ কথাটি রাখেন।
খালেদা- ২৯ তারিখের পর ডাকেন। অন্য কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে। আমরা কর্মসূচি দেবো না।
হাসিনা- দিনের কথা বলেছিলেন।
খালেদা- ৩০ তারিখ হলে আমি রাজি আছি।
হাসিনা- আপনার তো ভারপ্রাপ্ত আছে। যদিও প্রটোকলে মিলে না। তারপরও আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ কথা বলবেন। তাদের মধ্যে আলোচনা হতে পারে...
খালেদা- কাল রাতে কেন ফোন দিলেন না। তাহলে আমি দলের নেতাদের সঙ্গে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। আমি তো ৭টায় অফিসে গিয়েছিলাম। ফোন করলেই পেয়ে যেতেন।
হাসিনা- তখন তো রাত।
খালেদা- ৭টা রাত নয় সন্ধ্যা।
হাসিনা- আমার তো নেতাদের সঙ্গে কথা বলে...
খালেদা- আমারও তো নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
হাসিনা- আমাদের কিন্তু ৯৬ কথা মনে আছে।
খালেদা- ১৭৩দিন হরতাল করেননি?
হাসিনা- ৯৬তে আপনারাও করেছেন।
খালেদা- ১৯৯১ সালে আমরা একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। একসঙ্গে কাজ করতাম। কিন্তু আপনি প্রথম দিনেই সংসদে বললেন, একদিনও শান্তিতে থাকতে দিবেন না।
হাসিনা- নো।
খালেদা- আপনি একবার তত্ত্বাবধায়কের কথা বলবেন, একবার সংবিধানের কথা বলবেন।
হাসিনা- নির্বাচনের পর যে সিচুয়েশন হয়েছিল।
খালেদা- ৩০ তারিখের পর হলে আমরা রাজি আছি।
হাসিনা- আমার পার্টি স্ট্রং। আমাদের ভোট আছে। আমরা সংগ্রাম করেই এটা অর্জন করেছি।
খালেদা- আমার দলও অনেক সংগ্রাম করে ক্ষমতায় এসেছিল।
হাসিনা- দুঃখিত।
খালেদা- সময় মতো ফোন করেননি। আমি দুঃখিত। কাল ফোন করলে পরিবেশ পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
হাসিনা- আমার এডিসি দেড়টা থেকে চেষ্টা করেছে।
খালেদা- ফোন না বাজলে ধরার উপায় নেই।
হাসিনা- শিমুল বিশ্বাসের ফোনেও অনেক চেষ্টা করেছে।
খালেদা- আপনি বসেছিলেন ৬টার জন্য।
হাসিনা- আপনি জানেন আমাদের মিটিং ছিল। আমি মিটিংয়ে দেরি করতে পছন্দ করি না।
খালেদা- মিটিং জরুরি না এটা জরুরি ছিল।
হাসিনা- সিদ্ধান্ত নেন।
খালেদা- কিভাবে নেব।
হাসিনা- জাতির কাছে বলেন।
খালেদা- আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নিন। আমি হরতাল প্রত্যাহার করবো।
হাসিনা- আমাদের ৯০ ভাগ সিট...
খালেদা- আপনি বলেন, নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন, আমি হরতাল তুলে নেবো।
হাসিনা- যারা মাইনাস-টু করতে চেয়েছিল আপনি তাদের আনতে চাইছেন।
খালেদা- আমি না, আপনি। আপনি যে ভাষায় কথা বলেন...
হাসিনা- আপনি তো মধুর ভাষায় কথা বলেন। আমরা সংসদে আছি। একসঙ্গে কাজ করবো... আপনি দলের নেতাদের মিটিং করেন।
খালেদা- পুলিশকে বলে দেন। তত্ত্বাবধায়ক মানেন। সবাইকে ডাকি।
হাসিনা- হরতাল তুলে নেন।
খালেদা- নির্দলীয় সরকার মানার ঘোষণা দেন।
হাসিনা- আপনার দলের লোকের উপর ভরসা নেই?
খালেদা- আমার দলের লোকের উপর ভরসা আছে।
হাসিনা- তাদের ডাকেন।
খালেদা- আপনি দাবি মানেন, হরতাল...
হাসিনা- আপনি সর্বদলীয় মানেন।
খালেদা- সবর্দলীয় মানা যায় না।
হাসিনা- আবার কাকে আনবেন, মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের মতো।
খালেদা- আপনিই আনেন।
হাসিনা- ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সৃষ্টি করবেন না।
খালেদা- কি বলেন...
হাসিনা- আসেন। হরতাল তুলে নেন।
খালেদা- ২৮ তারিখের আগে পারব না। হবে না।
হাসিনা- ধন্যবাদ...

সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৩

ব্যস্ত মজিনা, বৈঠকে ব্যবসায়ীরা

ভেঙ্গে গেলো মোনালিসার সংসার!


রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩

পুরুষদের প্রতি অনুরোধ ৪ স্ত্রী রাখুন…

souসংবাদ২৪.নেট.ডেস্ক : সৌদি মেয়েদের চিরকুমারী থাকার সমস্যা কমানোর লক্ষ্যে দেশটির দাহরান অঞ্চলের একদল কলেজ ছাত্রী একই সময়ে কয়েকজন স্ত্রী রাখতে পুরুষদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে টুইটাইরে প্রচার অভিযান শুরু করেছে।
তারা ইসলাম ধর্মের এ সংক্রান্ত বিধানের আলোকে এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে ধনী ও শারীরিক দিক থেকে সক্ষম পুরুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
অনেকেই এই প্রচার-অভিযানের প্রশংসা করলেও সৌদি আরবের বিবাহিত মহিলারা এর বিরোধিতা করেছেন বলে জানা গেছে। সৌদি আরবে মেয়েদের চিরকুমারী থাকার সমস্যা দিনকে দিন বাড়ছে। দেশটিতে এ ধরণের নারীর সংখ্যা ২০১২ সালে ১০ লাখে উন্নীত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সৌদি আরবের অর্থনীতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের জরিপে দেখা গেছে, দেশটিতে ২০১১ সালে ৩০ বছর বয়সী অবিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৪১৮ জন।
উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক সংকট ও বিয়ের জন্য পুরুষদেরকে বিপুল অর্থ-সম্পদ যৌতুক হিসেবে দেয়ার ব্যয়বহুল প্রথা সৌদি মেয়েদের অবিবাহিত থাকার সবচেয়ে দুটি বড় কারণ।
এনসিএন : ২৯৬৭২

তিক্ত কথাও হয়েছে দুই নেত্রীর

লাখ লাখ লাশ পড়বে তবু কওমী মাদ্রাসা দেব না :হেফাজত

রাজধানীতে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ : ককটেল বিস্ফোরণ ও বাস ডিপোতে আগুন